তুরাগ : মাদক কারবারির হাতে ছুরিকাহত এসআই

আগের সংবাদ

বাজারে ক্রেতার নাভিশ্বাস

পরের সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন দেখা ’৪৭ সালে > ’৪৮ সালে ‘বাংলাদেশ’ উচ্চারণ : মুহাম্মদ শামসুল হক

প্রকাশিত: মার্চ ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৫, ২০২৩ , ১১:১০ অপরাহ্ণ

স্বাধীনতা। চার অক্ষরের শব্দ। পরিধি তার ব্যাপক। নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বসবাসরত ব্যাপক জনগোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য, অর্থনীতি, রাজনীতিসহ জীবনের সামগ্রিক ক্ষেত্রে নিজস্ব রীতিনীতি, স্বকীয়তা অটুট রেখে স্বজাতির ম্যান্ডেট নিয়ে গণতান্ত্রিক শাসনে পরিচালিত হতে পারার গ্যারান্টিই হচ্ছে স্বাধীনতা। যে কোনো দেশের স্বাধীনতা এমন একটি অমূল্য সম্পদ, যা কুড়িয়ে পাওয়া যায় না কিংবা ইচ্ছে করলে অথবা ‘স্বাধীন হয়ে যাও’ বললেই হয়ে যাওয়ার বিষয় নয়। অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন আহমদের ভাষায় ‘স্বাধীনতা মামার বাড়ির আবদার নয়। স্বাধীনতাযুদ্ধ কোনো অর্বাচীন যুবকের হঠকারিতা নয়।’
বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে শাসকগোষ্ঠী জাতিসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে প্রচণ্ডভাবে অস্বীকার করে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পারস্পরিক বিরোধ জিইয়ে রেখে কিংবা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে, এমনকি প্রয়োজনে গণহত্যার মধ্য দিয়ে শাসন-শোষণ বজায় রাখতে সচেষ্ট হয়। জনগণের প্রবল ইচ্ছাশক্তি, প্রতিবাদী উদ্দীপনা, ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামী চেতনা আর স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্রের সুসামঞ্জস্য বিচ্ছুরণ ছাড়া নিষ্ঠুর অবিবেচক শাসনযন্ত্র থেকে মুক্তি লাভের সহজ কোনো পথ নেই। সেই কাক্সিক্ষত মুক্তি তথা স্বাধীনতার জন্য, সংশ্লিষ্ট ভূখণ্ডের বিভিন্ন স্তরের জনগোষ্ঠীকে একই মন্ত্রে, এক কাতারে শামিল করার জন্য এবং সর্বোপরি প্রয়োজনে জান-মাল বিনা বাক্যব্যয়ে সমর্পণ করার মতো জনমানস সৃষ্টি করার জন্য উপযুক্ত মন্ত্রণাদাতা তথা নেতার প্রয়োজন হয়। সে রকম একজন উপযুক্ত অবিসংবাদিত মন্ত্রণাদাতা নেতা ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি ১৯৪৭ পর্যন্ত দৃশ্যত পাকিস্তান নামক দেশের জন্য সংগ্রামে শামিল ছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও শেখ মুজিব প্রসঙ্গটি ইতিহাসে অনন্য ও ব্যতিক্রম এজন্য যে, পাকিস্তান নামক একটি ধর্মীয় জাতিসত্তা বিশিষ্ট রাষ্ট্রের আওতায় শাসিত হওয়ার প্রাথমিক অবস্থা থেকেই তার অন্ধকারময় ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করেন। সচেতন বাঙালিদের মনেও উপলব্ধি হতে থাকে পাকিস্তান ও তার শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের বন্ধু নয়, শোষক। কাজেই এই শোষণমুক্তির জন্য প্রয়োজন নতুন সংগ্রাম। এই উপলব্ধিবোধকে নিজের চেতনায় মিশিয়ে স্বাধীনতার সোপান রচনা করেন শেখ মুজিব। স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রক্রিয়া যেমন দীর্ঘ, তার ফলাফলও তেমনি অনিশ্চিত। এরকম অনিশ্চিত ফলাফলের কথা জেনেও ১৯৪৭ সাল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে লালন করে তা ধীরে ধীরে বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে নিয়েছেন তিনি। ইতিহাস ঘেঁটে আমরা জানতে পারি বঙ্গবন্ধু ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি প্রথম উচ্চারণ করেন ১৯৪৮ সালে নারায়ণগঞ্জ মহকুমা শাখার সম্মেলনে তার বক্তৃতায়।
স্বাধীনতার পর ৭২ সালের ১৯ আগস্ট সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্ত হলো। সেই দিন বুঝতে বাকি রইল না যে বাংলাদেশকে উপনিবেশ করার জন্য, বাংলার মানুষকে শোষণ করে গোলামে পরিণত করার জন্য তথাকথিত স্বাধীনতা এসেছে। যতদূর মনে পড়ে, ১৯৪৭ সালে কলকাতার পার্ক রোডের সিরাজউদ্দৌলা হোস্টেলে একটা ঘরোয়া বৈঠক করি। … কলকাতা থেকে বিএ পাস করে ঢাকায় এলাম। ঢাকায় এসে রাজনৈতিক পরিবেশ দেখে বুঝতে বাকি রইল না যে বাঙালি জাতি শেষ হয়ে গেছে। সেই দিন শপথ নিলাম, বাংলার মানুষকে মুক্ত করতে হবে। ১৯৪৭ সালেই হলো আমাদের সংগ্রামের সূচনা।’ (বঙ্গবন্ধুর প্রধান ভাষণ, কামরুজ্জামান লিটন সম্পাদিত, পৃ-৫৫, ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১)।
বঙ্গবন্ধু তাঁর এই প্রাণের কথা বলেছিলেন অন্নদা শংকর রায়সহ ভারতের একদল কবি-সাহিত্যিককে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে ভারতের একদল কবি-সাহিত্যিক বাংলাদেশ সফরে আসেন। তাদের মধ্যে প্রখ্যাত কথাশিল্পী অন্নদাশংকর রায়ও ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ ও আলাপচারিতার বর্ণনা দিয়ে অন্নদাশংকর
রায় লিখেছেন : ‘শেখ সাহেবকে আমরা প্রশ্ন করি, বাংলাদেশের আইডিয়াটা প্রথম কবে আপনার মাথায় এলো? তিনি মুচকি হেসে বললেন, ‘সেই ১৯৪৭ সালে। তখন আমি সোহরাওয়ার্দী সাহেবের দলে। তিনি ও শরৎ চন্দ্র বসু চান যুক্তবঙ্গ। আমিও চাই সব বাঙালির এক দেশ। বাঙালিরা এক হলে কী না করতে পারত। তারা জগৎ জয় করতে পারত। They could conquer the world. বলতে বলতে তিনি উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেন। তারপর বলেন, ‘দিলি থেকে খালি হতে ফিরে এলেন সোহরাওয়ার্দী ও শরৎ বসু। কংগ্রেস বা মুসলিম লীগ কেউ রাজি নয় তাদের প্রস্তাবে। তারা হাল ছেড়ে দেন। আমিও দেখি যে আর কোনো উপায় নেই। ঢাকা চলে এসে নতুন করে আরম্ভ করি। তখনকার মতো পাকিস্তান মেনে নিই। কিন্তু আমার স্বপ্ন সোনার বাংলা। সে স্বপ্ন কেমন করে পূর্ণ হবে এই আমার চিন্তা। হওয়ার কোনো সম্ভাবনা ছিলও না। লোকগুলো যা কমিউনাল! বাংলাদেশ চাই বললে সন্দেহ করত। হঠাৎ একদিন রব উঠলো আমরা চাই বাংলাভাষা। আমিও ভিড়ে যাই ভাষা আন্দোলনে। ভাষাভিত্তিক আন্দোলনকেই অল্প অল্প করে রূপ দিই দেশভিত্তিক আন্দোলনে। পরে এমন একদিন আসে যেদিন আমি আমার দলের লোকদের জিজ্ঞাসা করি, আমাদের দেশের নাম কী হবে? কেউ বলে পাক বাংলা। কেউ বলে পূর্ব বাংলা। আমি বলি, না বাংলাদেশ। তারপর আমি সেøাগান দেই, জয় বাংলা। তখন ওরা বিদ্রুপ করে বলে, জয় বাংলা না জয় মা কালী! কী অপমান! সে অপমান আমি সেদিন হজম করি। আসলে ওরা আমাকে বুঝতে পারেনি। জয় বাংলা বলতে আমি বোঝাতে চেয়েছিলাম বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জয়, যা সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে।’ (আমার ভালোবাসার দেশ, সাহিত্য প্রকাশ, ২০০১, পৃ-১৬৪।)
১৯৪৮ সালের ২৯ জুলাই পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের (বর্তমান বাংলাদেশ ছাত্রলীগ) নারায়ণগঞ্জ মহকুমা শাখার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় নারায়ণগঞ্জের ‘বায়তুল আমান’ এ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেদিন বক্তৃতার প্রথমেই ‘পূর্ব পাকিস্তান’ না বলে ‘বাংলাদেশ’ উচ্চারণ করেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র দুবছরের মধ্যে তার এ ধরনের বক্তৃতা ছিল মারাত্মক দুঃসাহসিক। এই বক্তৃতার মধ্যেই সুপ্ত ছিল স্বাধীনতার বীজ। (স্মৃতিতে ভাস্বর বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ, মুস্তাফা সারওয়ার, জনকণ্ঠ-৪ জানুয়ারি, ২০০৪)।
ভাসানী স্বাধীনতা চাইলেও বাংলাদেশ চাইতেন না : প্রবীণ রাজনীতিক ও ন্যাপ সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের মতে, মওলানা ভাসানী স্বাধীনতা চাইলেও বাংলাদেশ চাইতেন না। বঙ্গবন্ধুই বাংলাদেশ নামের প্রস্তাব করেন। অধ্যাপক মোজাফফর বলেন, ‘মওলানা ভাসানী স্বাধীনতা চেয়েছিলেন কিন্তু বাংলাদেশ চাননি, তিনি চেয়েছিলেন স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান, দেশের নাম পরিবর্তন করতে চাননি। পৃথিবীতে আগে পূর্ব জার্মান, পশ্চিম জার্মান দুটি পৃথক স্বাধীন দেশ ছিল। একইভাবে উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়া কিংবা উত্তর ভিয়েতনাম, দক্ষিণ ভিয়েতনাম দুটি স্বাধীন দেশ। কিন্তু বঙ্গবন্ধুই নতুন নামে দেশের প্রস্তাবনা করেছিলেন। অবশ্য প্রথমে ঠিক হয়েছিল দেশের নাম হবে ‘বাংলা’। কিন্তু বাংলা বললে যদি ভারতের পশ্চিম বাংলার সঙ্গে মিলে যায়, তাই পরিবর্তন করে দেশের নাম বাংলাদেশ করা হয়। (‘এখনো স্বপ্ন বুনি, জন্মভূমি-জন্মভূমি’, সুকেশ চন্দ্র দেব, আজকের কাগজ, ১৫ আগস্ট, ২০০২)
পূর্ব বাংলার নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদ ও সংবিধানবিরোধী পদ্ধতি গ্রহণের হুমকি : ‘পূর্ব বাংলার’ নাম পরিবর্তন করে এটিকে ‘পূর্ব পাকিস্তান করার’ প্রস্তাব গণপরিষদের তোলা হয় ৫৫ সালে। শেখ মুজিব এই প্রস্তাবের জোরালো প্রতিবাদ জানান। করাচিতে তৎকালীন গণপরিষদে দেয়া বক্তৃতায় শেখ মুজিব প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেন, ‘…মাননীয় স্পিকার, আপনি দেখতেই পাচ্ছেন যে, ওরা ‘পূর্ব বাংলা’ নামটা পাল্টিয়ে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ করতে চাচ্ছে। অথচ আমরা বার বার এই দাবিই করছি যে, এখন এর নাম শুধু ‘বেঙ্গল’ (বাংলা) করা হোক। ‘বেঙ্গল’ (বাংলা) শব্দের একটা ইতিহাস রয়েছে, এর নিজস্ব ঐতিহ্য বিদ্যমান। আপনারা নাম বদলাতে চান, তাহলে আমাদের বাংলায় ফিরে গিয়ে জনগণকে জিজ্ঞেস করতে হবে তারা এ ধরনের পরিবর্তন মেনে নেবে কিনা। (পাকিস্তানের চব্বিশ বছর : ভাসানী-মুজিবের রাজনীতি : এম. আর. আখতার মুকুল, পৃ-১৫৬)।
১৯৫৬ সালে গণপরিষদে দেওয়া ভাষণেও শেখ মুজিব বাঙালিদের ওপর জুলুম, শোষণের ভবিষ্যৎ পরিণতি সম্পর্কে শাসক গোষ্ঠীকে সতর্ক করে দেন। এমনকি প্রয়োজনে সংবিধান বিরোধী পদ্ধতি গ্রহণেরও হুমকি দেন তিনি। বলেন, ‘জুলুম মত করো ভাই (অত্যাচার করো না ভাই) যদি এসব কিছু আপনারা আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে চান, তাহলে আমাদের বাধ্য হয়েই সংবিধানবিরোধী পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। সংবিধানের বিধি মোতাবেক আপনাদের এগোতে হবে। আপনারা যদি জনসাধারণকে শাসনতান্ত্রিক পদ্ধতি গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেন, তাহলে তারা অনিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি গ্রহণে বাধ্য হবে। এটাই বিশ্বের সর্বত্র ঘটে থাকে এবং তা বিশ্বের ইতিহাস থেকে অনুধাবন করা সম্ভব।’ (ভাসানী-মুজিবের রাজনীতি : এম. আর. আখতার মুকুল, ১ম খণ্ড, পৃ-১৫৭-৫৮)
‘বাংলাদেশ’ আনুষ্ঠানিক নামকরণ : বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যখন ৬ দফা ও ১১ দফার আন্দোলন স্বাধিকার আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ ধারণ করতে যাচ্ছিল তখন (ফেব্রুয়ারি ’৭১) দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ আঁচ করতে পেরে পূর্ব বাংলার অন্যান্য রাজনৈতিক দল, উপদল ও গ্রুপগুলো প্রকাশ্যে স্বাধীনতার দাবি তুলতে থাকে ক্ষীণ স্বরে। কেউ ‘পূর্ব বাংলা স্বাধীন কর’ কেউ ‘পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন কর’ আর কেউ ‘স্বাধীন সার্বভৌম গণবাংলা কায়েম কর’ ইত্যাদি ভাসা ভাসা দাবি উত্থাপন করতে থাকে বিভিন্ন প্রচারপত্রের মাধ্যমে। আশ্বর্য যে ওইসব রাজনৈতিক সংগঠন ’৭১ সালের মার্চের প্রাক্কালেও ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ উচ্চারণ করতে পারছিলেন না।’ (বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম : রফিকুল ইসলাম, পৃ-৯৬)
এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অনেক এগিয়ে, তার প্রমাণ তিনি ইতোপূর্বেও দিয়েছেন ১৯৬৯ সালের ডিসেম্বরে পূর্ব পাকিস্তানের নাম ‘বাংলাদেশ’ ঘোষণার মধ্য দিয়ে। ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যু দিবসের এক আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এক সময় এদেশের বুক হইতে, মানচিত্রের পৃষ্ঠা হইতে ‘বাংলা’ কথাটির শেষ চিহ্নটুকুও মুছিয়া ফেলার চেষ্টা করা হইয়াছে,——একমাত্র ‘বঙ্গোপসাগর’ ছাড়া আর কোনো কিছুর নামের সঙ্গে বাংলা কথাটির অস্তিত্ব খুঁজিয়া পাওয়া যায় নাই। আমি ঘোষণা করিতেছি-আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম হইবে পূর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে শুধুমাত্র ‘বাংলাদেশ’। (‘বং বঙ্গ বাঙ্গালা বাংলাদেশ’ মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ভোরের কাগজ, ২৬ মার্চ ৯৮)।
৭১ সালের মার্চে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রণীত ও প্রস্তাবিত খসড়া সংবিধান বিলেও পূর্ব পাকিস্তানের নাম ‘বাংলাদেশ’ নামকরণ করার প্রস্তাব করা হয়। মূলত ছয় দফার ভিত্তিতে ১৯৬৯ সালে প্রণীত সংবিধান সংশোধনী আইনের আদলে তৈরি করা হয় এই বিল। এতে দুই নম্বর সংশোধনীর ৫ম উপ-বিধানে বলা হয়, দুই নং সংশোধনীর (৩) এবং (৪) নং উপ-বিধানে পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে গঠনকারী অঞ্চলগুলোর সীমানা চিহ্নিতকরণ ও নামকরণের ব্যবস্থা থাকবে। ৫নং উপ-বিধানে বলা হয় যে, প্রতিটি রাজ্য এবং প্রদেশ উক্ত রাজ্য বা প্রাদেশিক পরিষদের মোট সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্মতির ভিত্তিতে প্রস্তাব গ্রহণ করে নিজেদের ইচ্ছে অনুযায়ী সেই রাজ্য বা প্রদেশের নতুন নামকরণ করতে পারবেন। এ ধরনের কোনো বাছাইয়ের পথে না গেলে আগের নামই বহাল থাকবে। এ বিধানবলে পাকিস্তানের একটি অংশ হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানকে ‘বাংলাদেশ’ নামকরণ করা যাবে। (বাংলাদেশ : স্বায়ত্ত্বশাসন থেকে স্বাধীনতা, মওদুদ আহমদ, পৃ-১৩৪)। অবশেষে বাংলার মানুষের মুক্তিসনদ ছয় দফার ভিত্তিতে সত্তরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন, ২৫ মার্চের মধ্যরাতে স্বাধীনতা ঘোষণা ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মাধ্যমে বাস্তবে রূপ নিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশ।
– লেখক প্রাবন্ধিক, সম্পাদক-দ্বিমাসিক ইতিহাসের খসড়া, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণাকর্মী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়