সিপিডির সংবাদ সম্মেলন : নবায়নযোগ্য জ¦ালানি নীতি বাস্তবায়নে বড় বাধা দুর্নীতি

আগের সংবাদ

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্মার্ট বাংলাদেশ : মতিয়া চৌধুরী, সংসদ উপনেতা

পরের সংবাদ

পোল্ট্রি খাতে ৫২ দিনে ৯৩৬ কোটি টাকা লোপাট : এসএমএসে বাড়ে দাম

প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সরকারি তদারকি না থাকায় পোল্ট্রি খাতে হরিলুট চলছে বলে অভিযোগ করেছে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন (বিপিএ)। এ খাতের করপোরেট গোষ্ঠী ইচ্ছেমতো ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দেয়, আর সেই দাম মেনে নিয়ে প্রান্তিক খামারি উৎপাদন করলে বাজারে দাম কমিয়ে দিয়ে লোকসানে ফেলা হয়। তাতে করে প্রান্তিক খামারিরা উৎপাদন থেকে ছিটকে পড়ছে। আবার খামারিরা উৎপাদনে না থাকলে ভোক্তাদের পকেট ফাঁকা করে দেয় ওইসব বড় কোম্পানি। মুরগির উৎপাদন ব্যবস্থায় প্রান্তিক খামারিদের সরিয়ে গত ৫২ দিনে পুঁজিবাদী মাফিয়া চক্র ৯৩৬ কোটি হাতিয়ে নিয়েছে। গতকাল শুক্রবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করেছে বিপিএ। অন্যদিকে বাজার চাহিদা বাড়লে করপোরেট কোম্পানিগুলো পাইকারী দোকানদারকে এসএমএসের মাধ্যমে মুরগির দাম নির্ধারণ করে দেয়। প্রতিদিন রাতে এবং এমনকি দিনেও ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম বাড়ানোর এসএমএস পাঠানো হয়।
বিপিএর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩৫০০ টন। প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ আগে কম থাকলেও এখন ১ কেজি উৎপাদনে খরচ পড়ে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা, আর করপোরেট কোম্পানিদের উৎপাদন খরচ পড়ে ১৩০-১৪০ টাকা। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত। খামারিদের সংগঠনটি বলছে, প্রতিদিন যদি ২ হাজার টন সরবরাহ ধরে প্রতি কেজিতে ৬০ টাকাও অতিরিক্ত মুনাফা ধরলে একদিনে অতিরিক্ত মুনাফা হয় ১২ কোটি টাকা। ৩১ জানুয়ারি থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫২ দিনে সেই অতি মুনাফার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬২৪ কোটি টাকা।
এসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, প্রতিদিন মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হয় ২০ লাখ। প্রতি বাচ্চার উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা, যা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ১০ থেকে ১৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। আর ৩১ জানুয়ারি থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেই বাচ্চা বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। প্রতি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হয়। তাহলে ৫২ দিনে অতিরিক্ত মুনাফা হয়েছে ৩১২ কোটি টাকা। এ সময় প্রান্তিক খামারি উৎপাদনে না থাকার সুযোগে মুরগি ও বাচ্চা থেকে পোল্ট্রি শিল্পের পুঁজিবাদী মাফিয়া চক্র হাতিয়ে নিয়েছে ৯৩৬ কোটি টাকা।
এদিকে কবে কোন দামে মুরগি বিক্রি হবে তা নির্ধারণ করা হয় মুঠোফোনে এসএমএসর মাধ্যমে। বিক্রির আগের দিন রাতে এই মেসেজ চলে আসে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে। আবার চাহিদা বেড়ে গেলে ঘণ্টার ব্যবধানে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে বেড়ে যায় মুরগির দাম। দেশে মুরগির দাম নির্ধারণে কোনো নীতিমালা কিংবা নির্দেশনা নেই। তাই উৎপাদন খরচের সঙ্গে ইচ্ছেমতো লাভ যোগ করেই বাজারে পাঠাতেন উৎপাদনকারীরা। ফলে মুরগির দাম বাড়তে বাড়তে খুচরা পর্যায়ে ২৯০ টাকা কেজি পর্যন্ত উঠেছে।
মুরগির দাম নিয়ে অস্থিতিশীল বাজার এবং ক্রেতার সাধ্যের বাইরে চলে যাওয়ার পরিস্থিতির মধ্যে মুরগি উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। প্রথম দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় গত ৯ মার্চ। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপের পর প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মনে করেন উৎপাদন খরচের সঙ্গে লাভ যোগ করে কোনোভাবেই মুরগির দাম কেজিতে ২০০ টাকার বেশি হওয়া উচিত না। সরকারের চাপে এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সর্বশেষ গতকাল ১৯০-১৯৫ টাকা কেজিতে মুরগি বিক্রি করতে সম্মত হয় দেশের বড় চার করপোরেট কোম্পানি।
তবে খামারিদের দাবি, চার কোম্পানি দাম কমিয়ে ঘোষণা দিলে যদি বাজার ঠিক হয় তাহলে ধরে নিতে হবে বাজারের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে। অথচ এই বাজারের ৮০ শতাংশ মুরগি উৎপাদন করে প্রান্তিক খামারিরা এবং ২০ শতাংশ করপোরেট কোম্পানি।
মুরগির ব্যবসায়ীরা জানান, কোম্পানি থেকে বেঁধে দেয়া দামের সঙ্গে লাভ যোগ করে ব্রয়লারের দাম নির্ধারণ করেন তারা। কোম্পানি এসএমএস কিংবা ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে এই দাম ডিলারদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। কোম্পানি এই দাম নির্ধারণ করে চাহিদার ওপর ভিত্তি করে। যেদিন চাহিদা বেশি থাকে এক ঘণ্টার মধ্যে দাম বেড়ে যায় মুরগির। অথচ এই মুরগির উৎপাদন খরচ তখনো একই ছিল, শুধু লাভ বেড়ে যায়।
মুরগির খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একদিনের মুরগির বাচ্চা প্রতিদিন উৎপাদন হয় ২০ লাখ। একটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে মুরগির বাচ্চা ১০-১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত মুরগির বাচ্চা ৬২ থেকে ৬৮ টাকা দর দিয়ে মেসেজ করলেও প্রকৃতপক্ষে তা বিক্রয় হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। প্রকৃত দর অতিরিক্ত হওয়ায় তা মেসেজে লিখে পাঠায় না। এতে ধরা পড়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে।
ভোক্তা অধিদপ্তরের সভায় মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, ঢাকার বাইরের সঙ্গে ঢাকার বাজারের মূল্য ৩০ টাকা ব্যবধান। মুরগি নিয়ে যা চলছে আসলে প্রতিটি ভোক্তা ভুক্তভোগী হচ্ছেন। টাস্কফোর্সের বৈঠকে আমি বলেছিলাম এই বিষয়ে, সেখানে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাও ছিলেন।
তারাও বলছেন মুরগির উৎপাদন খরচ ১৬০-১৭০ টাকা। আমাদের গত ৯ তারিখের বৈঠকের পর ফিডের দাম আরো বেড়ে গেছে। উৎপাদনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে তারা বলছে যে ফিডের দাম বাড়ার কারণে এই বৃদ্ধি হয়েছে।
তিনি জানান, গোয়েন্দাদের কাছে সব তথ্য আছে, কিভাবে এসএমএসের মাধ্যমে মুরগি নিলাম হচ্ছে। আমরা এতদিন হস্তক্ষেপ করিনি। জাতির কাছে পরিস্কার হওয়া উচিত যে এই মুরগি বাবদ অতিরিক্ত ৫০-৬০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ঢাকার বাজারে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। আমরা চাই পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি আরো বিকশিত হোক, সরকার বারবার হস্তক্ষেপ করলে এই শিল্প খারাপের দিকে যেতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়