ভারত মিয়ানমার থাইল্যান্ড : কানেক্টিভিটি প্রকল্পে যুক্ত হতে আগ্রহী বাংলাদেশ

আগের সংবাদ

শুভ জন্মদিন পিতা

পরের সংবাদ

চট্টগ্রামে পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের কাজ : সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের তাগিদ

প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পয়ঃশোধনাগার (স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে। চট্টগ্রাম ওয়াসা এই প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ের বাস্তবায়ন কাজ শুরু করেছে। পুরো নগরীকে ছয়টি জোনে ভাগ করে ছয়টি স্যুয়ারেজ প্ল্যান্ট এবং দুটি ফিকেল স্লাজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করা হচ্ছে। ছয়টি জোনের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে একটি জোন বাস্তবায়ন করা হবে। এই জোনে রয়েছে কোতোয়ালি, বাটালি হিল, মাঝিরঘাট, মাদারবাড়ী, আগ্রাবাদ, টাইগারপাস, আমবাগান, নয়াবাজার, চৌমুহনী, উত্তর হালিশহর ও হালিশহর আনন্দবাজার এলাকা। এখানে রয়েছে ২১টি ওয়ার্ড।
প্রকল্পের ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মঙ্গলবার রাতে হোটেল রেডিসন ব্লু বে ভিউ চট্টগ্রামের মোহনা হলে আয়োজিত চট্টগ্রাম ওয়াসার মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য উঠে আসে। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী প্রকল্প বাস্তবায়নে জনদুর্ভোগ এড়াতে সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের তাগিদ দেন। তিনি বলেছেন, পুরো এলাকায় একসঙ্গে কাজ শুরু করলে বিপর্যয় দেখা দেবে। একটির পর একটি ওয়ার্ডে পরিকল্পিতভাবে কাজ পরিচালনার জন্য তিনি ওয়াসা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় জানানো হয়, প্রথম পর্যায়ে ওই এলাকাগুলোর প্রায় ২০ লাখ মানুষকে স্যুয়ারেজ প্রকল্পের আওতায় আনতে কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে ২৮ হাজার বাড়িঘরে স্যুয়ারেজের লাইন যুক্ত করা হবে। ২০০ কিলোমিটারের বেশি পাইপ লাইন স্থাপন করা হবে মাটির ৫ থেকে ১৫ মিটার গভীরে। এসব এলাকা সিটি করপোরেশনের ২১টি ওয়ার্ডের আওতাধীন। সিটি মেয়রের শঙ্কা, একই সঙ্গে ২১টি ওয়ার্ডে কাজ শুরু করলে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়বে। তাই একটি ওয়ার্ডের কাজ শেষ করে পরের ওয়ার্ডের কাজ শুরু করার মাধ্যমে প্রকল্পটি শেষ করার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। মেয়র বলেন, ‘সব জায়গায় যদি একসঙ্গে কাজ শুরু হয়, মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়বে। তাই একটি ওয়ার্ড শেষ করে পরের ওয়ার্ডের কাজ শুরুর মাধ্যমে প্রকল্পটি শেষ করতে হবে। নগরের কাজে যারা যারা সম্পৃক্ত, তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে সিস্টেমের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। রাস্তা অনেক জায়গায় গভীর ৪ মিটার থেকে ৫ মিটার। রাস্তার ৩ ফুট কাটা হলে বাকি অংশ ধসে পড়বে। আমাদের রাস্তার ধারণ ক্ষমতা ১২ টন। যে লরিগুলো বন্দর থেকে বের হয় সেগুলোর ওজন থাকে ৪০-৫০ টন। তাই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িতদের এই কাজ নিয়ে অবগত করতে হবে।’
মেয়রের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, আমরা শহরটিকে বিশ্বমানের করতে চাচ্ছি। এই প্রকল্পের জন্য রাস্তা খুব বেশি কাটা হবে না। কোনো একটি জায়গায় ছোট পরিসরে রাস্তা কেটে পাইপ ঢুকিয়ে বোরিং করে অনেক দূর পর্যন্ত নিয়ে যাব। সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। এটি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করবে না। ২০০ কিলোমিটার পাইপ লাইনের মাঝে আমরা সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার রাস্তা কাটব। বাকি ১৯০ কিলোমিটার রাস্তা অক্ষত থাকবে। যেখানে রাস্তা কাটা হবে সেখানেও যান চলাচল কিংবা পথচারী চলাচলে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার ছিলেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম ফজলুল্লাহ। সভায় স্যুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী দক্ষিণ কোরিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাই ওং ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশনের প্রতিনিধি অন শন জু, চায়না প্রতিষ্ঠান জেভি অব ঝংনাম সিনো হাইড্রোর প্রতিনিধি এন্ড্রæ এবং জেভি অব ইসি ইসির প্রতিনিধি স্প্রিং সাংজাই প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে একুশে পদক-২০২২ পাওয়ায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেককে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
সুপেয় পানি নিশ্চিত প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, নগরীতে আগে সুপেয় পানির বহু উৎস ছিল। পুকুর ছিল, জলাধার ছিল। এখন সেসব নেই। এখন সব পুকুর ভরাট করে ফেলা হয়েছে। টিউবওয়েলেও পানি আসে না। নগরীতে বাকলিয়া, পতেঙ্গা, এমনকি লালখান বাজারের একটু উঁচু এলাকাতেও পানি পাওয়া যায় না। তিনি নগরীতে সুপেয় পানির সংস্থান করার জন্য ওয়াসার প্রতি আহ্বান জানান। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, শহরে বহু মানুষ পানির কষ্টে আছে। অনেকে ছাদে সুইমিং পুল করে। সুইমিং পুল না করে বহুতল ভবনগুলোতে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এখন বৃষ্টির পানিকে কাজে লাগাতে হবে। সুপেয় পানি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ নিয়ে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন জরুরি। ছাদে সুইমিং পুল না করে জলাধার করারও প্রস্তাব দেন তিনি। স্যুয়ারেজ প্রকল্পের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, এ প্রকল্পের কোনো বিকল্প নেই। চটগ্রামে দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে। ৭০ লাখ মানুষ রয়েছে। এছাড়া গ্রামের মানুষও নগরমুখী। পরিকল্পিত না হলে এ নগর বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে।
সভায় দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, নদীর পানি প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে- যা সার্বিকভাবে চট্টগ্রামের পরিবেশ দূষণ করছে। ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম মহানগরীতে সুপেয় পানি সরবরাহে সংকট সৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, পরিকল্পিত কোনো স্যুয়ারেজ সিস্টেম গড়ে না ওঠায় বছরের পর বছর ধরে টয়লেটের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রাম মহানগরী শূন্যের কোটায় রয়েছে- যা ঘুরেফিরে উন্মুক্ত মলমূত্র ত্যাগের মতো অবস্থা সৃষ্টি করছে। ঢাকা থেকে ১০০ বছর পিছিয়ে আছে চট্টগ্রাম। ১৯২৩ সালে ঢাকায় সুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। ১৯৬৩ সালে ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হলেও সুয়ারেজ করা হয়নি। একটি হেলদি সিটির জন্য সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকা অত্যাবশ্যক। এই প্রকল্পটি আমাদের বিশ্বমানের নগরীর দিকে এক ধাপ এগিয়ে নেবে। প্রকল্প বাস্তবায়নকালে মানুষের দুর্ভোগ যাতে কম হয় সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়