উপাচার্য ড. মশিউর রহমান : সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে অপসংস্কৃতি রুখতে হবে

আগের সংবাদ

সংস্কারের বিরূপ প্রভাব বাজারে : আইএমএফের শর্ত মেনে গ্যাস-বিদ্যুতে ভর্তুকি প্রত্যাহার করায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে

পরের সংবাদ

চট্টগ্রামের ছড়া কবিতা ও পুঁথি

প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

(পূর্ব প্রকাশের পর)

৫.
ধারে দুধা কিরে ভাই দুধা
দুধ কা ন দস
বাঘর ডরে
বাঘে কিরে মারে ধরে
বাঘের নাম কি আঁচিলা
ফাডা জালত বাজিলা
ফাডা জালতআ ফাডি গেল
আঁচিলাত বাজি গেল।

৬.
হিয়াল সর্দার বাঙাল গোমস্তা
বাঙাল গোমস্তা
হেই দেশত থাইকত ন
বুঝ ব্যবস্থা।

৭.
বববুর জামাই আইস্যে রে,
আইলর উঁয়র বইস্যে রে।
কি কি আইন্যে চগৈ
এক পাতিলা জিলাপি
তার জিলাপি তারে দে
আরো কদ্দুর বাড়াই দেয়।

৮.
হাঁছি-নিশি অদ্ভুত
ত্রাহিরাম যমর দূত।

গ.
আধুনিক যুগকে গবেষকেরা বলছেন স্বর্ণ প্রসবিনী। চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন অনেক গুণী লেখক। তারা বাংলা সাহিত্যকে নানা দিক থেকেই সমৃদ্ধ করেছিলেন। এ যুগে সাহিত্যের বিভিন্ন মননশীল ও সৃজনশীল শাখায় উপর্যুক্ত প্রতিভাবানদের দীপ্ত পদচারণা ছিল গৌরববহ। তাদের অন্যতম হলেন কবি নবীনচন্দ্র সেন (১৮৪৭-১৯০৯)। বাংলা সাহিত্যের এ যাবতকালে পাঁচজন কবিকে মহাকবি বলা হয়। তারা হলেন : মাইকেল মধুসূদন দত্ত, হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, নবীনচন্দ্র সেন, কায়কোবাদ এবং ইসমাইল হোসেন সিরাজী। নবীনচন্দ্র এই পাঁচ মহাকবির মধ্যে অন্যতম। তিনি সবার থেকে বেশি মহাকাব্য রচনা করেছিলেন। নবীনচন্দ্র সেনের আরো একটি অনন্যতা রয়েছে- তিনিই এই অঞ্চলের প্রথম সার্থক ‘দেশপ্রেমিক কবি’ স্বীকৃতি পেয়েছিলেন।
যুগপথিক কবি নবীনচন্দ্র সেনের রচিত মহাকাব্য ‘রৈবতক’ (১৮৭৫), ‘করুক্ষেত্র’ (১৮৯৩) এবং ‘প্রভাস’ (১৮৯৬) এই কাব্যত্রয়ীকে দ্বিতীয় মহাভারত বলা হয়। তার প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থ হলো- আখ্যান কাব্য রঙ্গমতী (১৮৮০), মার্কন্ডের চন্ডী (১৮৮৯), পদ্যানুবাদ শ্রীমদ্ভগবদগীতা (১৮৮৯), ভ্রমণবৃন্তান্ত প্রবাসের পত্র (১৮৯২), প্রবাস (১৮৯৬), নাটিকা- শুভ নির্ন্মাল্য (১৯০০), উপন্যাস ভানুমতি (১৯০৪)। কবি নবীনচন্দ্র সেনের আত্মচরিত্র ‘আমার জীবন’ পাঁচ খণ্ডে প্রকাশিত হয়। উপন্যাসের মতোই এটি একটি সুখপাঠ্য গ্রন্থ।
শশাঙ্কমোহন সেন (১৮৭২-১৯২৮)। তিনি কবি, সাহিত্য-সমালোচক, শিক্ষাবিদ। শশাঙ্কমোহন কাব্য, কাব্যনাট্য ও সমালোচনা মিলিয়ে কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি রচনা: কাব্য সিন্ধুসংগীত (১৮৯৫), শৈলসংগীত (১৯০৫), স্বর্গে ও মর্ত্যে (১৯১২), বিমানিকা (১৯২৪); কাব্যনাট্য সাবিত্রী (১৯০৯), বিশ্বামিত্র; সমালোচনা বঙ্গবাণী (১৯১৫), মধুসূদন: অন্তর্জীবন ও প্রতিভা (১৯২২), বাণীমন্দির (১৯২৮) ইত্যাদি। শশাঙ্কমোহন চট্টগ্রামের ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ’ ও ‘চট্টল হিতসাধিনী সভা’সহ কয়েকটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠা।
মনিরুজ্জমান এসলামবাদী (১৮৭৫-১৯৫০)। যিনি ‘সোলতান’ ও ‘আল-ইসলাম’ (১৯১৫-২১) পত্রিকার সম্পাদক এবং ‘ভারতে মুসলমান সভ্যতা’, ‘ভারতে ইসলাম প্রচার’, ‘ভূগোলশাস্ত্রে মুসলমান’, ‘খগোল শাস্ত্রে মুসলমান’, ‘তুরস্কের সুলতান’ ও ‘নেজামউদ্দিন আওলিয়া’ প্রভৃতি গ্রন্থের খ্যাত শীর্ষ রচয়িতা ছিলেন। রাউজান সুলতানপুরের একজন মহাকবির নামোল্লেখ করেছেন ড. মনিরুজ্জামান, তার রচিত ‘সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে চট্টগ্রাম’ গ্রন্থে। তার নাম আবুল মা’আলী মহাম্মদ হামিদ আলী (১২৮২-১৩৬৩ বাং)। গবেষক আবদুল হক চৌধুরীর ‘চট্টগ্রামের চরিতাভিধান’ (১৯৭৯)-এ যে তালিকা পাওয়া যায়, তা থেকে আমরা কিছু গুণী লেখকের নাম আমরা স্মরণে রাখতে পারি।
রমেশ শীল (১৮৭৭-১৯৬৭)। বাংলা কবিগানের অন্যতম রূপকার। কবিগানের লোকায়ত ঐতিহ্যের সাথে আধুনিক সমাজ সচেতনতার সার্থক মেলবন্ধন ঘটিয়ে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তিনি ছিলেন মাইজভাণ্ডারী গানের কিংবদন্তি সাধক। জনপ্রিয় এই গণসংগীত শিল্পী ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনে এবং সেই সঙ্গে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন পরবর্তী নুরুল আমিন বিরোধী আন্দোলনে তিনি প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন।
১৯৫৪ সালে জণগণের ভোটে নির্বাচিত যুক্তফ্রন্ট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং নুরুল আমিনকে পূর্ববাংলার গভর্নর বানানো হয়। এই নুরুল আমীন চট্টগ্রামে এলে জনগণের কাছে লাঞ্ছিত হন। এই নিয়ে তিনি বিখ্যাত একটি ব্যাঙ্গাত্মক গান রচনা করেন। গানটি হচ্ছে :
শোন ভাই আজগুবি খবর
মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন করে চট্টগ্রাম সফর।
বিপ্লবী চট্টগ্রাম গেলা সূর্যসেনের প্রধান কেল্লা
মন্ত্রী করে তৌব্বা তিল্লা,
করবো না জনম ভরে চট্টগ্রাম শহর।

কবিয়াল রমেশ শীলের ধারায় কবিগান, আঞ্চলিক গান বা লোকসাহিত্য চর্চায় ক্রমশ যুক্ত হন অসংখ্য নিবেদিতপ্রাণ রচয়িতা। তাদের মধ্যে আছেন কবিয়াল ফনী বড়–য়া, কবিয়াল ইয়াকুব আলী, মলয়ঘোষ দস্তিদার, মোহাম্মদ নাসির, মোহনলাল দাশ, আবদুল গফুর হালী, এম এন আখতার, সৈয়দ মহিউদ্দিন, আহম্মদ কবির আজাদ, সনজিত আচার্য, কল্যাণী ঘোষ, নুরুল আলম, ইকবাল হায়দার, সিরাজুল ইসলাম আজাদ প্রমুখ।
লোকমান খান শেরওয়ানী (১৯১০-১৯৬৯)। ব্রিটিশ শাসিত ভারতে ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন কর্মী ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন বাঙালি কবি ও সাংবাদিক। শবনম নামে একটি কবিতার বই আছে তার। এছাড়া কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। তন্মধ্যে রয়েছে রক্ষক ভক্ষক হলে রক্ষা করে কে, লোকমান বাণী, বিদ্রোহী আরব, রূপায়তন, দামামা।
মূলত কথাসাহিত্যিক হিসেবে খ্যাত হলেও চট্টগ্রামের কবিতাঙ্গনকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে মাহবুব-উল আলম ও আবুল ফজল। তাদের ঘিরে চট্টগ্রামে অবস্থানরত কবিরা কাব্যচর্চা করেছেন সনিষ্ঠ আন্তরিকতায়।
কবি ওহীদুল আলম (১৯১১-১৯৯৮)। তিনি ছিলেন একজন বাংলাদেশি লেখক, কবি, ইতিহাসবিদ এবং সাংবাদিক। তিনি ১৯৪৬ সালে কর্ণফুলীর মাঝি প্রকাশ করেছিলেন। তিনি সত্যবার্তা সাপ্তাহিক এবং দৈনিক নয়া জামানায় কাজ করেছেন, দুটিই চট্টগ্রামে অবস্থিত। পূর্ব পাকিস্তান ভিত্তিক দৈনিক পূর্ব পাকিস্তানের সম্পাদক, যার মালিক ছিলেন! আব্দুস সালাম, যিনি তার আত্মীয়ও ছিলেন। ১৯৭৪ সালে তিনি দেশকাল সাময়িকী সম্পাদনা শুরু করেন। পৃথিবীর পথিক, তার জীবনী ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৭৯ সালে তিনি কাব্যসমগ্র প্রকাশ করেছিলেন। ১৯৮৭ সালে বাংলা জীবনীকোষ প্রকাশিত হয়েছিল। এছাড়া তিনি কয়েকটি শিশুদের বই লিখেছিলেন।
শবনম খানম শেরওয়ানী (১৯১৫-১৯৮৪)। লেখালেখিতে ছিলেন খুবই আন্তরিক। একজন বিপ্লবী নারী। তিনি কবিতা ছাড়াও লিখতেন গল্প, রাজনৈতিক জীবন এবং সমাজের অসংগতি নিয়ে প্রবন্ধ। তিনি আকাশবাণী কলকাতায় তালিকাভুক্ত একজন সংগীত শিল্পী ও গীতিকার হিসেবে কাজ করেছেন।
গবেষক শাকিল আহমদ ‘কোহিনূর কেন্দ্রিক চট্টগ্রামের সাহিত্যচর্চা’ শীর্ষক এক লেখায় লিখেছেন, মোহাম্মদ আবদুল খালেক সম্পাদিত সাপ্তাহিক কোহিনূর পত্রিকার সবচাইতে আকর্ষণীয় বিষয় ছিল সাহিত্য পর্বটি। সেই পঞ্চাশের দশকে এই সাময়িকীকে ঘিরে একটি সাহিত্য পরিমণ্ডল গড়ে উঠে চট্টগ্রামে। এখানে যেমন প্রবীণ ও প্রতিষ্ঠিতদের লেখা ছাপা হতো, তেমনি যতœসহকারে ছাপাতেন অপেক্ষাকৃত নবীন লেখকদের লেখাও। এই সাময়িকপত্রকে বেষ্টন করে তৈরি হয়েছিল পরবর্তীকালে অনেক গুণী লেখকও। যাদের লেখায় কোহিনূর সমৃদ্ধ হয়েছে এদের মধ্যে রয়েছে-আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ, বেগম রোকেয়া, মাহবুব উল আলম, শওকত ওসমান, ওহীদুল আলম, শবনম খানম শেরওয়ানী প্রমুখ। যাদের লেখা অধিকাংশ সংখ্যায় ছাপানো হয়েছে এদের মধ্যে রয়েছে আলাদীন আলী নূর (কবিতা), মোতাসিম বিল্লাহ্ (কবিতা), চৌধুরী আহমদ ছফা (কবিতা ও গল্প) অশোক বড়ুয়া (কবিতা), শবনম খানম শেরওয়ানী (কবিতা), ওহীদুল আলম (নাটিকা, গল্প, কবিতা) জালালুদ্দিন আহমদ (প্রবন্ধ), মনিরুল আলম (কবিতা), কুমারী সৈয়দা রওশন আরা বেগম (কবিতা), নুরুন নাহার বেগম (কবিতা), শ্রীমহিনী মোহন দত্ত বিএ (প্রবন্ধ), সৈয়দ মোহাম্মদ হাশেম (গল্প), আইনুন নাহার বেগম (কবিতা)।

ঘ.
১৯৪৭ দেশভাগের পরবর্তী সময়ে বাংলা সাহিত্যে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয় সেই সময়ে সংগঠিত হয় আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন পূর্ববঙ্গের বাঙালির একটি বিশাল এবং স্থায়ী সাংস্কৃতিক অর্জন। মাতৃভাষার জন্য এই জীবনদান পৃথিবীর ইতিহাসে এক অনন্য ঘটনা। এ ঘটনা বাঙালির জীবনে এক অমিত সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। তাই ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতাযুদ্ধ আমাদের কাছে অতীতের একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও কর্মসূচি পালিত হয়েছে। একুশের প্রথম কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ লিখে কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী (১৯২৭-২০০৭)। তিনি ছিলেন একজন কবি, সাংবাদিক এবং ভাষা সৈনিক। একুশের প্রথম কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’র স্রষ্টা দুর্যোগ-সংকটে যিনি ছিলেন নির্ভীক, নিঃশব্দ ও নির্মোহ। তিনি নির্মাণ করেছেন বহু অসামান্য কবিতা। ভাষা নিয়ে, দেশ নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে, দেশের মানুষকে নিয়ে তার রচিত কবিতাগুলো আজ ইতিহাস হয়ে আছে। আশা, স্বপ্ন আর ভালোবাসার পাশাপাশি অন্যায়-অত্যাচার-জুলুম-অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি ক্ষোভ সঞ্চার করেছেন তার কবিতায়। শুভবোধ ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি লড়ে গেছেন নিরন্তর। ফলে তিনি পরিণত হয়েছেন জাতির কণ্ঠস্বরে।
মাহবুব উল আলম চৌধুরীর পরপর আমরা অনেক কবিমুখকে পাই, যাদের কর্মযজ্ঞ ছিল প্রতিনিধিত্বমূলক। এ সময়ে যারা সাহিত্য চর্চার মূল ভিত্তি তৈরির চেষ্টা করেন, তাদের মধ্যে অনেকের নাম বিস্মৃত প্রায়। তবু বঙ্কিম চন্দ্র রায়, জীবেন্দ্র কুমার দত্ত, আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার, সাদত আলী আখন্দ, মাহবুব-উল আলম, আবুল ফজল, ওহীদুল আলম, আবদুস সালাম, আলাদীন আলী নুর, উমরতুল ফজল প্রমুখের নাম সময়ের ধারাবাহিকতায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। পরবর্তী সময়ে এই ধারার সঙ্গে ক্রমশ যুক্ত হন সুচরিত চৌধুরী, ফাহ্মিদা আমিন, চৌধুরী জহুরুল হক, আ ফ ম সিরাজউদ্দউলা চৌধুরী, অনিশ বড়–য়া, মোহাম্মদ মোস্তফা, আবদুল মান্নান হাওলাদার, বিপ্রদাশ বড়–য়া, সুব্রত বড়–য়া, সালমা চৌধুরী, মেজবাহ খান, সুকুমার বড়–য়া, অমিত চন্দ প্রমুখ।
গেল শতাব্দীর ছয়ের দশকে এদেশের শিশুসাহিত্যের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে ছড়ায় ছড়ায় ছন্দের প্রকাশ। যা প্রকাশিত হয়েছে চট্টগ্রাম থেকে। এখ্লাসউদ্দিন আহমদ সম্পাদিত এই সংকলনটির মতো ‘সুচারু, শোভন, প্রতিনিধিত্বমূলক অথচ অল্পদামি আর কোনো শিশুগ্রন্থ এ যাবৎ আর এখানে প্রকাশিত হয়নি’। তার সম্পাদিত টাপুর টুপুর নজির সৃষ্টিকারী আরেকটি উল্লেখযোগ্য পত্রিকা। এ সময় চট্টগ্রামে অবস্থানের কারণে আল মাহমুদ ও এখ্লাসউদ্দিন আহমদ চট্টগ্রামে শিশুসাহিত্য বিকাশে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখেন। টাপুর টুপুর, দৈনিক আজাদীর ছোটদের পাতা আগামীদের আসর ও সেই সময়ে প্রকাশিত নানা সাময়িকীর মাধ্যমে প্রণত বড়–য়া, দীপঙ্কর চক্রবর্তী, মো. মাহবুব উল আলম, জহুর-উশ-শহীদ, মশউদ-উশ-শহীদ, শৈবাল বড়–য়া, বখতেয়ার হোসেন, রনজিৎ বরণ দেব, নূর মোহাম্মদ রফিক, খন্দকার আখতার আহমেদ, জামাল উদ্দিন বাবুল, শামসুল হক হায়দরী, অতনু বিশ্বাস, মাহবুবুর রহমান, খুরশীদ আলম বশির, এবিএম ওসমান গণি, প্রদীপ খাস্তগীর, কঙ্কন নন্দী প্রমুখ লেখকের উত্তরণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। চট্টগ্রামের শিশুসাহিত্যের যে সম্মানজনক বলিষ্ঠ অবস্থান, তার সার্থক সিঁড়ি হিসেবে কাজ করেছিলেন এইসব অগ্রগণ্য লেখক। শিশুসাহিত্যের বহমান ধারাটি আরো গতিময় ও সুসংহত করার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা অপরিসীম।
সেই কবি ও ছড়াকারদের সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করব এ নিবন্ধে। নিবন্ধে নাম অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে তারাই এখানে এসেছেন, যারা গ্রন্থের রচয়িতা। দেশের সংস্কৃতিকে বিকশিত ও সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে সেই লেখকরাই পালন করেন অপরিসীম ভূমিকা। ফলে তাদের পরিচিতি সংগ্রহ করে এবং তাদের প্রকাশিত গ্রন্থের তথ্য নিয়ে অনুসন্ধিৎসু ও বিশ্বস্ত পাঠকের সামনে তাদের অবদান তুলে ধরাই আমাদের লক্ষ্য।
অজয় দাশগুপ্ত (১৯৫৯)। কবি, ছড়াকার, প্রাবন্ধিক, কলাম লেখক। বাংলাদেশের ছড়াসাহিত্যে অনন্য একটি নাম। গত শতকের সত্তর দশকের অকুণ্ঠ মেধার অধিকারী ছড়াসাহিত্যিকদের অন্যতম তিনি। ছোট বড় সকলের জন্য নানামুখী ছড়া লিখে তিনি পাঠক সমাজে খ্যাতি লাভ করেছেন। বলা যেতে পারে অজয় দাশগুপ্ত দেশের পাঠকপ্রিয় এক দক্ষ ছড়াশিল্পী।
তার প্রকাশিত বই : তোমার আমার ঠিকানা, কৃষ্ণ সংস্কৃতির উথান পর্বে, তৃতীয় বাংলার চোখে, ছড়ায় গড়ায় ইতিহাস, দূরের দুরবিনে স্বদেশ, শুধু ছড়া পঞ্চাশ, কলামগুচ্ছ, কালো অক্ষরে তোমার রক্তাভ মুখ, অনিল চক্রবর্তী (১৯৪৮)। ছড়াকার। তার প্রকাশিত গ্রন্থ: লড়াকু লিমেরিক, উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা, যদি কিনতু অথচ, মোহন বাঁশির সুর।
অনিন্দ্য বড়–য়া। কবি, ছড়াকার, প্রাবন্ধিক। তার প্রকাশিত গ্রন্থ : বন পাহাড়ের ছড়া।
অনুপম সেন (১৯৪০)। কবি, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক, গবেষক। এই জনপদের অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব। কি পাণ্ডিত্য, কি গবেষণা, কি শিক্ষা, কি দর্শন, কি রাজনীতি, কি সংস্কৃতি, কি সাহিত্য- প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। দেশের নানা উত্থান-পতন, জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও সা¤প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলনে তিনি পালন করেছেন অগ্রণী ভূমিকা। তিনি আমাদের প্রগতিশীল ধারার বিবেকী কণ্ঠস্বর। তার প্রকাশিত গ্রন্থ : দি পলিটিক্যাল ইথিকস অব পাকিস্তান : দেয়্যার রুল ইন পাকিস্তানস ডিসইন্টিগ্রেশন, বাংলাদেশ : রাষ্ট্র ও সমাজ; ব্যক্তি ও রাষ্ট্র : সমাজ-বিন্যাস ও সমাজ-দর্শনের আলোকে; আদি-অন্ত বাঙালি : বাঙালি সত্তার ভূত-ভবিষ্যৎ; বাংলাদেশ : ভাবাদর্শগত ভিত্তি ও মুক্তির স্বপ্ন; কবি-সমালোচক শশাঙ্ক মোহন সেন; বাংলাদেশ : ভাবাদর্শগত ভিত্তি ও মুক্তির স্বপ্ন; বিলসিত শব্দগুচ্ছ (প্রতীচী ও প্রাচ্যের কয়েকটি কালজয়ী কবিতার অনুবাদ); জীবনের পথে প্রান্তরে; সুন্দরের বিচার সভাতে; ইতিহাসে অবিনশ্বর; বাংলাদেশ ও বাঙালি : রেনেসাঁস, স্বাধীনতা-চিন্তা ও আত্মানুসন্ধান; বাঙালি-মনন, বাঙালি-সংস্কৃতি : সাতটি বক্তৃতা; বিচিত ভাবনা।
অনুপমা অপরাজিতা। কবি। তার প্রকাশিত বই: তোমার সমাসঙ্গে কবিতার উঠোন, স্বপ্নভুক লোনাজন, দ্বিখণ্ডিত হিরণ¥য় গন্তব্য ও নদীর জন্য পিপাসা, মুহূর্তের মুখচ্ছবি।

অপু বড়–য়া (১৯৭২)। কবি ও ছড়াকার। তার প্রকাশিত গ্রন্থ: আকাশে রঙিন ঘুড়ি, যুগলবন্দি প্রেম, জন্ম আমার ধন্য হলো অভিষেক ভট্টাচার্য (১৯৭৭)। কবি, গল্পকার। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ : অশ্রæছায়া বসন্ত।
অভীক ওসমান (১৯৫৬)। কবি, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার। তার প্রকাশিত গ্রন্থ : রাতফেরার/অবশেষে জেনারেল, শংখ উপখ্যান, গদ্যকথা, বিষাদের জার্নাল, অভীক ওসমানের তিন নাটক, পৃথিবীর করুণ ডাঙায়, প্রয়াত পাঁচ ও ইবসেন, শুধু তোমার জন্যে এই অরণ্যে, হে সংসার হে লতা, নাট্য চতুষ্টয়, গুরুদক্ষিণা। (চলবে)

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়