কেরানীগঞ্জের দগ্ধ সেই গৃহবধূর মৃত্যু

আগের সংবাদ

অনির্বাচিত সরকার এলে সংবিধান অশুদ্ধ হবে : অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

দাম ও রপ্তানি কমায় বিপাকে বাগেরহাটের চিংড়ি চাষিরা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:৩৪ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক, বাগেরহাট : ‘হোয়াইট গোল্ড’ নামে পরিচিত গলদা ও বাগদা চিংড়ি উৎপাদনে দেশের শীর্ষ জেলা বাগেরহাট। এখানকার ঘেরে উৎপাদিত চিংড়ি দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। তবে উৎপাদন খরচ বেশি, দাম কম এবং আগের চেয়ে রপ্তানি কমে যাওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। করোনার ধাক্কা সামলে ওঠা চিংড়ি চাষি ও রপ্তানিকারকরা পড়েছেন চরম বিপাকে।
জানা গেছে, বর্তমানে চিংড়ি খাদ্যের দাম আগের চেয়ে প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে। উৎপাদন খরচ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। অন্যদিকে মানভেদে প্রতি কেজি চিংড়ির দাম ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। সেই সঙ্গে রপ্তানিও কমেছে ৩১ শতাংশ। এর ফলে চিংড়ি ঘেরের মালিক ও চাষিদের মাথায় হাত ওঠার জোগাড়।
এ ব্যাপারে ঘের মালিক ও রপ্তানিকারক জানিয়েছেন- মধ্যস্বত্বভোগীরা সিন্ডিকেট করে চিংড়ি খাদ্যের দাম বাড়িয়েছে। আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশি চিংড়ির দুই বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রে চিংড়ির চাহিদা কমে গেছে। এতে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অবস্থার উন্নতি না হলে অনেকেই চিংড়ি চাষে ছেড়ে দিয়ে ভিন্ন পেশা গ্রহণ করবেন। দেশের আর্থিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারি প্রণোদনা সময়ের দাবি।
এ ব্যাপারে বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, একসময় দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি পণ্য ছিল চিংড়ি। কিন্তু গত কয়েক বছরে এটি ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে। এখন চিংড়ি দেশের শীর্ষ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে।
বাগেরহাটের স্থানীয় চাষি ও মৎস্য আড়তমালিকরা জানান- চিংড়ির আকার ৪-৮ সেন্টিমিটার হলে সেগুলোকে বিক্রির উপযোগী বলে ধরা হয়। আর দাম নির্ভর করে গ্রেডের (আকার) ওপর। ২৫-৩০টিতে কেজি হয় এমন গ্রেডের প্রতি কেজি বাগদা চিংড়ির পাইকারি দাম ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ছিল ৯০০ টাকা। বর্তমানে তা ৫২০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ৪০টির বেশি হওয়া প্রতি কেজি বাগদার দাম আগে ছিল ৫০০ টাকা, তা এখন ৩০০ টাকার নিচে। অন্যদিকে ১০-১২ গ্রেডের প্রতি কেজি গলদার পাইকারি দাম ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে কমে ১ হাজার ১০০ টাকায় নেমে গেছে। এর চেয়ে ছোট আকৃতির গলদা আগে যেটা বিক্রি হতো ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় সেটি বর্তমানে ৬০০-৭০০ টাকা।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুসারে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে চিংড়ি রপ্তানি ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। তখন চিংড়ি রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৪০ কোটি ৭৩ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা। আর চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই খাতে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৫০ কোটি ডলার। তবে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস জুলাই-ডিসেম্বরে চিংড়ি রপ্তানি খাতে আয় ৩১ দশমিক ৪৭ শতাংশ কমেছে।
বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলার চিংড়ি চাষিরা জানান, চিংড়ি চাষ এখন মরণফাঁদ। চিংড়ি খাদ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে এবং চিংড়ির দাম যেভাবে কমেছে তাতে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। গত ছয় মাসে প্রতি কেজি চিংড়ির দাম ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। অন্যদিকে খাদ্যের দামসহ অন্যান্য খরচ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।
চিংড়িচাষিরা আরো জানান, এক বছর আগেও প্রতি বস্তা (৩৪ কেজি) গমের ভুসি বিক্রি হতো ৮০০ টাকায়, যা বর্তমানে ১ হাজার ৯০০ টাকা। একই সময়ে ৫০ কেজির এক বস্তা পালিশ কুঁড়ার দাম ৬০০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৭০০ টাকায় উঠেছে। প্রতি বস্তা (২৫ কেজি) ফিশ ফিড ৮০০ থেকে বেড়ে ১ হাজার ৬০০ টাকা এবং এক বস্তা (৫০ কেজি) সয়াবিন খইল ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৭১০ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
এদিকে ঘের মালিক ও চাষিদের দাবি- বেশি দামে চিংড়ি খাদ্য কিনতে হচ্ছে, অন্যদিকে সিন্ডিকেটের কারণে চিংড়ি বিক্রির সময় ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমণে তারা দুর্ভোগে পড়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে অনেকেই চিংড়ি চাষ থেকে সরে আসতে বাধ্য হবেন।
জেলার মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, বাগেরহাটে ৬৬ হাজার ৭১৩ হেক্টর জমিতে ৭৮ হাজার ৬৮৫টি চিংড়ি ঘের রয়েছে।
এর মধ্যে প্রায় ৫২ হাজার ঘেরে বাগদা এবং ২৬ হাজার ঘেরে গলদা চিংড়ি চাষ হয়। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে বাগেরহাট জেলায় প্রায় ৪০ হাজার টন চিংড়ি উৎপাদিত হয়েছিল, যা তার আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি। একই সময়ে এই জেলা থেকে চিংড়ি রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৩ শতাংশ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়