প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
জাহিদ আবেদীন বাবু, কেশবপুর (যশোর) থেকে : বাংলা সাহিত্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকাব্যের মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৯তম জন্মবার্ষিকী আজ বুধবার। কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়িতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে প্রতি বছরের ন্যায় বসছে সপ্তাহব্যাপী ‘মধুমেলা’।
২৫ জানুয়ারি সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার উদ্বোধন করবেন সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। আর এ মেলা চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। মধুমঞ্চে প্রতিদিন আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক ও যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সার্কাস, জাদু প্রদর্শনী, কৃষিমেলা, মৃত্যুকূপ, কুটিরশিল্প, নাগরদোলা, বিচিত্রা অনুষ্ঠানসহ নানা রকমের পসরা বসবে। সম্পূর্ণ মেলা প্রাঙ্গণ থাকবে সিসি ক্যামেরার আওতায়।
এ বিষয়ে মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি যশোর জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খাঁন বলেন, এবারের মধুমেলায় কবি ভক্তদের আনাগোনা ও পর্যটকদের উপস্থিতি বেশি থাকবে বলে আমরা আশা করছি। মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ব্যবস্থা রাখাসহ সম্পূর্ণ মেলা প্রাঙ্গণকে সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি (বাংলা ১২ মাঘ) যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদ সংলগ্ন সাগরদাঁড়ি গ্রামের ঐতিহ্যবাহী দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা রাজ নারায়ণ দত্ত, মা জাহ্নবী দেবী। অসাধারণ মেধার অধিকারী মধুসূদন দত্ত ব্যক্তি জীবনে ছিলেন খামখেয়ালি, বিলাস প্রিয়। শৈশবে মায়ের কাছেই লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয় মধুসূদন দত্তের। মায়ের হাত ধরেই পরিচয় হয় রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণের সঙ্গে। এরপর এক ইমামের কাছ থেকে শেখেন বাংলা, আরবি, ফারসি। ১৩ বছর বয়সে সাগরদাঁড়ি থেকে কলকাতায় আসেন মধুসূদন। সেখানে একটি স্কুলে কিছুদিন পড়ার পর ভর্তি হন হিন্দু কলেজে (প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়)। এখানে পড়ার সময়ই মধুসূদনের কবি হওয়ার স্বপ্ন তৈরি হয়। মধুসূদন বিলেতে গিয়ে ইংরেজিতে কাব্যচর্চা করার কথা ভেবেছিলেন। ১৮৪৩ সালে তিনি খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেন এবং মূল নামের আগে যুক্ত করেন ‘মাইকেল’ নামটি। ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে তার বাবা তাকে ত্যাজ্য করেছিলেন। খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করার পর মধুসূদন পড়াশোনা করেছিলেন শিবপুরের বিশপস কলেজে।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত নানা কারণে পড়াশোনা শেষে মাদ্রাজে চলে যান। সেখানে একটি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। চরম দারিদ্র্যের মধ্যেও ইংরেজিতে সাহিত্য চর্চা চালিয়ে যান তিনি। ছদ্মনামে লিখেছেন পত্রিকায়ও। ‘হিন্দু ক্রনিকল’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করলেও অর্থাভাবে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। মাদ্রাজে থাকাকালীন সাহিত্যিক হিসেবে মধুসূদনের নাম ছড়িয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে অবশ্য মধুসূদন দত্ত মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। সেজন্য তিনি ১৮৫৬ সালে কলকাতায় ফিরে আসেন। মাতৃভাষায় সাহিত্য চর্চা করেই সফল হয়েছিলেন মাইকেল, সঙ্গে বাংলা সাহিত্যকেও নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। বাংলা ভাষায় প্রথম সফল মহাকাব্য ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ লিখেছেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
মহাকাব্য ছাড়াও গীতিকাব্য, সনেট, পত্রকাব্য, নাটক, প্রহসন ইত্যাদি রচনা করেছেন।
এছাড়া নাটক শর্মিষ্ঠা, পদ্মাবতী, কৃষ্ণকুমারী, একেই কি বলে সভ্যতা ও বুড় শালিকের ঘাড়ে রোঁ নামের দুটি প্রসহন, ব্রজাঙ্গনা, বীরাঙ্গনা এবং চতুর্দশপদী কবিতা লিখেছেন তিনি। ক্যাপটিভ লেডি তার ইংরেজি কাব্য।
১৮৭৩ সালের ২৯ জুন আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে এই গুণী মানুষটি মৃত্যুবরণ করেন।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।