প্রধান শিক্ষককে পিটুনি : আ.লীগ নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি

আগের সংবাদ

ভোক্তা অধিদপ্তরের মতবিনিময় সভা : আমদানি স্বাভাবিক না থাকলে বাজার নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে

পরের সংবাদ

গোলাপগঞ্জে দেওয়ানের পুল ভাঙতে গণশুনানি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গোলাপগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি : সিলেটের গোলাপগঞ্জের ঐতিহাসিক ‘দেওয়ানের পুল’ ভাঙতে এবার গণশুনানির আয়োজন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। গতকাল রবিবার সকালে উপজেলার দেওয়ান সড়কে অবস্থিত ‘দেওয়ানের পুল’ সংলগ্ন স্থানে এ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মোঘল আমলে নির্মিত প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো দেওয়ানের পুল ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণ বিষয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী, পরিবেশবাদী সংগঠন ও গণমাধ্যমকর্মীদের মতামত নেয়া হয়।
গণ শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইনামুল কবির, গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির শাফি চৌধুরী এলিম, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সৈয়দ মিছবাহ উদ্দিন, উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নাজিরা বেগম শিলা, উপজেলা প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান, সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সভাপতি ও সাংবাদিক আব্দুল আহাদ, লক্ষিপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহতাব উদ্দিন জেবুল, ফুলবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হানিফ খানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। জানা যায়, গত বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে দেওয়ানের পুল ভাঙার কাজ শুরু করে এলজিইডি। সে সময় প্রাচীন এই প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন ভাঙা নিয়ে পরিবেশবিদ ও গণমাধ্যমকর্মীদের সমালোচনায় সেতু ভাঙার কাজ বন্ধ করতে চিঠি দেয় প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর।
একই সময়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদও সেতুটি না ভেঙে কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেন। পরবর্তীতে ৪ জানুয়ারি স্থানীয় জনসাধারণের ব্যানারে একটি মানববন্ধন থেকে সেতুটি ভেঙে ফেলে দ্রুত নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানানো হয়। এরই প্রেক্ষিতে এ গণশুনানির আয়োজন করে এলজিইডি সিলেট বিভাগ।
এতে এলাকাবাসী ও স্থানীয় রাজনীতিবিদরা বিষয়টি দ্রুত সমাধানের মাধ্যমে প্রস্তাবিত সেতু নির্মাণের পক্ষে মতামত তুলে ধরেন। শুনানিতে এলজিইডি সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইনামুল কবির বলেন, এই সেতুটি দীর্ঘদিনের পুরনো। তবে প্রতœতত্ত্ব বিভাগের তালিকায় এটি অন্তর্ভুক্ত নয়। এছাড়া প্রতœতত্ত্ব বিভাগের কোনো সাইনবোর্ডও নেই। যার ফলে এর প্রতœতাত্ত্বিক গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা অবগত ছিলাম না। তবে যেহেতু সেতুটি ভাঙা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে, তাই আমরা স্থানীয় জনসাধারণের মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণকে যুক্তিযুক্ত মনে করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেভ দ্য হেরিটেজ এন্ড এনভায়রনমেন্টের নির্বাহী পরিচালক আব্দুল হাই আল-হাদী বলেন, ১৯৬৮ সালে পুরাতত্ত্ব আইন অনুযায়ী যে কোনো প্রতœতাত্ত্বিক স্থাপনা, তা সংরক্ষিত ঘোষিত হোক বা না হোক, তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর। কিন্তু দেওয়ানের পুল ভাঙার সিদ্ধান্ত এলজিইডি প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের তোয়াক্কা না করেই নিয়েছিল। এরপর যখন প্রতœতত্ত্ব বিভাগ সরেজমিন সেতুটি পরিদর্শন করে এটি ভাঙতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তখন এলজিইডি এ ধরনের গণশুনানি আয়োজন করতে পারে না। তাছাড়া গণশুনানির ব্যাপারে প্রতœতত্ত্ব বিভাগকে অবহিত করাও হয়নি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, মূলত ঠিকাদারদের সুবিধা দিতে এবং প্রকল্প হাতছাড়া হওয়ার ভয়েই এলজিইডি তাড়াহুড়ো করে গণশুনানি আয়োজন করছে।
প্রসঙ্গত, মোঘল সম্রাট মুহম্মদ শাহ এর শাসনামলে (১৭১৯-৪৮) বাংলার সুবাদার ছিলেন সুজা উদ্দিন খানের দেওয়ান (রাজস্ব কর্মকর্তা) হিসেবে ১৭৪০ সালে সিলেট আসেন গোলাব রাম বা গোলাব রায়। তিনি যখন জানতে পারেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণে শ্রীচৈতন্যের পিতৃভূমি রয়েছে, তখন সিলেট থেকে ঢাকা দক্ষিণ পর্যন্ত যাতায়াতের সুবিধার্থে একটি সড়ক নির্মাণ করেন, যা দেওয়ানের সড়ক নামে পরিচিত। এ সড়কের মধ্যবর্তী সেতুটিই দেওয়ানের পুল। গত বছর ১০ ফুট প্রস্থের এই সড়কটি ২৪ ফুট প্রস্থে উন্নীত করে পুননির্মাণের প্রকল্প নেয় এলজিইডি। এরই অংশ হিসেবে দেওয়ানের পুল অপসারণ করে এর স্থানে প্রশস্ত একটি পুল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে দেওয়ানের পুল ভাঙার কাজ শুরু করে এলজিইডির নিয়োগকৃত ঠিকাদার। সেতুটির একাংশ ভাঙার পর বিষয়টি প্রতœতত্ত্ব ও ঐতিহ্য সংরক্ষক এবং স্থানীয় সচেতন মহলে নজরে এলে সমালোচনা শুরু হয়। এরপর প্রতœতত্ত্ব বিভাগ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিত সেতুটি না ভাঙার পরামর্শ দেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়