প্রধান শিক্ষককে পিটুনি : আ.লীগ নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি

আগের সংবাদ

ভোক্তা অধিদপ্তরের মতবিনিময় সভা : আমদানি স্বাভাবিক না থাকলে বাজার নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে

পরের সংবাদ

উপকূলে ‘আর্থিক সচ্ছলতা’ এনেছে কয়রা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শেখ সিরাজউদ্দৌলা লিংকন, (কয়রা) খুলনা থেকে : সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার গ্রামের দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নে কাজ অগ্রণী ভূমিকা রাখছে কয়রা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। উপকূলীয় দুর্গম এ উপজেলার সাত ইউনিয়নের ১৯৩টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতির মাধ্যমে ৮ হাজার ৫২৪ জন সদস্য প্রত্যক্ষ সুফল ভোগ করছেন। এছাড়া পরোক্ষভাবে ফল ভোগ করছেন সদস্যদের পরিবারসহ প্রায় আরো ৫০ হাজারের বেশি মানুষ।
২০০৯ সাল থেকে কয়রা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক উপজেলার দারিদ্র্য ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের নিয়ে সমিতি গঠনের মাধ্যমে তহবিল গঠন করে মৎস্য চাষ, কাকড়া চাষ, গবাদি পশু পালন, গরু মোটাতাজাকরন, হাঁস-মুরগি পালন, সবজি চাষ, ধান চাষ, ক্ষুদ্র ব্যবসা, মধু আহরণসহ প্রভৃতি খাতের মাধ্যমে সেবামূল্যে ঋণ নিয়ে সবাই স্বাবলম্বী হয়েছে। যা দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। লাভজনক প্রতিষ্ঠানেরূপ নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষায়ায়িত কয়রা উপজেলা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক।
জানা গেছে- প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ যা ২০০৯ সালে ‘আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প’ করন করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার সাত ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে মোট ৬০ জন সদস্য, ৪০ জন মহিলা ও বিশজন পুরুষ নিয়ে সমিতির কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের কার্যক্রম প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ২০১৪ সালে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্যাংকটি উপজেলার দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষ নিয়ে সমিতির মাধ্যমে তহবিল গঠন করে দারিদ্র্য বিমোচনে অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে।
নারীদের আয়বর্ধক কাজে নিয়োজিত করে আর্থিক স্বাবলম্বী, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করেছে। এছাড়া কৃষির বিভিন্ন সেক্টর তথা- কৃষি, মৎস্যচাষ, হাঁস-মুরগি পালন, গবাদিপশু পালন, নার্সারী ও ফল চাষ ইত্যাদি বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি বাড়িকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচনায় এনে একটি স্বতন্ত্র অর্থনৈতিক ইউনিট হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে গড়া পুঁজি সহায়তায় নিজ আঙ্গিনায় উৎপাদনমুখী কার্যক্রম গ্রহণ, বিপণন ও আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন- ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ত্বরান্বিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের সফলতা উপকূলীয় কয়রা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার দরিদ্র মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এর সুফল ভোগ করছে। দরিদ্রদের জমানো প্রায় ৬ কোটি ৩৪ লাখ ৭ হাজার টাকা ও ঋণের ৪৩ কোটি ৫৮ লাখ ৩০ হাজার ৯২৪ টাকায় ব্যাংকটি দরিদ্রদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে।
উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের জোড়শিং গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্য সুমিত্রা রানি মণ্ডল ভোরের কাগজকে বলেন, ২০১৪ সালে যখন সমিতির সদস্য হই তখন সংসারে অভাব অনটনে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। প্রাথমিক পর্যায়ে সমিতির মাধ্যমে পোল্ট্রি ও মৎস্য চাষের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। পরে সমিতি থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে পোল্ট্রি ও মৎস্য চাষের মাধ্যমে লাখপতি হয়েছি। আমি এবং আমার পরিবার কয়রা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক তথা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঋণী হয়ে থাকব।
সুফল ভোগের কথা জানান গোলখালী গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্য বিজলী খাতুন, মারুফা খাতুন, রুহুল কুদ্দুসসহ অনেকে। কয়রা সদর ইউনিয়নের ১ নং কয়রা গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্য মিজানুর রহমান ঢালী, ৩নং কয়রা সমিতির সদস্য শাহিদুজ্জামান, দক্ষিণ মদিনাবাদ গ্রাম উন্নয়ন সমিতির বিকাশ চন্দ্র মন্ডল, ৬নং কয়রা গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্য আখতারুজ্জামানসহ আরো অনেকে জানিয়েছেন তাদের দারিদ্র্যতার গল্প। কয়রা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে তিল তিল করে জমানো অর্থ ও সমিতির মাধ্যমে সেবামূল্যে ঋণ নিয়ে আজ তারা স্বাবলম্বী।
তারা বলেন, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকই আমাদের মত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন ঘটিয়েছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক সদস্য অভিযোগ করে বলেন- আগের কর্মকর্তা মিলন কান্তি সরকার শাখা ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে থাকাকালে সেবার মান কমে গিয়েছিল। তিনি উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় আত্মীয়করণ, অধীনস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অসাদাচরণসহ দীর্ঘদিন একই চেয়ারে থাকায় নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় ওই কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়।
এদিকে গত বছরের অক্টোবর মাসে মণীষ কুমার রায় কয়রা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে সিনিয়ার অফিসার হিসেবে যোগদানের পর ব্যাংকে প্রাণচঞ্চাল্য ফিরে আসে, বেড়েছে সেবার মান।
এ ব্যাপারে কয়রা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মণীষ কুমার রায় ভোরের কাগজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষায়িত পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রামের দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়ন ঘটেছে। আগামীতে প্রতিষ্ঠানটিকে আরো অগ্রগামী করে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়