মাছরাঙা টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপিকা ডা. নাতাশার মৃত্যু

আগের সংবাদ

৫০ বছরের অংশীদারিত্ব উদযাপনকালে বিশ্বব্যাংক এমডি : বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের সর্ম্পক নতুন মাইলফলকে

পরের সংবাদ

প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় ক্ষুব্ধ কৃষক : পূর্বধলা-শ্যামগঞ্জে সরকারি মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি হচ্ছে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পূর্বধলা (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি : পূর্বধলা ও গৌরীপুর উপজেলার শ্যামগঞ্জ বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে বিসিআইসি ডিলার, বিএডিসি ডিলার, সাব ডিলারসহ খুচরা পর্যায়ে সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইউরিয়া, এমওপি, ডিএপি (বাংলা), টিএসপিসহ সব ধরনের সার ২০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি ধরে বিক্রি করছে ডিলার ও সার ব্যবসায়ীরা।
ইরি বোরো মৌসুমের শুরুতেই কৃষকদের জিম্মি করে এক শ্রেণির মুনাফালোভী ডিলার সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রকার ভেদে ১০০ টাকা থেকে ৪০০/৫০০ টাকা বেশি দামে এসব সার বিক্রি করছে। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় ডিলাররা বেশি দামে সার বিক্রি করলেও স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করায় কৃষকদের মাঝে কিছুটা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায় এ বছর উপজেলার মোট ২১ হাজার ৭৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও ১৫ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে উপসি চাষাবাদ করা হবে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৩ হাজার ১৩৫ টন। এ ছাড়া উপজেলায় সরিষা চাষবাদ করা হয়েছে ১৪ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে।
কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শফিফুল ইসলাম জানান ইরি-বোর মৌসুম শুরুর আগেই উপজেলা কৃষি বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলার ডিলারদের সঙ্গে কয়েকদফা মিটিং করে বলা হয়েছে, তারা যেন সরকারের নির্ধারিত দামের বাইরে বেশি দামে সার বিক্রি না করেন।
কিন্তু ডিলাররা সরকারি নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামেই সার বিক্রি করে আসছেন। কৃষকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বেশি দামে সার বিক্রি করে আসলেও কৃষি বিভাগ এখনো এ ব্যাপারে কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এছাড়া সারা উপজেলায় কৃষি বিভাগের কোনো মনিটরিং না থাকায় ডিলাররা সারের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। গত দুই দিন ধরে শ্যামগঞ্জ বাজারে বিভিন্ন ডিলারের দোকানে মনিটরিং করে দেখা গেছে, কৃষকরা বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ ডিলাররা সিন্ডিকেট তৈরি করে এক রেটে তা বিক্রি করছে।
শ্যামগঞ্জসহ বিভিন্ন হাটবাজারে ইউরিয়া প্রতি বস্তা সরকারি মূল্য ১১০০ টাকা হলেও তা বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১১/১২০০ টাকায়, ডিএপি যার সরকারি মূল্য ৮০০ টাকা তা বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১৩০০/১৫০০ টাকা, এম ও পি (লাল সার) সরকারি মূল্য ৭৫০ টাকা হলেও তা বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকায়। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায় পূর্বধলা উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের জন্য বিসিআইসি ডিলার ১৮ জন, বিএডিসি ডিলার ২৬ জন এবং সাব ডিলার রয়েছেন ১০৭ জন।
ডিলারদের নিজ নিজ ইউনিয়নে সার বিক্রির নিয়ম থাকলেও ইউনিয়ন পর্যায়ে অল্প পরিমাণ মাল পাঠিয়ে শ্যামগঞ্জ বাজারে দোকান খুলে মাল বিক্রি করছে। এখানে একটি বিষয় উল্যেখ করা প্রয়োজন শ্যামগঞ্জ বাজারটি তিন উপজেলা পূর্বধলা গৌরীপুর ও তারাকান্দা উপজেলার মহোনা এবং এই তিন উপজেলার কৃষক সার কিনতে শ্যামগঞ্জ বাজারে আসে। তাদের কাছে খুব সহজে বেশি দামে সার বিক্রি করতে পারে ডিলাররা। কারণ তারা অন্য উপজেলা বা অন্য ইউনিয়নের কৃষক, দাম নিয়ে তারা প্রতিবাদ করলে তাদের কাছে সার বিক্রি করা হবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়। নিরুপায় হয়ে তারা কোনো রকম প্রতিবাদ না করে বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য হন। ডিলার, সাব ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ী এ তিন হাত ঘুরে কৃষক পর্যায়ে গিয়ে প্রতি বস্তা সারের দাম বাড়ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। পূর্বধলা কৃষি বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের মনিটরিং না থাকায় কৃষকদের ঠকিয়ে বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। এছাড়া ছোট ছোট হাটবাজারগুলোতে আরো অনেক বেশি দামে সার বিক্রি হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে দুজন সার ব্যবসায়ীকে বেশি দামে সার বিক্রি করার অপরাধে জরিমানা করা হলেও বন্ধ হচ্ছে না বেশি দামে সার বিক্রি। ডিলার, সাব ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কেউই ক্রেতাদের রসিদ দিচ্ছে না। রসিদ চাইলে নানা অজুহাতে তাদের কাছে সার বিক্রি করছে ডিলাররা। আরো অভিযোগ রয়েছে, শ্যামগঞ্জ বাজারের একজন ডিলারই আরো দুই জন ডিলারের মাল তুলে তা বিক্রি করছেন। অপর দিকে বিসিআইসি ডিলার ও বিএডিসি ডিলার একই ব্যক্তি। কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ইউরিয়া সার সাড়ে ১১০০ টাকা, ডিএপি সার ১৩০০ টাকা এবং এমওপি ১১০০ টাকা দরে বিক্রি করেছে। সরকারি মূল্যে তারা আমাদের সার দেয়নি। আর রসিদ চাইলে সার বিক্রি করে না।
শ্যামগঞ্জ বাজারের বিসিআইসি ডিলার হুমায়ুন কবির জানান আমরা ঠিকমতো বরাদ্দ পাই না, বাইরে থেকে বেশি দামে সার কিনে আনতে হয়। ফলে বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। ডিএপি সার সাড়ে ১৩০০ টাকা বিক্রি করা প্রসঙ্গে তিনি জানান ডিএপি (রাঙ্গাদিয়া চট্টগ্রাম) এই সার আমরা বরাদ্দ কম পাই। ফলে চট্টগ্রাম থেকে বেশি দামে কিনে আনতে হয় বিক্রিও বেমি দামে করতে হয়। মো. হুমায়ুন কবির নিজের ডিলারশিপসহ আরো দুজন ডিলারের মাল উত্তোলন করে বিক্রি করে আসছে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান ইরি-বোরো মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলার সব সার ডিলারকে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়ে মিটিং করে সব সার ডিলারদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করা যাবে না। সারের কোনো ঘাটতি নেই, পর্যাপ্ত সার বরাদ্দ পাচ্ছে ডিলাররা। তারপর তারা বেশি দামে সার বিক্রি করছে আমাদের উপসহকারী কৃষি অফিসারদের কাছে জানতে পারলাম। তবে এ ব্যাপারে ইউএনও স্যারকে নিয়ে আনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কৃষি অফিসার আরো জানান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদেরকে নজরদারি করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছ।
পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হাছান প্রিন্স জানান, যারা সরকারি নিয়ম অমান্য করে বেশি দামে সার বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে বেশি দামে সার বিক্রির অপরাধে দুজন সার ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়