সমাজকল্যাণমন্ত্রী : ভিক্ষুক নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালাচ্ছে মোবাইল কোর্ট

আগের সংবাদ

বৈশ্বিক সংকটে চাপা প্রত্যাবাসন : রোহিঙ্গা শরণার্থী

পরের সংবাদ

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র : ডিসেম্বরে পরীক্ষামূলক উৎপাদন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আশা প্রকাশ করে বলেছেন, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে (৬০০ মেগাওয়াট) আগামী ডিসেম্বরে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হবে। এর ৬ মাস পরই বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবে দ্বিতীয় ইউনিট (৬০০ মেগাওয়াট)। গত বৃহস্পতিবার মাতারবাড়ি প্রকল্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৭১ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৭ শতাংশ। পোর্ট ও পাওয়ায় প্ল্যান্টের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৮৮ শতাংশ। ২৭৫ মিটার উঁচু চিমনি নির্মাণকাজ শেষ, বয়লার, টারবাইন জেনারেটর এবং প্রি-কমিশনিংয়ের আনুষঙ্গিক কাজ চলমান রয়েছে।
তিনি আরো জানান, পুরোমাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে দৈনিক ১৩ হাজার ১০৪ টন কয়লার প্রয়োজন হবে। এজন্য কয়লা খালাসের জেটি ও সাইলো নির্মাণ করা হয়েছে। বিশাল আকৃতির সাইলোগুলোতে ৬০ দিনের কয়লা মজুত করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কয়লার জেটিতে সরাসরি ৮০ হাজার টন ক্ষমতাসম্পন্ন মাদার ভেসেল ভিড়তে পারবে। আর মাদার ভেসেল থেকে কয়লা খালাস করতে সময় লাগবে দেড় থেকে দুই দিন। কয়লার সহজ পরিবহনের বিষয়টি মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বিশেষভাবে এগিয়ে রাখবে। পায়রা কিংবা রামপালে মাদার ভেসেল গভীর সমুদ্রে রেখে লাইটারেজে করে কয়লা খালাস করতে হয়। বিষয়টি একদিকে যেমন সময়সাপেক্ষ, তেমনি ব্যয়বহুল। লাইটারেজ ভাড়া ছাড়াও মাদার ভেসেলের অপেক্ষমাণ চার্জ হাজার হাজার ডলার গুনতে হয়। মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রে এসব ঝামেলা থাকছে না। কেননা বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিজস্ব জেটিতে মাদার ভেসেল ভেড়ানোর জন্য ১৪.৩ কিলোমিটার লম্বা (প্রস্থ ৩০০ মিটার) চ্যানেল খনন করা হয়েছে। নাব্য নিশ্চিত করার জন্য সেডিমেন্টেশন মিটিগেশন ডাইক করা হয়েছে। এতে করে বছর বছর ড্রেজিংয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে চ্যানেলটি। সমীক্ষায় দেখা গেছে বছরে ৮ মিলিয়ন টন পলি জমার সম্ভাবনা ছিল।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আরেকটি চ্যালেঞ্জ থাকে ছাই (অ্যাশ) ব্যবস্থাপনা। এখানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইফটাইম ২৫ বছরের ছাই মজুত রাখার মতো অ্যাশপন্ড রাখা হয়েছে। পৃথক দুটি অ্যাশপন্ড- একটির আয়তন ৯০ একর, আরেকটির বিস্তৃতি ৬০০ একরজুড়ে। কয়লা মজুতের জন্য ৮০ একর জমিতে কোল ইয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। তাছাড়া সাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে তোলা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যাতে সাইক্লোন কিংবা জলোচ্ছ¡াসের কবলে না পড়ে সেজন্য সি লেভেল থেকে ১৪ মিটার উঁচু বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। বাঁধের ভেতরে অবস্থিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবকাঠামো থাকছে ১০ মিটার উঁচুতে। বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সর্বোচ্চ উচ্চতার জলোচ্ছ¡াসের কথা মাথায় রেখে এর ডিজাইন করা হয়েছে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ৭ মিটার উচ্চতার জলোচ্ছ¡াস হয়েছিল। বাঁধের উচ্চতা থাকছে তার দ্বিগুণ।
নসরুল হামিদ আরো বলেন, আগামীতে কয়লার পরিবর্তে এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও হতে পারে। আমরা এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখানে এলএনজি টার্মিনাল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিশেষজ্ঞ টিম পরিদর্শন করে গেছেন, খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে। কাজ শুরু থেকে ৪ বছরের মতো সময় লাগবে। বড় মজুতের ব্যবস্থা রাখা হবে। যাতে আপৎকালীন সময়ে ব্যবহার করা যায়।
প্রসঙ্গত, জাপানের আর্থিক সহায়তায় মহেশখালীর মাতারবাড়ি এলাকায় ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় সরকার। ২০১৪ সালের ১৬ জুন বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার মধ্যে ঋণচুক্তি হয়। ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি ৩ লাখ টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে দেবে জাইকা, অবশিষ্ট ৭ হাজার ৯৩৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকার ও সিপিজিসিবিএলের নিজস্ব তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। আপাত দৃষ্টিতে প্রকল্প ব্যয় বিপুল পরিমাণ মনে হলেও এতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাইরে অনেক বিষয় রয়েছে। নিজস্ব চ্যানেল খনন করা, কয়লার পাশাপাশি তেল, গ্যাস খালাস ও মজুতের ব্যবস্থা থাকছে এখানে। রয়েছে আমদানি-রপ্তানির উপযোগী গভীর সমুদ্রবন্দর। এটি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। যার বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায় সরকার।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, একে বহুমুখী প্রকল্প বলাই যুক্তিযুক্ত হবে। প্রকল্পের আওতায় আমদানিকৃত কয়লা লোড-আনলোড জেটি, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, টাউনশিপ নির্মাণ, স্থানীয় এলাকায় বিদ্যুতায়ন, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। ল্যান্ডবেজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য জায়গা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ওই প্রকল্পের খাতে ১০ হাজার কোটি টাকা চলে যাবে। এভাবে আরো অনেক খাতে ঋণ ভাগ হয়ে যাবে। জাপানের সুমিতোমো কর্পোরেশন, তোশিবা কর্পোরেশন ও আইএইচআই কর্পোরেশনের কনসোর্টিয়াম মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ইপিসি ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়