নিউমার্কেটে সংঘর্ষ : তিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল পেছাল

আগের সংবাদ

নামমাত্র প্রস্তুতিতে পাঠদান : বই পায়নি অনেক শিক্ষার্থী > বই, সহায়িকা ছাড়াই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ > নোট-গাইড ছাপার তোড়জোড়

পরের সংবাদ

ডিসিসিআই সভাপতি : মুদ্রানীতির বাস্তবায়নে ঘুরে দাঁড়াবে আর্থিক খাত

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় পর্বের (জানুয়ারি-জুন) সদ্যঘোষিত মুদ্রানীতির কঠোর বাস্তবায়নই বেসরকারি ও আর্থিক খাতকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার। তিনি বলেছেন, মুদ্রানীতির মূল্য লক্ষ্য মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বৈদেশিক মুদ্রার র্রিজার্ভ স্থিতিশীল করা। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।
নতুন মুদ্রানীতি নিয়ে ঢাকা চেম্বার সভাপতি বলেন, চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন মেয়াদের জন্য সরকারি ঋণের প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ, যা অর্থবছরের জুন-ডিসেম্বর মেয়াদে ছিল ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ। সরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা বেসরকারি খাতে নতুন ঋণপ্রবাহ ও বিনিয়োগকে সংকুচিত করতে পারে। সরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমানোর লক্ষ্যে সরকারকে সুশাসন নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং পাশাপাশি সরকারি ব্যয় হ্রাস করতে হবে। এছাড়াও উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের মধ্যে সরকারকে অপরিহার্য প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
ব্যারিস্টার সাত্তার বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় ভোক্তা পর্যায়ে ঋণের সুদহারের সীমা শিথিলকরণের প্রস্তাব এবং সঞ্চয়ের ওপর সুদহারের সীমা প্রত্যাহার করার ফলে ব্যাংকিং খাতে সঞ্চয় ও তারল্য বাড়বে।
বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ ক্রমান্বয়ে বাজারভিত্তিক এবং একক বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার চালু করার প্রত্যাশায় ব্যারিস্টার সাত্তার স্বস্তি প্রকাশ করেন। বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থপাচার রোধে এলসির মাধ্যমে আমদানি ব্যয় মেটানোর পূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি জোরদার করার সিদ্ধান্তকে তিনি স্বাগত জানান।
এছাড়াও যেসব এলসির দাম ৩০ লাখ ডলারের বেশি সেগুলোকে তদন্তপূর্বক পরিশোধ করা গেলে তা অর্থপাচার রোধে সহায়ক হবে বলে মনে করেন ব্যারিস্টার সাত্তার। তবে বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে তিনি প্রস্তাব করেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি মার্জিনের শর্তাবলি শিথিল করতে হবে এবং মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে এলসি মার্জিনের শর্তাবলি শিথিল করলে তা স্থানীয় ও রপ্তানিমুখী শিল্পের উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতিতে সিএমএসএমই সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চিহ্নিত করা হয়েছে। কৃষি, সিএমএসএমই এবং আমদানি বিকল্প শিল্প খাত যেন সহজ শর্তে ঋণ গ্রহণপূর্বক বিনিয়োগ করতে পারে সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৫০ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করাকে ডিসিসিআই সভাপতি স্বাগত জানান। এ সিদ্ধান্ত সিএমএসএমইর দ্রুত পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করবে বলে মনে করেন তিনি।
ব্যারিস্টার সাত্তার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, নন-পারফর্মিং লোন নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক আরো কিছু গঠনমূলক পদক্ষেপ নেবে। কারণ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য নন-পারফর্মিং লোন কমানো ও সুশাসন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। কিভাবে নন-পারফর্মিং লোন কার্যকরভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরো সুনির্দিষ্ট এবং স্পষ্ট নির্দেশনা থাকলে তা মুদ্রানীতির জন্য সহায়ক হতো।
যেহেতু ক্রমবর্ধমান নন-পারফর্মিং লোন বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ এবং প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে সে কারণে তিনি নন-পারফর্মিং লোনের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককে বিশেষভাবে বিবেচেনা করার ওপর তাগিদ দেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক অভ্যাসগত ঋণখেলাপি হওয়ার নির্দিষ্ট কারণগুলো চিহ্নিত করতে পারে এবং তা পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে বিদ্যমান মামলাগুলোর ব্যাকলগ কমাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কাজ করতে পারে। এর পাশাপাশি তিনি কার্যকরভাবে এডিআর পদ্ধতি চালু করতে বিদ্যমান আইনগুলোর দ্রুত সংস্কারের প্রস্তাব করেন।
বৃহৎ ও খেলাপি ঋণ কমানোর স্বার্থে প্রতিনিয়ত নজরদারির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘স্পেশাল মনিটরিং সেল’ গঠন করার সিদ্ধান্তকে ব্যারিস্টার সাত্তার একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে মনে করেন। প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমাদানের বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার, স্থানীয় ব্যাংকের ফি গ্রহণ না করা এবং উত্তোলনপূর্ব অনুমোদন না রাখার ব্যবস্থাকে তিনি স্বাগত জানান।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ঘোষিত নতুনি মুদ্রানীতিতে বিদ্যমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বেশ কিছু ইতিবাচক দিক-নির্দেশনা রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নজরদারির মাধ্যমে একটি সময়োপযোগী বাস্তবায়ন কৌশল মুদ্রাবাজার ও অর্থনীতির মূল লক্ষ্য অর্জন করতে পারে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) দ্বিতীয়ার্ধের জন্য গতকাল রোববার সামঞ্জস্যপূর্ণ মুদ্রানীতি (এমপিএস) ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয়ে এমপিএস ঘোষণাকালে গভর্নর ড. আবদুর রউফ তালুকদার বলেছেন, এ মেয়াদের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতি ও ঋণ কর্মসূচি মুদ্রাস্ফীতি ও বিনিময় হারের চাপ রোধ, কাঙ্খিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি লাভে সহায়তা, অর্থনীতির উৎপাদনশীল ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ডে-প্রয়োজনীয় তহবিলের প্রবাহ নিশ্চিত করতে সতর্কতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতিগত অবস্থান বজায় রাখবে।
নতুন নীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ১ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে এবং পাবলিক ক্রেডিট প্রবৃদ্ধির সীমা জুনে আগের সর্বোচ্চ সীমা ৩৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে।
গর্ভনর বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ, চীনের শূন্য কোভিড নীতি, ইউরোপে জ্বালানি ঘাটতি, যুক্তরাষ্ট্রে রক্ষণশীলতা এবং উন্নয়নশীল দেশে ঋণের বোঝা আকাশচুম্বী হওয়ায় বিশ্ব অর্থনীতি জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়