রাষ্ট্রপতির ভাষণের আলোচনায় এমপিরা : শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ফের ক্ষমতায় আসার প্রত্যয়

আগের সংবাদ

বরিশালে ড্রেজিং করা বালু ফের নদীতে, খোয়া যাচ্ছে টাকা!

পরের সংবাদ

ভিউ বাণিজ্যে আটকে নাটক : কী ভাবছেন তরুণ নির্মাতারা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

একসময় বাংলা নাটক ছিল বাঙালির বিনোদনের খোরাক। তখন নিয়মিত তৈরি হতো পারিবারিক গল্পের নাটক। সময়ের পালা বদলে পাল্টে গেছে নাটকের চিত্রও। ভিউ বাণিজ্যের কারণে নিয়মিত তৈরি হচ্ছে অসামাজিক গল্প ও সংলাপনির্ভর সব নাটক। যার বেশির ভাগ নাটকই এখন আর পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেখার উপযোগী নয়। দর্শকদের জন্য কি পরিচালকদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই? এ বিষয়ে কী ভাবছেন তরুণ নাট্য নির্মাতারা? কথা বলেছেন সোহানুর রহমান সোহাগ

দীপু হাজরা
এখন সবাই নাটক পরিচালনা করছে। যাদের পরিচালনা সম্পর্কে বিন্দুমাত্রও অভিজ্ঞতা নেই, তারাও ইউটিউব ও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের নাট্য নির্মাতা। নির্মাণ করছেন নিয়মিত। তাদের নাটকের নামই থাকে ভিন্ন রকম। যেগুলো শুধু ভিউ বাণিজ্যের জন্যই তৈরি। আগের সময়গুলোতে যারা পরিচালনা করত, তাদের পরিচালনাবিষয়ক জ্ঞান ছিল, এখন সেটা নেই। দর্শকদের প্রতি পরিচালকদের দায়বদ্ধতা থাকে। পরিচালকদের উচিত পারিবারিক ঘরানার নাটক তৈরি করা। নিজেদের মধ্যে সেন্সর তৈরি করা। পরিচালকরা যদি তাদের পরিবার, শিশু, বাবা-মা নিয়ে নাটকটি দেখতে পারে, তখনই সেটাতে কাজ করা উচিত। আর পরিচালক সংগঠনেরও এ বিষয়ে নজরদারি করা দরকার, যাতে অসামাজিক নাটক না তৈরি হয়। এর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

আবু হায়াত মাহমুদ
সব নাটকই অসামাজিক বলা যাবে না। তবে যারা ভিউনির্ভর কাজগুলো করছে, তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যবসা। আর আপনি যখন শুধু ব্যবসার কথা চিন্তা করবেন, তখন ওই কাজটি সমাজে কী প্রভাব ফেলবে, সেটা নিয়ে কেউ ভাবে না। আর গালাগাল চর্চাটা পজেটিভ না আমার কাছে। গল্পে প্রয়োজন হলে সেটি ব্যবহার হতেই পারে, তবে আমরা অপ্রয়োজনে সেটা ব্যবহার করছি। আমরা পরিবার নিয়ে এখনো ভারতীয় সিরিয়াল কিন্তু দেখছি। ওদের এসবের প্রয়োজন হয় না। তার মানে আমরাই দর্শককে ধরে রাখতে পারছি না অথবা সেটিকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। একজন নির্মাতা শুধু ব্যবসার জন্য নাটক বানালে চলবে না। সে কিন্তু একজন শিল্পীও। সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতা আছে। তার একটি কাজ সমাজে পজেটিভ ইম্প্যাক্ট ফেলতে পারে। আবার একটি কুরুচিপূর্ণ কাজ সামাজিক অবক্ষয়েও ভূমিকা রাখতে পারে। সুতরাং যে শিল্পী সে ভালো মেসেজ দিবে সমাজকে। যার মধ্যে দায়বদ্ধতা নেই, সে শুধু তার ব্যবসার কথা চিন্তা করবে। এটা একজন অপরাধীর চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। সব থেকে উত্তরণের একটাই পথ নীতিনির্ধারকদের কঠোর হওয়া। যেমন টিভি চ্যানেল, তথ্য মন্ত্রণালয়, নাটক-সিনেমাসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকে কঠোর হতে হবে। এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যা সমাজে নেগেটিভ বার্তা দেয়। তবেই হয়তো আবার সেই সোনালি নাটকের সময় ফিরবে।

সহিদ উন নবী
পরিচালকদের দায়বদ্ধতা আছে দর্শকদের প্রতি। কিন্তু এখন দর্শকদের চাহিদা এসব নাটকে, তাই পরিচালকরা এসব নাটক নির্মাণ করে। এখন নাটক শুধু বিনোদনের খোরাক নেই, ব্যবসারও একটি অংশ হয়ে গেছে। সুতরাং যে কোনো জায়গায় যখন ব্যবসা ঢুকে যায়, তখন এমনিতেই সেটা সেই জায়গা থেকে দূরে চলে যায়। দর্শকদের আরও সচেতন হতে হবে, পাশাপাশি পরিচালকরাও তখন দর্শকদের চাহিদা অনুযায়ী নাটক বানাবে। এখন ঘরে ঘরে নির্মাতা, ফলে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে এসব নির্মাতা নিয়মিত এসব কাজ করছে। সবাই সংঘবদ্ধভাবে সচেতন হলেই এই অবস্থার পরিবর্তন আনা সম্ভব। তাছাড়া সম্ভব না।
আশরাফুজ্জামান
দর্শকদের দায়বদ্ধতা অবশ্যই আছে। সেটা শুধু নাট্য পরিচালকদের না। সব পেশার মানুষেরই সমাজের প্রতি, দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে এবং থাকা উচিত। এখন এই দায়বদ্ধতার বিষয়টিকে কে কীভাবে দেখেন, সেটা হলো বিবেচনার বিষয়। নাটকে গালাগাল এবং অসামাজিক বিষয় থাকা, না থাকার ব্যাপারটাও একেকজন একেকভাবে দেখছেন। তবে আমি মনে করি, পুরো বিষয়টা নির্ভর করে নাট্যকার এবং নির্মাতার রুচি এবং শিল্প চিন্তার ওপর। গল্পের প্রয়োজনে শিল্প সাহিত্যে অনেক কিছু দেখানো বা বলাও যেতে পারে, কিন্তু গালাগাল এবং অসামাজিক দৃশ্য দেখানো যখন বড় হয়ে ওঠে, তখন সেটা আর শিল্পের জায়গায় থাকে না। আর যেটা শিল্প নয়, সেটা নিয়ে আলোচনা করারও কিছু নেই। মাঝে মাঝে মনে হয়, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েই হয়তো আমরা নিজের অজান্তে এগুলোকে প্রমোট করে ফেলি। নির্মাতা হিসেবে দর্শকদের রুচির পেছনে না ছুটে বরং তাদের রুচি তৈরি করার চেষ্টা করা উচিত। এ বিষয়ে নাট্যকার, নির্মাতার চেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন যারা শিল্পে পৃষ্ঠপোষকতা করেন তারা। আবার শিল্পের সঙ্গে যেহেতু অর্থনীতি জড়িত, সেহেতু একজন পৃষ্ঠপোষক যে ধরনের কনটেন্ট বানালে বিনিয়োগ নিরাপদ থাকবে, সে ধরনের কনটেন্ট বানাতে বেশি আগ্রহী হতে পারেন। এখন এসব কিছুকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার অন্যতম উপায় হলো এই সেক্টরের সঙ্গে জড়িত সবার শিল্প চিন্তাকে উন্নত করা। তাহলে সবকিছুই পরিমিত পর্যায়ে থাকবে বলে আমার বিশ্বাস।

রাফাত মজুমদার রিংকু
দর্শকদের প্রতি পরিচালকদের দায়বদ্ধতা আছে। আগে বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণ ভালো ভালো কাজ নির্মাণ হতো। এখনো হচ্ছে, তবে পরিবর্তন হয়েছে দর্শকদের রুচির। পরিচালকদের কাছে দর্শকরা যেমন কাজ চেয়ে থাকে, তারা সেরকম কাজই নির্মাণ করে। তবে এর বাইরেও এখন নাটক নিয়ে ব্যবসা হচ্ছে, যার কারণে এরকম নাম ও অসামাজিক নাটক তৈরি হচ্ছে। তাছাড়া এখন সবাই নির্মাতা, ফলে সবাইকে তো থামানো সম্ভব নয়। তাই দর্শকদেরও চাহিদার পরিবর্তন করতে হবে। দর্শকরা তাদের চাহিদার পরিবর্তন করলেই এসব নাটক আর তৈরি হবে না। সংশ্লিষ্টদেরও এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, তবেই আবার তৈরি হবে আগের মতো সব নাটক। উত্তরণের সব থেকে বড় পন্থা পরিচালক ও দর্শকদের চাহিদার পরিবর্তন আনা।

সীমান্ত সজল
নাট্য পরিচালকদের দর্শকদের প্রতি অবশ্যই দায়বদ্ধতা আছে। কিন্তু বর্তমান অস্থিরতার মাঝে ব্যাঙের ছাতার মতো মৌসুমি কিছু পরিচালক শুধু টাকা কামাই করার সহজ পন্থা অবলম্বন করে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও নৈতিক দায়িত্ব-কর্তব্যের কথা ভুলে গিয়ে যেমন খুশি তেমন নাটক তৈরি করে যাচ্ছে একের পর এক। এতে দর্শকদের সাময়িক সস্তা বিনোদন দিয়ে বিনোদিত করে ভিউ বাণিজ্য করার ধান্দায় লিপ্ত আছে। কিন্তু আদতে এগুলো আসলে নাটক নয়। এগুলো নাটক না হয়ে হচ্ছে ফাটক। আর তাই ফাটল ধরছে আমাদের মূল ধারার সুস্থ সামাজিক নাটক নির্মাণ পেশায়। সামাজিক মাধ্যমগুলোর অপব্যবহার রোধ করতে হবে, পাশাপাশি দর্শকদের চাহিদারও পরিবর্তন আবশ্যক। নির্মাতাদের আরও সচেতন হওয়া উচিত। নির্মাতাদের উচিত অন্যকে একটা গল্প বলার আগে সেটা দর্শক হিসেবে তার কাছে কাজটা কেমন লাগবে তা ভাবা। এমনটা যদি হয়, তবেই হয়তো এখান থেকে উত্তরণ সম্ভব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়