কাগজ প্রতিবেদক : বিএনপির নেতৃত্বে সমমনা দলগুলোর সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো যে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করে, তাতে জনগণ সাড়া দেয়নি। গণঅবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশের স্বাধীনতা বাঁচবে না। দেশবিরোধী কোনও শক্তি আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। মাথাচাড়া দিলে কঠোরভাবে দমন করা হবে। আবারো রাজপথ উত্তপ্ত করতে চাইলে বিএনপি- জামায়াতকে রাজপথেই প্রতিহত করা হবে।
গতকাল বুধবার বিএনপির নেতৃত্বে যুগপৎভাবে গণঅবস্থানের দিন রাজধানীর পাঁচটি এলাকায় সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ-উত্তর, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ। এসব সমাবেশে বিএনপির প্রতি এমন কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন ক্ষমতাসীনরা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা। ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফির সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
সমাবেশে বিএনপির আন্দোলনকে ভুয়া উল্লেখ করে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ৫৪টি দল আজকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাদের অবস্থানে কী হবে? ঘোড়ার ডিম পাড়বে। ৫৪টা ঘোড়ার ডিম পারবে ৫৪টি বিরোধী রাজনৈতিক দল। তিনি বলেন, ১২ দলীয় জোট দেখলাম বিজয় নগরে সমাবেশ করছে, সব মিলিয়ে ২৪ জন। ৭ দলীয় জোট প্রেস ক্লাবের সামনে চেয়ার পেতে বসে আছে, মঞ্চে ২০ জন সামনে সাংবাদিকসহ আরো ১৫ জন। ১টা পর্যন্ত ৩ দল উপস্থিত ছিল, চার দল নেই। ৭ দলীয় ঐক্যজোট, তারপর সমমনা ১২ দল বিএনপির সমমনারা দেখলাম ওই এলাকাজুড়েই আছে। তারা বসে আছে ফুটপাতের ওপর, মঞ্চও সেটা, শ্রোতাও সেখানেই, সবাই ফুটপাতকেন্দ্রিক। তারপরে এলডিপি দেখলাম, সেই একই দৃশ্যপট, কয়েকজন হাতেগোনা বসে আছে। ভুয়া। ভুয়া। ভুয়া। এটা গরুর হাট। মন্ত্রী বলেন, যারা দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়েছে, তারা নাকি দেশ মেরামত করবে। দেশ মেরামত তো করেন শেখ হাসিনা। বিএনপি গণতন্ত্রের বস্ত্র হরণ করবে। তাদের হাতে আমরা দেশকে ছেড়ে দিতে পারি না। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, যারা স্বাধীনতাকে নিয়ে শেখ হাসিনার উন্নয়নকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করবে তাদের রাজপথে দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটের মাধ্যমে পঞ্চমবারের মতো শেখ হাসিনাকে আবারো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করব। বিএনপি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করছে দাবি করে কামরুল ইসলাম বলেন, তারা অনির্বাচিত সরকার চায়। তাদের প্রতিহত করা হবে। তারা নির্বাচনে এলে ভালো। না এলে কোনো আন্দোলন করে লাভ হবে না, আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানো যাবে না। বাংলাদেশে কোনো অপশক্তির জায়গা হবে না উল্লেখ করে আবদুর রহমান বলেন, বিএনপির সঙ্গে দেশের জনগণ নেই, তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা হলো সাম্প্রদায়িক অপশক্তি।
মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, বিএনপি গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। তারাই এখন আবার গণতন্ত্র উদ্ধারে আন্দোলনে নেমেছে। বাংলাদেশের মাটিতে রাজাকার আলবদররা আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে নানা। আবারো রাজপথ উত্তপ্ত করতে চাইলে বিএনপি-জামায়াতকে রাজপথেই প্রতিহত করা হবে।
ডা. দীপু মনি বলেন, আসুন জাতির পিতার সোনার বাংলার স্বপ্নকে বুকে নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে অপশক্তিকে প্রতিহত করি।
এদিকে, রাজধানীর ফার্মগেটে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সমাবেশে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ প্রমুখ। মিরপুরের শাহ আলী মাজারের পাশে সমাবেশ করছে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা। আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচির সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আরো বক্তব্য রাখেন- দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আগা খান মিন্টু প্রমুখ।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ আর রাজধানীর শাহবাগে সমাবেশ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।