ঢাকা-ওয়াশিংটন : রোহিঙ্গা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা

আগের সংবাদ

একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি : শিক্ষার্থী পায়নি ২০০ প্রতিষ্ঠান

পরের সংবাদ

শীতে নতুন আপদ নিপা ভাইরাস : রস পানে যেতে পারে জীবন > কাঁচা রস পান না করার পরামর্শ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সেবিকা দেবনাথ : কাঁচা খেজুরের রস পানের মাধ্যমে হতে পারে নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ। এ বিষয়ে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ সতর্ক করলেও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘটা করে করা হচ্ছে রস উৎসব। এসব আয়োজনে উপস্থিত থাকছেন সরকারের মন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। এর ফলে সরকারের মূল বার্তা পৌঁছায় না সাধারণ মানুষের কাছে। বরং রস পানে উৎসাহিত হয়।
চলতি মাসের ৬ তারিখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় অনুষ্ঠিত হয় ‘১২তম রস উৎসব ও লোকশিল্পী সম্মাননা’ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যান্ত্রিকতার এ নগরীতে এখন খেজুর রসেও ভেজাল দেখা দিয়েছে। তাছাড়া কাঁচা খেজুর রস খাওয়ার মাধ্যমে নিপা ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটছে। সে বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে।’ তবে অনুষ্ঠানে অতিথিরা কাঁচা রস পান করেন।
১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ার ‘সুঙ্গাই নিপা’ গ্রামে প্রথম এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়। গবেষণায় দেখা যায় শূকর থেকেই নিপা ভাইরাস ছড়িয়েছে। ২০১৮ সালে ভারতের কেরালায় এই ভাইরাসের প্রকোপে ১১ জন প্রাণ হারান। ভাইরাসটি আবিষ্কার করেন ড. কো বিং চুয়া। এই ভাইরাস বাংলাদেশে শনাক্ত হয় ২০০১ সালে। আইসিডিডিআর,বি আক্রান্ত এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নিশ্চিত হয় যে, বাদুড়ই নিপা ভাইরাস খেজুরের রসে ছড়িয়ে দিয়েছে। খেজুরের রসের হাঁড়িতে বাদুড়ের মল লেগে থাকতে দেখা যায়। এখন পর্যন্ত নিপার সংক্রমণ নওগাঁ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, রংপুরসহ দেশের ৩১টি জেলায় দেখা গেছে। নিপা ভাইরাস সংক্রমণ ও এর প্রাদুর্ভাব শীতকালীন জনস্বাস্থ্যসংক্রান্ত একটি সমস্যা। এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) আজ বুধবার এক সেমিনারের আয়োজন করেছে।
নিপা ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়- এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিপা ভাইরাস ছড়ায় মূলত পশুপাখি বিশেষ করে বাদুড়ের মাধ্যমে। বাংলাদেশে সাধারণত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এই সময়টাতেই খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়। আর গাছে বাঁধা হাঁড়ি থেকে বাদুড় রস খাওয়ার চেষ্টা করে বলে ওই রসের সঙ্গে তাদের লালা মিশে যায়। সেই বাদুড় নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকলে এবং সেই রস খেলে, মানুষের মধ্যেও এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া বাদুড়ের খাওয়া ফলমূলের অংশ খেলেও রোগ ছড়াতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, নিপা? ভাইরাস প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। পরে সেটি মানুষে মানুষে সংক্রমিত হয়ে থাকে। রোগতত্ত্ববিদরা বলছেন, কাঁচা রস পান করা মোটেও নিরাপদ নয়। এক্ষেত্রে রসটি ফুটিয়ে খেলে ঝুঁকিমুক্ত থাকা সম্ভব। রস সংগ্রহের পর আগুনে ৭০ থেকে ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপে কিছু উত্তপ্ত করলেই ভাইরাস মরে যায়। ইমেরিটাস অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে খেজুরের রস। কিন্তু এ রস পান নিয়ে এখনই যথেষ্ট সচেতন ও সাবধান হতে হবে। এছাড়া কোনো অবস্থাতেই কাঁচা খেজুরের রস পান করা যাবে না। কারণ এ রসের সঙ্গে নিপা ভাইরাসের অনেকটাই সম্পৃক্ততা রয়েছে। যেহেতু এই রোগের কোনো টিকা এখনো আবিষ্কার হয়নি। তাই সাবধানতা অবলম্বন করা খুবই জরুরি।
কাঁচা রস খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, নিপা ভাইরাসে যদিও কম সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হয় কিন্তু যারা এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয় তাদের মধ্যে অন্তত ৭০ শতাংশের মৃত্যু ঘটে। কখনো কখনো শতভাগেরই মৃত্যু হয়। কাঁচা রস পানের অভ্যাস বদলানো দরকার। এই পরিস্থিতির জন্য আমরাই দায়ী। জঙ্গল ও গাছপালা আমরা কেটে ফেলছি। বাদুরসহ অনান্য প্রাণী তাদের খাবার পাচ্ছে না। এখন তারা লোকালয়ে চলে আসছে। বন উজার করার কারণে প্রাণীবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যাচ্ছে। নিপা হচ্ছে এমন একটি ভাইরাস যা মহামারী ঘটাতে সক্ষম। তাই আমাদের সতর্ক হতে হবে।
ঘটা করে রস মেলা বা রস উৎসব উদযাপন প্রসঙ্গে এই রোগতত্ত্ববিদ বলেন, এগুলো খুবই দুঃখজনক। আয়োজকরা নিপার বিষয়টিকে একেবারেই গা করছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আমি কয়েকবারই ফোন করে এ ধরনের আয়োজন বন্ধ করার সুপারিশ করেছি। এক্ষেত্রে তাদের বক্তব্য ছিল- তারা তাদের রসের হাড়ি ঢেকে রাখেন। কিন্তু আইসিডিডিআর,বির গবেষকরা গোপন ক্যামেরার মাধ্যমে দেখেছেন যে, রসের হাড়ির চারপাশ জাল বা এমন স্যাপ স্কার্ট দিয়ে ঢেলে দিলেও বাদুর কলসির মুখ বরাবর প্র¯্রাব করে। ওই বেড়া দিয়ে বাদুড়ের রস খাওয়া প্রতিরোধ করা গেলেও ওই প্র¯্রাবের প্রবেশ ঠেকানো যায় না। ফলে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়