ইউনেসকোর প্রতিবেদন : দেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ ভাগ বহন করে পরিবার

আগের সংবাদ

তীব্র শীতে জবুথবু জনজীবন

পরের সংবাদ

ফিরে দেখা ২০২২ : জনস্বার্থে ১০ রায় উচ্চ আদালতের

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আয়েন উদ্দীন : ২০২২ সালের উচ্চ আদলতকে মানুষ কেন মনে রাখবে। উত্তরটা দেয়া যায় এভাবে, উচ্চ আদালতে রায়ের কাছে হাজার বছর পরেও ফিরে আসে বিচারপ্রার্থীরা। কেননা একটি রায় যুগ যুগ ধরে মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথকে সুগম করে। পরবর্তীতে কোনো জটিল মামলা সমাধানে তা ‘নজির’ হিসেবে ব্যবহার করেন আইনবিদরা। তাই ২০২২ সালের উচ্চ আদালতকে মানুষের মনে রাখারও অনেক ঘটনা আছে। এ রকম ১০টি ঘটনা আলোচনায় আসে।
‘আপনারা কি রেলকে গিলে খেতে চাইছেন?’ : বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা নিয়ে একাই আন্দোলনে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। বিষয়টি হাইকোর্ট নজরে নেয়। উচ্চ আদালতের বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার গত ২০ জুলাই দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খানকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন- একজন শিক্ষার্থী হাতকড়া পরা অবস্থায় রেলের সিন্ডিকেট দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে, এটা দুদক জানে কিনা। জানলে দুদকের কোনো ব্যবস্থা আছে কিনা, থাকলে কোর্টে জানাতে বলেছে। পরে ২১ জুলাই রেলওয়ের দুই কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিচালক (অপারেশন) এএম সালাহউদ্দীন ও পরিচালক ট্রাফিক (বাণিজ্য) মো. নাহিদ হাসান খান এবং সহজ ডটকমের কর্মকর্তা যুবায়ের হোসেন উচ্চ আদালতে উপস্থিত হয়। তখন আদালত বলেন, আপনারা কি রেলকে গিলে খেতে চাইছেন? রেলে এত অব্যবস্থাপনা কেন থাকবে? কেন টিকিটে কালোবাজারি হবে? কেন মানুষ ট্রেনের ছাদে যাবে? আপনারা কি রেলকে গ্রাস করতে চাইছেন? হাইকোর্টের এই মন্তব্য রনির আন্দোলনকে আরো বেগবান করে।
‘কুমারি’ শব্দ বাতিল : কাবিননামার উল্লেখ থাকা ‘কুমারি’ শব্দটি সংবিধান পরিপন্থী এবং তা বাতিল ঘোষণা করে গত ১৭ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।
মোমবাতির আলোয় বিচারকাজ : জাতীয় গ্রিডে গত ৪ অক্টোবর বিপর্যয় দেখা দেয়। ফলে রাজধানীসহ প্রায় সারা দেশ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। এর প্রভাব পড়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টেও। তবে বিদ্যুৎ নাই বলে থেমে ছিল না উচ্চ আদালতের বিচারকাজ। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে এজলাস কক্ষে মোমবাতি জ্বালিয়ে ও মোবাইলের আলোয় বিচারকাজ পরিচালনা করেছেন বিচারপতিরা। যা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত ও প্রশংসিত হয়।
জাপানি মা : বাবা বাংলাদেশি ইমরান শরীফ আর জাপানি মা নাকানো এরিকো। তাদের দুই শিশু জেসমিন ও লাইলা কার কাছে থাকবে সেই দ্ব›দ্ব সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। শিশুর অধিকার নিয়ে স্বামী-স্ত্রী যুদ্ধ হাইকোর্টের কল্যাণে গণমাধ্যমে খুবই আলোচিত। তবে এখনো মীমাংস হয়নি ঘটনাটি।
চেক ডিজঅনার মামলা : ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চেক প্রত্যাখ্যানের ঘটনায় মামলা করতে পারবে না কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান। হাইকোর্ট যুগান্তরকারী এই রায় দেন গত ২৩ নভেম্বর। রায়ে বলা হয়, তবে অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর বিধান অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করা যাবে। ঋণ আদায়ে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা সরাসরি খারিজ করে সেগুলো অর্থঋণ আদালতে পাঠিয়ে দিতেও বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেয়া হয় ওই রায়ে।
তরুণীকে কানাডা সরকারের হাতে তুলে দেয়া : রাজধানীর উত্তর মুগদায় ১০ মাস ধরে বাবা-মায়ের বাসায় গৃহবন্দি ছিলেন ১৯ বছরের কানাডিয়ান এক তরুণী। তার মা-বাবা বাংলাদেশের অধিবাসী। তরুণীর আবেদনের ভিত্তিতে ১৭ এপ্রিল তাকে দেশটির সরকারের হাতে তুলে দেয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিষয়টি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনায় ছিল।
সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতি : সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকারের পূর্বানুমতি নেয়ার বিধান বাতিল করে গত ২৫ আগস্ট হাইকোর্ট রায় দেন। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত থাকবে বলে আদেশে বলা হয়েছে।
সোর্স প্রকাশে বাধ্য নয় সাংবাদিক : কোনো সাংবাদিক তার সংবাদের তথ্যের সোর্স কারো কাছে প্রকাশ করতে বাধ্য নয় বলে রায় দেন হাইকোর্ট। যা গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য বছরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রায়। আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে দেয়া আছে। গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ ও গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
হাজী সেলিমের সাজা বহাল : অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে বিচারিক আদালতের দেয়া ১০ বছরের কারাদন্ড বহাল রেখে গত ৯ ফেব্রুয়ারি রায় প্রকাশ করে ৩০ দিনের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
শ্যাম-শর্মার ভালোবাসার জয় : শ্যাম সুন্দরের বয়স ২২ বছর, আর ১৯ বছরের তরুণী হেমা শর্মা। দুইজনের বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ। হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বিধিমালা ২০১৩-এর বিধি ২২(১)(ক) অনুযায়ী দু’জনের বিয়ে নিবন্ধিত হয়। হাইকোর্টে দায়ের করা রিটে এসব তথ্য প্রমাণ করে আইনানুযায়ী তারা স্বামী-স্ত্রী। কিন্তু মেয়ের মা ও মামারা তা মানতে নারাজ। বিয়ের পরদিন শ্যামের কাছ থেকে শর্মাকে কেড়ে নেয়া হয়। দীর্ঘদিন তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। এর মধ্যে শ্যাম জানতে পারে স্ত্রীকে বিদেশে পাঠাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন শর্মার পরিবার। ভিসাও করে ফেলছিলেন। স্ত্রীকে ফিরে পেতে নিরুপায় স্বামী হাইকোর্টে নালিশ (রিট) করেন। শুনানি শেষে আদালত হেমা শর্মাকে স্বামীর হাতে তুলে দেয়ার নির্দেশ দেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়