নাইক্ষ্যংছড়ি : ডিজিএফআই কর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় মামলা

আগের সংবাদ

তিন কারণে ভালো ফলাফল : সংক্ষিপ্ত সিলেবাস, প্রশ্নপত্রে সুবিধা ও সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের প্রভাবে পাসের হার বেড়েছে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায়

পরের সংবাদ

ওত

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আজ খুব ভোরেই ঘুম ভেঙে যায় শিউলির। ঘর থেকে বেরিয়ে আসতেই শিউলি দেখে একটা কালো বিড়াল পায়রাদের খোপের সামনে ওত পেতে বসে আছে। হুসহাস ভয় দেখানোর চেষ্টা করলেও বিড়ালটা সরলো না দেখে রাগ হলো শিউলির।
দুই মাস হলো সে সুন্দরবন সার্কাসে যোগ দিয়েছে। আগে সে আর তার চাচা ট্রেনে খেলা দেখাত। একদিন তার চাচার সঙ্গে সুন্দরবন সার্কাসের জোকার হাসনুর পরিচয় হয়। হাসনু তার চাচাকে বোঝায় যে এই ট্রেনে ট্রেনে দুজনের খেলা দেখানোর থেকে যদি তার ভাতিজি তাদের সার্কাস দলে যোগ দেয় তাহলে বেশি টাকা কামাতে পারবে।
এখন এই বয়স থেকে ট্রেনিং নিলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সে সুন্দরবন সার্কাসের হার্টথ্রব হয়ে যেতে পারবে। তার চাচা রাজি হয় মাস তিনেক পর পর চার হাজার টাকা পাঠানোর শর্তে। প্রথম প্রথম চাচাকে ছেড়ে এখানে থাকতে কষ্ট হলেও দলের অন্যান্য সদস্য সুইটি খালা, সাহারারানী খালা আর জোকার হাসনু মামাদের স্নেহময় সাহচর্যে দিনগুলো বেশ ভালোই কাটছে। শুধু তাদের কিছু ইয়ার্কি আর কথা- যার কিছু বোঝা যায় কিছু যায় না তা শুনে লজ্জায় পড়তে হয় শিউলির।
কাল রাতের অর্ধেক শো চলবার পর কোন একটা গোলমালে শো বন্ধ হয়ে যায়। রাতে অবশ্য শো চলার সময় ঘুমে শিউলির চোখ দুটো বার বার বন্ধ হয়ে আসে। শো বন্ধ হয়ে যাবার পর বিছানায় এলিয়ে পড়তেই এক ঘুমে রাত শেষ শিউলির। তারপর ভোরের আলোয় ঘুম ভেঙে যাবার পর টিনের ওই জানালাবিহীন ছোট্ট খুপরি ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে এসে কার্তিকের নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রাণ ভরে শ্বাস নেয়। হঠাৎ একটা হলুদ প্রজাপতি সদ্য ফুল আসা শিউলির শরীরের চারদিকে একটা ঘুরপাক খেয়ে কাছের নারিকেল গাছে গিয়ে বসে। শিউলি ছুটে গিয়ে প্রজাপতিটা ধরবার চেষ্টা করে কিন্তু প্রজাপতিটা নাগালের বাইরে চলে গেল।

২.
ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করে ওসি সাহেবের সঙ্গে দেখা করবার সুযোগ পায় সুন্দরবনের হর্তাকর্তা আজগর আলী। আজ তিন দিন হলো আবদুল্লাহ্পুর এসেছে তার দল। কাল রাতে প্রথম শো ছিল তাদের। ভালো টিকেটও বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু শো চলবার সময় থানার ওসি সাহেব এসে বন্ধ করে দিয়েছেন। এলাকার মুরুব্বিরা নাকি নালিশ করেছে যে, সার্কাসের মেয়েরা যে শরীরের বিভিন্ন কসরতের খেলা দেখায় তাতে এলাকার যুবসমাজের চরিত্র হনন হবে। আর সার্কাসের আড়ালে যে দেহব্যবসা ঘটে সেটা কে না জানে?
আজগর আলী খুব ভালো করেই জানে, যে কোনো জায়গায় দুই পয়সা করতে গেলে হালকা বিপদ আসবেই। টাকা এত সহজে ধরা দেয় না। আজগর আলী যে কোনো জায়গায় এসে তাই এলাকার কেষ্টবিষ্টুদের হাত করবার চেষ্টা করে, সেটা কখনো টাকা দিয়ে কখনোবা মাংস দিয়ে। ওসি সাহেবের বেলায়ও এর ব্যত্যয় ঘটত না। কিন্তু ওসি সাহেব দেশের বাড়ি গিয়েছিলেন, তাই আর সুযোগ হয়নি। আর কাল রাতে এই তল্লাটের রাঘববোয়াল জামিলুদ্দীন সাহেব মোসাহেব নিয়ে শো দেখতে এসেছিলেন। তাই ওসি সাহেব হয়তো ভাবলেন, সে ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাচ্ছে। তাছাড়া ওসি সাহেবকে আগে থেকে ধরলে তিনি ঠিকই মুরুব্বিদের বুঝিয়ে বলতে পারতেন তাদের দলের ব্যাপারে। তাদের দল মোটেও অত নোংরা না, এখানে খেলা প্রদর্শন হয়, শরীর নয় ইত্যাদি। ওসি সাহেবের গো ভাঙতে এখন ডাবল খেসারতি গুনতে হবে আর কি।
– আসøামালেকুম স্যার। ভেতরে লোকসানের ক্রোধটা চেপে মুখে সৌজন্য নিয়ে আসার চেষ্টা করল আজগর।
– আপনি সার্কাসের ম্যানেজার ওরফে মালিক আজগর না? ঠাণ্ডা গলায় জিজ্ঞেস করলেন ওসি সাহেব।
– জি স্যার, গরিবকে মনে রাখছেন এই অনেক। তা স্যার আছেন কেমন?
– আছি, তবে সর্দি বাধাইছি।
– আহা, এখন নতুন ঠাণ্ডা পড়তাছে, নিজের তো নিজেকেই একটু যতœ নেওন লাগব- নাকি স্যার? একলা থাকা লাগে যেহেতু। স্যার নাকি নতুন ল্যাপ বানাইতে দিছেন। তা শুধু ল্যাপে কি বিছানায় ওম আসবো স্যার? ওম আনবার জন্য যা লাগে আমি দিতে পারি, এতে সর্দিও কমবো, তাছাড়া ল্যাপ বানানোর জন্য যা খরচ সেটা করবার যদি সুযোগ দিতেন স্যার… আন্তরিকভাবে কথাগুলো বলে টেবিলে একটা ভারী বাদামি প্যাকেট রাখে আজগর।
প্যাকেটটার ওপর সন্তোষের দৃষ্টি বুলিয়ে ওসি সাহেব বৈঠকি কায়দায় বললেন, সর্দি সারবার বিষয়টা কী যেন বলতাছিলেন, শুনছি কচি পেয়ারায় সর্দি সারে, আপনের কাছে কচি পেয়ারা থাকলে আজ সন্ধ্যায় আনেন, তারপর আপনের বিষয়টা দেখব।
কথাটা শুনে যেন ঈদের চাঁদ হাতে পেল আজগর। তাঁবুতে ফিরেই শিউলিকে সাজের তাড়া দেয় আজগর। সন্ধ্যার সময় বিশেষ আঁটসাঁট পোশাক, দাীি রুপটান আর বাহারি গয়নায় যেন হুরপরী দেখায় শিউলিকে।
হাসনু জোকার বলে, আজ শিউলির জীবনে প্রথম বাসর, দেখিস তোর ওপর আমাগে সবারই রুজিরুটি খাড়ায় আছে।
সুইটি বলে, ওরে এত টেনশন দিস না তো। শরীর হালকা রাখবি বুঝছোস শিউলি, ঐটা কেমন জানোয়ার কেডা জানে?
বাইরে থেকে আজগর তাড়া দেয়- কইরে শিউলি, তাড়াতাড়ি আয়। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় শিউলি দেখে কালো বিড়ালটা একটা ছোট্ট পায়রার গলা কামড়ে ধরেছে।

জাবিন তাসনীম খান
মালোপাড়া, মহিলা
কলেজ রোড, রাজশাহী

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়