মোজাম্মেল-প্রণয় সাক্ষাৎ : কলকাতার থিয়েটার রোডের সেই বাড়িটি চেয়েছে বাংলাদেশ

আগের সংবাদ

কাদের সঙ্গে ডায়লগ করব? মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন

পরের সংবাদ

পুঁজিবাজারসহ সব খাতেই বাড়ছে চাপ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সাম্প্রতিক সময়ে একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন ডলারের দাম বেড়েছে, যা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাঁচামালের খরচ বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে অপ্রত্যাশিতশিতভাবে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। এসব কারণে ব্যবসা উৎপাদন খরচ ও পরিচালনার ব্যয় বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটের কারণে অর্থনৈতিক মন্দার ভয় তারা করছে। একই সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতি ব্যবসায়ীদের আরো সতর্ক করে তুলেছে। এসব কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দেশি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দর কষাকষিতে একমত হতে পারছে না। এতে তাদের ব্যবসায় মন্দা বিরাজ করছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ৩০০টি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র উঠে এসেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১০টি কোম্পানি আগের বছরের প্রথম প্রান্তিকে ভালো করলেও চলতি অর্থ বছরের একই সময়ে মুনাফায় ভাটা পড়েছে।
সন্ধানী অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের এক গবেষণায় দেখা যায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ৩০টি প্রতিষ্ঠানের লোকসান বৃৃৃৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে নতুন করে ৩০টি কোম্পানি প্রথমবারের মতো লোকসানের সম্মুখীন হয়েছে। তবে প্রায় ১২২টি কোম্পানি দেশে এবং বিদেশে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও উচ্চ মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো কাজী ইকবাল বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পুরো বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় লোকসানের সম্মুখীন হলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। আমাদের দেশের ব্যবসা, বাণিজ্যও বৈশ্বিক সংকটের উত্তাপের মুখোমুখি হচ্ছে। দেশের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদা এবং সরবরাহ উভয় দিকেই বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।
এদিকে মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের বাজারে চাহিদা অব্যাহতভাবে কমছে। কারণ মানুষ ক্রয় করছে কম। মূল্যস্ফীতির কারণে ক্রেতাদের মধ্যে চাপ তৈরি হচ্ছে। গত আগস্ট মাসে দেশে এক দশকের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এসব কারণ একত্রিত হয়ে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে বড় আঘাত করেছে। বর্তমান বৈশ্বিক সংকটের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি চাপ তৈরি হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরো মন্থর হতে পারে এবং শিগগিরই এমন মন্থর পরিস্থিতি কেটে যাবে তারও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশে কাঁচামাল সরবরাহের ক্ষেত্রে উচ্চ মূল্য, একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত পণ্যের উচ্চ ঊর্ধ্বমুখী, মার্কিন ডলারের সংকট এবং স্থানীয়ভাবে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পাওয়াতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে অনেক বেশি। গত বছরের নভেম্বর থেকে সরকার পেট্রোলিয়াম পণ্যে ভর্তুকি কমানোর লক্ষ্যে ডিজেলের দাম দুবার বাড়িয়ে প্রতি লিটার ৬৫ টাকা থেকে ১০৯ টাকা নির্ধারণ করেছে। তথ্যে দেখা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ব্যাংকিং খাত তুলনামূলক ভালো করেছে। তবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে বৈদ্যুতিক, ইলেকট্রনিক, হোম অ্যাপ্লায়েন্স এবং বিমা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট রিজওয়ান রহমান বলেন জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে রপ্তানিনির্ভর কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। কারণ বিশ্ব অর্থনীতি। বিশেষ করে বাংলাদেশের রপ্তানির গন্তব্য দেশগুলোতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা যাচ্ছে। এতে এসব দেশে আমদানি পণ্যের চাহিদা কমেছে। ১৯ সদস্যের ইউরোজোনে মুদ্রাস্ফীতি সেপ্টেম্বরে ১০ শতাংশে বেড়েছে। যা এ যাবৎকালের মধ্যে রেকর্ড শুরু হওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ। সেপ্টেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৮.২ শতাংশ, যা ১৯৮০-এর দশকের পর সর্বোচ্চ স্তরের কাছাকাছি পৌঁছেছে।
ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) তথ্য বিশ্লেষণ এবং বাজার গবেষণা সংস্থা নিয়ে সম্প্রতি রিপোর্ট করেছে ব্লæমবার্গ। এতে বলা হয়েছে ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ইউরোপীয় (ইইউ) ভোক্তা দেশগুলো খাদ্যসহ দৈনন্দিন জিনিসের ওপর খরচ কমিয়ে দিচ্ছে। আর বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশেরও বেশি আসে ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি ৬.২৫ শতাংশ কমে হয়েছে ৩.৯ বিলিয়ন ডলার। ১৪ মাসের মধ্যে রপ্তানিতে প্রথম পতন।
এফএমসিজি (ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডস) কোম্পানি যারা স্থানীয় ভোক্তাদের সেবা দেয়। তারাও কম মুনাফা করেছে। কারণ তাদের অপারেশন খরচ বেড়েছে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে কাঁচামালের দাম বেড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত হ্রাসের মধ্যে এক বছর আগের তুলনায় সেপ্টেম্বরে আমেরিকান গ্রিনব্যাকে তার মূল্য কমপক্ষে ২৫ শতাংশ হারিয়েছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে বিমা খাত উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কারণ আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলার হার কমে গেছে। ডিসিসিআই প্রেসিডেন্ট এবং ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের একজন পরিচালক রিজওয়ান রহমান রহমান বলেন, এলসিতে বিমা কভারেজ প্রদান করা বিমাকারীদের আয়ের একটি প্রধান উৎস।
ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ, সিঙ্গার বাংলাদেশ, রানার অটোমোবাইলস, এসিআই লিমিটেড, ইফাদ অটোস এবং বারাকা পাওয়ারের মতো কিছু বড় কোম্পানি ২০২২-২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে লোকসান করেছে। এক বছর আগে একই সময়ে তারা মুনাফা করেছে।
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক আইটেম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন মুনাফা হ্রাসের জন্য যুদ্ধ, উচ্চ বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি, উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি, উচ্চ পরিবহন খরচ, বাজারের দুর্বল অবস্থা এবং স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নকে দায়ী করেছে।
দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংস্থা ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, সরকারের আমদানি কমানোর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত এবং ভোক্তাদের ব্যয় সংকোচনের কারণে সব ব্যবসাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়