অমিত শাহের আশ্বাস : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের পাশে থাকবে ভারত

আগের সংবাদ

বিশ্বকাপের বাঁশি বাজল কাতারে

পরের সংবাদ

মরুর বুকে বিশ্বকাপ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বকাপ ফুটবলের ২২তম আসরের আয়োজক দেশ কাতার। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের বড় টুর্নামেন্ট আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে দেশটি। কাতারের আবহাওয়া অধিকাংশ সময়েই শুষ্ক। তাই এটাই বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম টুর্নামেন্ট যা আয়োজিত হচ্ছে মরুভূমির দেশে।
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ২০১৮ এবং ২০২২ সালের ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথমিকভাবে ২০১৮ বিশ্বকাপের জন্য ১১টি আবেদনপত্র জমা হয়েছিল। সেখান থেকে ২০১৮ বিশ্বকাপের আয়োজনের দায়িত্ব পায় রাশিয়া। এরপর ২০২২ সালের ফিফা বিশ্বকাপের জন্য পাঁচটি আবেদনপত্র জমা পড়ে। যেখানে ছিল অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ফিফার ২২ সদস্যের নির্বাহী কমিটি ২০১০ সালের ২ ডিসেম্বর সুইজারল্যান্ডের জুরিখে উভয় আসরের আয়োজক নির্বাচনের জন্য ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। সেখানে চারপর্বের ভোটগ্রহণ শেষে কাতার ২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য চূড়ান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। প্রথমপর্বে কাতার ভোট পেয়েছিল ১১টি। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র পেয়েছিল ৩টি, দক্ষিণ কোরিয়া ৪টি, জাপান ৩টি এবং অস্ট্রেলিয়া ১টি। দ্বিতীয় পর্বে কাতার ১০টি, যুক্তরাষ্ট্র ৫টি, দক্ষিণ কোরিয়া ৫টি জাপান ২টি। তৃতীয় পর্বে কাতার ১১টি, যুক্তরাষ্ট্র ৬টি এবং দক্ষিণ কোরিয়া ৫টি ভোট পায়। সর্বশেষ চতুর্থ পর্বে কাতার ১৪টি ভোট পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। তাদের প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে যুক্তরাষ্ট পায় ৮টি ভোট। ফলে কাতার প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পায়। তবে কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার পর নিলামে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য দেশ এবং ফুটবলের মূল কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ফিফার নির্বাহী কমিটির সদস্যদের নিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ঘুস ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। তৎকালীন ফিফার সভাপতি ছিলেন সেপ ব্লাটার।
এর আগে ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো বিশ্বকাপ আয়োজন করলেও বিশ্বকাপ আয়োজনের দিক থেকে সবচেয়ে ছোট দেশ কাতার। পারস্য উপসাগরের একটি দেশ হলো কাতার। দেশটির দক্ষিণে সৌদি আরব আর এর পশ্চিমে দ্বীপরাষ্ট্র বাহরাইন অবস্থিত। আরব উপদ্বীপের মতো কাতারও একটি উত্তপ্ত এবং শুষ্ক মরু এলাকা। এখানে ভূ-পৃষ্ঠে কোনো জলাশয় নেই। শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে দেশটির প্রাণী ও উদ্ভিদের সংখ্যাও সামান্য। দেশটির বেশির ভাগ লোক রাজধানী দোহায় বসবাস করেন। দেশটিতে খনিজ তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের বড় মজুত আছে। সেই প্রাকৃতিক সম্পদের কারণেই দেশটির অর্থনীতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বর্তমানে মাথাপিছু আয়ের হিসেবে কাতার বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর একটি। কাতার এমন একটি দেশ যেখানে অধিকাংশ সময় আবহাওয়া থাকে শুষ্ক। তাই প্রথমবারের মতো মরুর দেশে আয়োজিত হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ। তবে খরচের দিক থেকে এটিই সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিশ্বকাপ। আয়োজকরা বলছে, এবারের ফিফা বিশ্বকাপে তারা ২২০ বিলিয়ন ডলার খরচ করছে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। ২০১৮ সালে রাশিয়া যে পরিমাণ খরচ করেছে, কাতার তার ২০ গুণ বেশি ব্যয় করছে। শুধু তাই নয়, ১৯৯৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৭টি বিশ্বকাপ আয়োজনে যত খরচ হয়েছে তার চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে কাতার বিশ্বকাপে। তবে এই খরচের পেছনে রয়েছে নানা কারণ। কাতার মূলত তেল উত্তোলন ও রপ্তানি করে বৈদেশিক মুনুফা অর্জন করে। ফুটবলের সঙ্গে তাদের তেমন সংশ্লিষ্টতা না থাকায় এই বাড়তি খরচ। বিশ্বকাপের জন্য অত্যাধুনিক নতুন ৮টি স্টেডিয়াম তৈরি করেছে কাতার। পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে অনুশীলনের মাঠ। এছাড়া ফুটবলার ও দর্শকদের নানা সুবিধা দিতে বিভিন্ন হোটেল ও পার্ক বিনোদন কেন্দ্রসহ অনেক কিছুই নির্মাণ করেছে দেশটি। এর আগে খরচের দিক থেকে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ছিল ব্রাজিল বিশ্বকাপ। ২০১৪ সালের সেই আসরের জন্য ব্রাজিল খরচ করে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার।
কাতার বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো নতুন অনেক কিছুই যুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে শীতলীকরণ প্রযুক্তি। কেননা, এটি একটি উষ্ণ দেশ। তাই খেলার মাঠ ও দর্শক গ্যালারির তাপমাত্রা রাখা হয়েছে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস- যা সবার জন্য বেশ স্বস্তিদায়ক। সুতরাং বাইরের তাপমাত্রা যত কম বা বেশি হোক না কেন, স্টেডিয়ামে থাকা খেলোয়াড় ও ফ্যানরা অন্তত তাপমাত্রার কারণে কোনো ধরনের অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়বেন না। কাতার অঙ্গীকার করেছে যে, তারা প্রথম কার্বন-নিউট্রল ওয়ার্ল্ড কাপ হোস্ট করতে যাচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এই ইভেন্টের কার্বন ফুটপ্রিন্ট মুছে ফেলতে গ্রিন প্রজেক্ট গ্রহণ করা হয়েছে। যে কোনো দুইটি স্টেডিয়ামের মধ্যকার দূরত্ব এক ঘণ্টার কম ড্রাইভিং দূরত্বের মধ্যে রাখা হয়েছে, এতে ফ্যানরা একই দিনে দুইটি বা তার বেশি ম্যাচ এটেন্ড করতে পারবে। এর ফলে অপ্রয়োজনীয় অনেক এনার্জি সাশ্রয় হবে- যা পরিবেশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি স্মার্ট ওয়াইফাই ও চার্জিং স্টেশনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে কাতারে। দোহার আশপাশে কানেক্টেড সেন্সর বসানো হয়েছে যার দ্বারা কাতারের আশপাশে সহজে চলাচল করা যাবে। এছাড়া স্টেডিয়ামে যুক্ত করা হয়েছে এলইডি লাইটিং ও কালার-চেঞ্জিং লাইট। এর পাশাপাশি অনেক ধরনের লাইট ইফেক্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে কাতার বিশ্বকাপের জন্য। এছাড়া অ্যাপের মাধ্যমে ফুড অর্ডার করলে তা পৌঁছে যাবে অর্ডারকারীর কাছে। পাশাপাশি যুক্ত করা হয়েছে রোবট রেফারি। ৩২ দলের অংশগ্রহণে মরুর বুকে বিশ্বকাপ শুরু হবে আগামী ২০ নভেম্বর। প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে স্বাগকিত কাতার ও ইকুয়েডর।

: আব্দুল্লাহ আল মুজাহিদ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়