প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
কাগজ প্রতিবেদক : পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের করা মামলায় পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিবের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গতকাল আদালতে বাবুল আক্তার তার দুই সন্তানকে জড়িয়ে ধরে কান্নার দৃশ্য সবার নজর কাড়ে। তাদের কান্নায় চোখে পানি আসে আদালতে উপস্থিত অনেকের-ই।
গতকাল বাবুল আক্তারকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হলে দেখা করতে আসেন তার স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, বোনসহ আত্মীয়স্বজন। এজলাস কক্ষের বেঞ্চে বাবুলের একপাশে ছিল তার মেয়ে তাবাসসুম ও আরেকপাশে ছেলে আক্তার মাহমুদ মাহি। আর পেছনে একটি বেঞ্চে বসে ছিলেন তার স্ত্রী। শুনানি শুরু হলেও সেদিকে তাদের নজর ছিল না। শুনানির পুরোটা সময় ছেলেমেয়ে বাবুল আক্তারের বুকেই ছিল। বাবুল আক্তার মাঝে মধ্যে ছেলেমেয়ের মুখে হাত বুলিয়ে দেন। বাবার সঙ্গে ছেলেমেয়ের এমন মমতাময়ী দৃশ্য সবাই উঁকি দিয়ে দেখছিলেন। মেয়ে তাবাসসুম একপর্যায়ে বাবার কোলে শুয়ে পড়ে। বাবা তাকে পরম মমতায় আদর করেন। এরই মধ্যে ৭ দিনের রিমান্ড শুনানি শেষে বাবুলের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এরপরই বাবুল তার দুই সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে ‘তোমরা ভালো থেকো, ঠিকভাবে খাওয়া দাওয়া করিও’ বলে কান্না করতে থাকেন। ৭ম শ্রেণিতে পড়–য়া ছেলে মাহি তার বাবাকে সান্ত¡না দেয়। এ দৃশ্য দেখে আদালতে উপস্থিত অনেকের চোখেই পানি চলে আসে। কান্না করতে থাকেন উপস্থিত অনেকেই।
শুনানিতে বাবুল আক্তারের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, মিতু হত্যাকাণ্ডের সময় বাবুল আক্তার ঢাকায় ছিলেন। জোর করে তার জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। পিবিআই অফিসে বাবুল আক্তারকে ৫৩ ঘণ্টা আটকে রেখে জবানবন্দি দিতে চাপ প্রয়োগ করা হয়। বাবুল আক্তার নির্দোষ। অন্যদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক রবিউল ইসলাম মামলার সুষ্ঠু তদন্তসহ তিন কারণে বাবুলকে রিমান্ডে নিতে যুক্তি দেখান। তিনি বলেন, বাবুল আক্তার জেলে থাকা অবস্থায় কীভাবে ভয়েস রেকর্ড বিদেশে সাংবাদিক ইলিয়াসের কাছে পাচার হলো, ভয়েস রেকর্ডে থাকা কণ্ঠস্বর বাবুল আক্তারের কিনা বা অপর প্রান্তে কে ছিলেন, ভিডিও ধারণ করতে তাকে কারা সহযোগিতা করেছেন- এসব জানতে ৭ দিনের রিমান্ড প্রয়োজন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন হিরনও রিমান্ডের জোর দাবি জানান।
এর আগে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর বাবুল আক্তারসহ চারজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার। মামলায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে অভিযোগ আনা হয়। মামলার বাকি আসামিরা হলেন- সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন, বাবুল আক্তারের ভাই হাবিবুর রহমান লাবু ও বাবা আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া।
মামলার এজাহারে বলা হয়, চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা মামলা তদন্তে প্রধান আসামি হিসেবে বাবুল আক্তারের নাম বেরিয়ে এলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে তদন্ত ভিন্ন খাতে নিতে এবং বাংলাদেশ পুলিশ ও পিবিআইয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে জেলে থাকা বাবুল আক্তার এবং অপর আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় কথিত সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন গত ৩ সেপ্টেম্বর বিদেশে পলাতক থাকা অবস্থায় তার ফেসবুক আইডি থেকে ‘স্ত্রী খুন স্বামী জেলে, খুনি পেয়েছে তদন্তের দায়িত্ব’ শিরোনামে একটি ভিডিও ক্লিপ আপলোড করেন।
এতে বিভিন্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্যের মাধ্যমে মিতু হত্যা মামলার তদন্তকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করাসহ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নœ এবং সা¤প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে উসকানির অভিযোগ করা হয়।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।