গ্রেপ্তার ৭ : ইশরাকসহ ১৩০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

আগের সংবাদ

শর্তগুলো কঠিন হলেও যৌক্তিক : আইএমএফের শর্ত মেনেই ঋণ নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের, ব্যাংক ঋণের সুদ বাড়ানোর প্রস্তাবে ব্যবসায়ীদের আপত্তি

পরের সংবাদ

সৈয়দপুর বরেন্দ্র বহুমুখী প্রকল্প : সোলার পাতকুয়ার পানিতে ভাগ্য বদলেছে শত শত কৃষকের

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জিকরুল হক, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে : সৈয়দপুরে বরেন্দ্র বহুমুখী প্রকল্পের সোলার পাতকুয়ার পানি ভাগ্য বদল করে দিয়েছে কমপক্ষে ২০০ কৃষকের। এসব কৃষকরা সোলার বিদ্যুৎ ব্যবহার করে পাতকুয়ার মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে সারা বছর ফসল ফলাচ্ছেন। ৫ বছরে আগে যেসব জমি পতিত পড়েছিল সেসব জমিতে ফুলকপি, আলু, টমেটো, শিম ও মরিচের ব্যাপক চাষ হচ্ছে।
এর ফলে বদলে গেছে কৃষকদের আর্থিক অবস্থা। ছনের বাড়ি আধাপাকা হয়েছে। শূন্যের কোঠায় নেমেছে অনাহারি মানুষের সংখ্যা। ক্ষেতমজুরদের কাজ মিলছে সারাবছর। নামমাত্র খরচে পাতকুয়ার সেচের পানি পাচ্ছেন কৃষকরা। এ আর্থিক বিপ্লব সাধিত হয়েছে উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বড়দহ গ্রামে। এটা এখন সবজি গ্রামে পরিণত হয়েছে।
বড়দহ গ্রামের চাষি আতিয়ার, কেশবচন্দ্র, সুবোল চন্দ্র রায় ও দেবেন রায় ভোরের কাগজকে জানান, এই গ্রামের বেলে দোঁআশ মাটিতে আগে তেমন কোনো ফসল ফলত না। সমতল ভূমি হলেও উঁচু হওয়ায় কোনো সময়েই জমিতে পানি আটকানো সম্ভব হতো না। ফলে পানির অভাবে যে কোনো মওসুমে ফসল ফলানো কঠিন হয়ে পড়ত। বর্তমান সরকারের আমলে সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বদৌলতে গ্রামের চারটি স্থানে চারটি সোলার পাতকুয়া খনন করা হয়।
সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে ১২৮ ফুট নিচ থেকে তোলা হচ্ছে পানি। এসব কুয়া নির্মাণে সরকারের ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ টাকা। কৃষকের সুবিধামতো স্থানে তৈরি করা হয়েছে ওইসব পাতকুয়া। পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের ফলে সারাবছর চাষিরা আবাদ করছেন। শীতকালে চাষ করা হচ্ছে ফুলকপি, আলু, শিম, টমেটো। এসব ফসল তোলা শেষ হলে একই জমিতে মরিচ ও ভুট্টার চাষ করা হবে। এতে করে কৃষকরা যেমন ফসল ফলিয়ে লাভবান হচ্ছেন তেমনি গ্রামের ক্ষেতমজুরদেরও মিলছে কাজ।
জানা গেছে- এ বছর শীত মওসুমে প্রায় ২০০ একর জমিতে ফুলকপির চাষ করা হয়েছে। পানির নিশ্চয়তা থাকায় ফলনও হবে ভালো। দামও মিলবে আশানুরূপ। উৎপাদন খরচও অনেক কম। এতে করে চাষিদের নেই তেমন কোনো আর্থিক অনটন। এই এলাকার কৃষি পরিবারগুলো অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ায় বসতবাড়ির চেহারাও পাল্টে গেছে। ছনের ঘরের পরিবর্তে বাস করছেন প্রান্তিক কৃষকরা আধাপাকা বাড়িতে। ছেলেমেয়েরাও শিক্ষামুখী হয়েছে। সব মিলে ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বড়দহ গ্রামটি সচ্ছল কৃষি পরিবারের এলাকায় পরিণত হয়েছে।
কথা হয় বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড সদস্য রবিউল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, তার ওয়ার্ডের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ প্রান্তিক চাষি। ফসলি জমি বেলে দোঁআশ আর উঁচু হওয়ায় আগে পানির অভাবে তেমন চাষাবাদ করা সম্ভব হতো না। শুষ্ক মওসুমে ধুলাময় হয়ে উঠত গ্রামটি। বছরে অধিকাংশ সময় জমি গোচারণভূমি হয়ে থাকত। এর ফলে গ্রামের কৃষক পরিবারগুলো আর্থিক দুর্ভোগে জীবন অতিবাহিত করত।
বর্তমান শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকায় এবং সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর নেক দৃষ্টির ফলে আমি অনেক চেষ্টা তদবির করে আমার ওয়ার্ডে বরেন্দ্র বহুমুখী প্রকল্পের অধীনে চারটি সোলার পাতকুয়া স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থা থাকায় সোলার পাতকুয়া থেকে পানি উত্তোলন করে সুবিধামতো চাষিরা পানি ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করছে। বাজারে উৎপাদিত সবজির দামও মিলছে ভালো। জমি পতিত না থাকায় মানুষের সচ্ছলতা এসেছে। এখন ওই গ্রাম গোটা উপজেলায় সবজি গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
তিনি আরো জানান, বড়দহ গ্রামের উৎপাদিত শাক সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে যায়। ফসলের মওসুমে বাইরের জেলার ব্যবসায়ীরা এসে ট্রাকে করে নিয়ে যায় উৎপাদিত সবজি। এ কারণে চাষিরা দামও পায় বেশ ভালো। আর সরকারের সহায়তায় পানির সরবরাহ থাকায় কৃষকদের ব্যয় বলতে নেই। প্রতি বিঘা জমিতে পানি সরবরাহ পেতে খরচ হয় মাত্র ৫০ টাকা। লাখ টাকার ফসল ফলিয়ে পানি বাবদ কৃষকের ৫০ টাকা খরচ করতে মোটেই গায়ে বাঁধে না।
ওই ইউপি সদস্যের মতে কৃষি পরিবারগুলোতে সচ্ছলতা ফেরায় গ্রামে পূর্বের তুলনায় বর্তমানে বেশ শান্তি বিরাজ করছে। সৌহার্দ্য আর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আমরা গ্রামের মানুষ বেশ ঐক্যবদ্ধ। মানুষের মাঝে আর্থিক সচ্ছলতা আসায় ওই ওয়ার্ডের গ্রামগুলো মডেলে পরিণত হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার শাহিনা বেগম ভোরের কাগজকে বলেন, এবার প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাকসবজি চাষ হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়