৪০তম বিসিএস : নন-ক্যাডারদের সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ মোমবাতি প্রজ্বালন

আগের সংবাদ

ঝুলে গেল সমন্বিত তিস্তা প্রকল্প : ভূরাজনৈতিক চাপের কারণে এই প্রকল্প এগিয়ে নিতে আগ্রহ হারিয়েছে সরকার, এখনো হাল ছাড়েনি চীন

পরের সংবাদ

কেঁচো সারে মাসে লাখ টাকা আয় করেন জান্নাতুল

প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মর্তুজা ফারুক রুপক, মেহেরপুর থেকে : মেহেরপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করে কপাল ফিরেছে গৃহবধূ জান্নাতুল ফেরদৌসের। মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের টি আর এগ্রো কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলেছেন ফেরদৌস। সেখানে সি ডি ভার্মি কম্পোস্ট, কেঁচো সার, ট্রাইকম্পোস্ট ও জৈব সার উৎপাদন করেন তিনি। রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমাতে তার এই উদ্যোগটি ইতোমধ্যে কৃষকের মধ্যে সাড়া ফেলেছে।
মেহেরপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলায় পাইকারি হারে বিক্রি করছেন এসব কম্পোস্ট সার। বাড়ির ময়লা-আবর্জনা, গোবর দিয়ে উৎকৃষ্টমানের কম্পোস্ট সার তৈরি করেন ফেরদৌস। বাড়ির কাজের পাশাপাশি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে মাসে প্রায় ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা আয় করেন তিনি। জান্নাতুল ফেরদৌস সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের সাহাবুলের স্ত্রী। তিনি মেহেরপুর থেকে প্রথম কোনো নারী উদ্যোক্তা হিসেবে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক পেয়েছেন। ২০০৮ সালে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে মাত্র দুটি রিংস্লাব দিয়ে ৫ হাজার কেঁচো নিয়ে সীমিত পরিসরে কেঁচো সার চাষ শুরু করেন তিনি। সেদিন সীমিত পরিসরে শুরু করলেও বর্তমানে তার প্রদর্শনীতে ৫০ কেজির ওপর আফ্রিকান জাতের কেঁচো রয়েছে। এখন প্রতি মাসে ২০ টন গোবর থেকে ১৫টি হাউসে প্রায় ১০-১২ টন কেঁচো সার উৎপাদিত হচ্ছে। যার প্রতি কেজি সার ১৫ টাকা মূল্যে বিক্রি হয়।
কেঁচো সার উৎপাদনকারী জান্নাতুল ফেরদৌস ভোরের কাগজকে বলেন, কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৭৫ হাজার টাকা ইনভেস্ট করে ৫ হাজার কেঁচো নিয়ে সার উৎপাদন শুরু করি। পরে আরো দুই বিঘা জমি লিজ নিয়ে ১৫টি হাউস তৈরি করি। এখন আমি প্রতি মাসে সার ও কেঁচো বিক্রি করে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা উপার্জন করছি। এই অরগানিক সারটির বাজারে ভালো চাহিদা রয়েছে।
জান্নাতুল ফেরদৌসের এই উদ্যোগে শুধু নিজেই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, এমন না। তার এই এগ্রো কোম্পানিতে আরো ৪ জন মানুষ কাজ করছেন। প্রতি মাসে তাদের বেতনও দিচ্ছেন তিনি। ফেরদৌসের কোম্পানিতে কাজ করা আসাদুল হক বলেন, বাজারে প্রচুর চাহিদা আছে কেঁচো সারের। আর শুধু কেঁচো সারই না আমাদের এখানে জৈব সার ও ট্রাইকম্পোস্ট সারও তৈরি হচ্ছে।
জান্নাতুল ফেরদৌসের দেখাদেখি অনেকেই এখন এই কম্পোস্ট সার তৈরির কথা ভাবছেন। ফেরদৌসের কোম্পানিতে আসছেন পরামর্শ নিতে। তেমনি একজন আকুব্বার আলী, তিনি একজন সবজি চাষি। নিজের ও লিজ নেয়া ১৮ বিঘা জমিতে তিনি সবজি চাষ করেন। তবে কেঁচো সারের গুণাগুণের কথা ভেবে তিনি নিজেই উৎপাদন করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি নিজেই জমিতে চাষাবাদ করি। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনই আমার লক্ষ্য। রাসায়নিক সার বাদ দিয়ে জমির উর্বর ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য জৈব সার ব্যবহার করছি। তবে কেনা সার অনেক ব্যয়বহুল। সেজন্য নিজেই উৎপাদন করতে চাই।
জান্নাতুল ফেরদৌসকে সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছেন কৃষি বিভাগ। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসরিন পারভিন বলেন, জান্নাতুল ফেরদৌসের এই উদ্যোগটা অন্য নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা। তার উৎপাদিত সারের বেশ চাহিদা রয়েছে। অন্য জৈব সারের তুলনায় কেঁচোর এনজাইম বা রস থেকে উৎপাদিত সারের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। মাটিতে জৈব সারের চাহিদা মেটাতে পরিমাণেও কম লাগে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়