জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় : মাস্টার্স শেষ পর্ব পরীক্ষার ফল প্রকাশ

আগের সংবাদ

ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে দুর্ভোগ

পরের সংবাদ

আদিবাসীদের মহিষাসুরবন্দনা

প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইউনেস্কোর ইউনাইটেড নেশনস এডুকেশনাল, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশনের তরফে গত বছর ডিসেম্বরেই তাদের রিপ্রেজেন্টেটিভ লিস্ট অব ইন্টেনজিবল কালচারাল হেরিটেজের তালিকায় স্থান দিয়েছে দুর্গোৎসবকে। একই সঙ্গে সংবাদ মাধ্যমে বেশকিছু খবর সোচ্চারে পরিবেশিত হচ্ছে যে আদিবাসী সমাজ বছর দশেক আগে থেকে সংগঠিতভাবে মহিষাসুর স্মরণ অনুষ্ঠান করছে। ব্যাপারটা কী? পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড আর বিহার- ভারতের এই তিন রাজ্যের সরকারি তপসিলি উপজাতিদের তালিকার একেবারে প্রথম নামটিই হলো অসুর। ‘অসুর’ ভারতের একটি বিশেষ আদিবাসী উপজাতি। তাদের লোককথা অনুযায়ী, আর্যদের দেবী দুর্গা এই সময়েই তাদের রাজা মহিষাসুরকে ছলনার মাধ্যমে হত্যা করেছিলেন। তাই দূর্গোৎসবের সময় শোক পালন করেন অসুর বংশীয় আদিবাসীরা। তাদের বিশ্বাস মতে দুর্গা আসলে তাদের ‘সম্রাট মহিষাসুর’-এর নাম, যেখানে তিনি পরিচিত হুদুড় দুর্গা বলে। দুর্গাপূজার এই সময়ে তারা অশৌচ পালন করেন এবং ভুয়াং বাদ্যযন্ত্র নিয়ে নাচ হয়। চিরাচরিতভাবে দুর্গাপূজার সময়টাতেই মহিষাসুরের জন্য শোক পালন করে থাকে আদিবাসী সমাজ। কোথাও অরন্ধন পালন করা হয়, কোথাও জানলা-দরজা বন্ধ করে ঘরে বসে থাকেন আদিবাসীরা, যাতে দুর্গাপূজার যে উৎসব, সেই মন্ত্র বা ঢাকের শব্দ যাতে তাদের কানে না যায়। মহিষাসুর-সংক্রান্ত যে লোকগাথা রয়েছে, তা প্রায় ৩ হাজার বছর পুরনো, যখন আর্যরা ভারতবর্ষে আসেননি। এই ‘অসুর’ উপজাতিরা তখন ছিলেন এখনকার ছত্তিশগড়ে যারা মূলত গোন্ড উপজাতি হিসেবে পরিচিত।
ইদানীং পশ্চিমবঙ্গের নানা জেলায়, ঝাড়খণ্ডে ও ভারতের অন্যান্য অনেক আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় ব্রাহ্মণ্যবাদী যে দুর্গা আরাধনার ধারা, তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অসুর বন্দনার ঢল নেমেছে। আদিবাসী জনজাতির লোক কাহিনীতে বলা হয় যে, শক্তিশালী এক বিরাট জনপদের শাসক ছিলেন ঘোড়াসুর। মহিষাসুর কথাটা এসেছে মহীয়সী বা মহান কথা থেকে। সোজা কথায় ‘মহিষ’ বিষয়টি এক উপাধি। শ্রেষ্ঠ অর্থে যা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সাঁওতাল আখ্যানে দুর্গা পুংলিঙ্গ। অসুর রাজের গলায় ছিল বজ্রপাতের মতো গর্জন। ঝড়ের মতো আওয়াজ। সাঁওতালি শব্দে ঝড় হচ্ছে হুদুড়। তাই মহারাজা ঘোড়াসুরের আর এক নাম হুদুড় দুর্গা। গ্রামগুলোতে মহিষাসুরের মন্দির থাকে না, তবে বাঁধানো চাতাল মতো একটা জায়গায় পূজা করেন স্থানীয় মানুষ। কোথাও ভৈঁসাসুর, কোথাও মাইকাসুর আবার কোথাও মহিষাসুর নামে তার পূজা দেন দলিত শ্রেণির যাদব আর পাল বংশীয় মানুষ। মহিষাসুরকে তারা গরু, মোষের মতো গৃৃহপালিত পশুর রক্ষাকর্তা বলে মনে করেন।
কিন্তু সত্যিটা কী? যুক্তি কী বলে? হিন্দু ধর্মীয় কাহিনীগুলো পুরাণভিত্তিক। আর্য-অনার্য সংঘাত থেকে উদ্ভুত। সেই সুর-অসুরের সংঘাত নিয়ে বিরচিত। প্রত্যেকের নিজস্ব বর্ণনা এরকম যে তারাই অসিচালনায় পারদর্শী বীর ভূমিপুত্র আর অপর দল অত্যাচারী, লুণ্ঠনকারী, সুরা পানকারী, নারী ধর্ষণকারী, বর্বর যাযাবর।
এবার ফিরি মা দুর্গার কথায়। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের সূত্রানুযায়ী ব্রহ্মার আশীর্বাদে জম্ভাবসুরের ত্রিভুবন জয়ী পুত্রলাভের ভবিষ্যদ্বাণী এবং দেবতাদের আক্রমণের মুখে পড়ে জম্ভাসুরের মহিষীর (স্ত্রী মহিষ) সঙ্গে সঙ্গম দ্বারা মহিষাসুর নামক পুত্রের জন্মদানের মতো বিচিত্র আষাঢ়ে গল্পকেও মান্যতা দিয়েছে এই সমাজ সংস্কারকরা। পশুর সঙ্গে যে বিকৃত যৌনাচারের মাধ্যমে মহিষাসুরের জন্ম, তা বাস্তবে অসম্ভব হলেও যুক্তিবাদীদের কাছে অসুর জাতির বীরত্ব ও গরিমার অকাট্য প্রমাণ! এখানেই আদিবাসীরা নিয়ে এলেন হুদুড় দুর্গা তত্ত্ব। এই তত্ত্ব বলছে যে ‘হুদুড় দুর্গা’ নামে এক মহিষাধিপতিকে ছলনাময়ী দুর্গা দ্বারা প্রলুব্ধ করে শয়নকক্ষে নিয়ে গিয়ে গুপ্তহত্যা করা হয়েছিল। দেবতারা হুদুড় দুর্গাকে নাকি ‘অহুর’ নাম দিয়েছিল। তারপরে মারাংবুরুর কাছে গোপনে অহুর-বধের কৌশল জেনে তাকে ছলনার দ্বারা হত্যা করার পরই নাকি পার্বতীর নাম ‘দুর্গা’ হয়। এখানে আরো গল্প আছে। সাঁওতাল, মুণ্ডা, কোল, অসুর, কুড়মি, মাহালী, কোড়াদের নিয়ে খেরোয়াল জাতি। সেই জাতির রাজা হুদুড় দুর্গা কিস্কু বা ঘোড়াসুর সমস্ত পাহাড়, জঙ্গল, নদী ও চারণভূমির অধিপতি ছিলেন। আর্যরা বারবার তার রাজ্যকে আক্রমণ করেও হুদুড় রাজার পরাক্রমের কাছে হেরে যেতে থাকে। তখন তারা এক সুন্দরী নারীকে হুদুড় দুর্গার কাছে পাঠাল। সেই যুবতী ছিল গণিকাপ্রধানা ও আর্যদের ‘হানিট্র্যাপ’। তার সৌন্দর্য্য ও ছলাকলায় মুগ্ধ হয়ে হুদুড় তাকে বিয়ে করে। নয়দিন উদ্দাম মধুচন্দ্রিমার পরে নববধূ হুদুড়কে মেরে ফেলে। বলা হচ্ছে যে এই হুদুড় দুর্গাই হলেন দেবী দুর্গার বধ্য মহিষাসুর। আর হুদুড় দুর্গাকে হত্যা করার পর সেই ছলনাময়ী দেহোপজীবনিই পরিচিত হন দেবী দুর্গা হিসেবে। আর্যরা অতঃপর নেতৃত্বহীন ভূমিপুত্রদের সুবিশাল সাম্রাজ্য দখল করে তাদের তাড়িয়ে দেয়, যার ফলে তারা পালিয়ে বেড়াতে থাকে ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, বাংলা ও ছত্তিশগড়ের পাহাড়ে জঙ্গলে। সেই ধাক্কা ও শোক আজও ভূমিপুত্ররা বা মূলনিবাসীরা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তাই নাকি আদ্যিকাল থেকে প্রতি বছর দুর্গাপূজার সময় দুর্গাসপ্তমীর দিন থেকে শোকের প্রতীক হিসেবে ‘দাঁশাই’ বা ‘ভুয়াং’ নাচের মাধ্যমে শুরু হয়ে যায় মধ্য ভারতের আদিবাসীদের শোকার্ত পদযাত্রা, যার দ্বারা মহিষাসুরের হত্যা ও তার ফলে আদিবাসীদের ছত্রভঙ্গ হয়ে পলায়নের করুণ ইতিহাস স্মরণ করা হয়। আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতি বর্ণহিন্দুদের সহানুভূতিকে মূলধন করে প্রচার পাওয়ার লোভ কাজ করছে আদিবাসী নেতাদের মধ্যে এবং হিন্দু মাইথলজি সম্পর্কে জ্ঞানহীন সংবাদমাধ্যম তা প্রচার করছে উচ্চগলায়।
এই উপাখ্যান ও তত্ত্বের বিশ্লেষণ করা যাক।
প্রথমত, মহিষাসুরের পিতৃপরিচয় পাওয়া যায় দেবী ভাগবত, ব্রহ্ম বৈবর্ত পুরাণ ও কালিকাপ্রাণে। ব্রহ্মার পুত্র মরীচি, মরীচির পুত্র কশ্যপ এক বিখ্যাত মুনি। এই কশ্যপমুনির পুত্র রম্ভ যার পুত্র অর্থাৎ কশ্যপের পৌত্র হলো মহিষ। মহিষ শিবের পরম উপাসক। তবে সে অনার্য কোথায় হলো? শিব যদি হরপ্পা সভ্যতার অবদান হয়েও থাকে, পুরাণ রচনাকালে তো তার বৈদিক দেবতাদের আসনে সসম্মানে অভিষেক হয়ে গেছে। বেদে অসুর ও দেব- দুটি শব্দের অর্থই শুভ। ‘দেব’ মানে যেখানে দীপ্তিমান বা প্রকাশমান, সেখানে ‘অসুর’ অর্থ প্রাণবান। ব্রহ্মার পৌত্র কশ্যপের দুই স্ত্রী দিতি ও অদিতি। দিতি হলে দৈত্য বা অসুরদের আদি জননী, আর অদিতি হলেন দেবতাদের আদি জননী। ঋগেবদে ইন্দ্র, বরুণ ও রুদ্রকেও অসুর মহস বলা হয়েছে। “ত্বম ঋগেবদে রুদ্র অসুরঃ মহস দিবঃ।।’ (ঋগেবদ ২-১-৬)। ঋগেবদেই আছে দেব ও অসুর দুজনেই উপাসনা দ্বারা সৌমনস (জ্ঞান) লাভ করছেন। তাহলে মহিষাসুর কোন যুক্তিতে অনার্য বা আদিবাসী হলো?
দ্বিতীয়ত, সাঁওতালী ভাষায় ‘হুদুড়’ শব্দের অর্থ মেঘের গর্জন বা বাজের শব্দ। সাঁওতালী লোককথাতে এক বিশাল প্রতাপশালী ও প্রজাদরদী রাজার উল্লেখ আছে। কিন্তু তিনিই হুদুড় দুর্গা বা মা দুর্গা দ্বারা নিহত মহিষাসুর, এমন কোথাও উল্লেখ নেই। দাঁশায়, সোহরাই, কারাম, লাগড়ে, দং-এর মতো লৌকিক পরম্পরার মধ্যে আর্য-অনার্য সংঘাত ঢুকিয়ে দেওয়া নিয়ে বৃৃদ্ধ সাঁওতালদেরও অনেকেই ক্ষুব্ধ। যুগ যুগ করে প্রকৃতি উপাসক এই হড় (সাঁওতাল) জাতির সৃৃষ্টিতত্ত্বে আছে ‘পিলচু হড়াম’ আর ‘পিলচু বুড়ি’র কাহিনী। হুদুড় দুর্গার উপাসনা ছিল না।
তৃতীয়ত, আশ্বিন মাসকে সাঁওতালরা বলে দাঁশায় মাস। দুর্গাপূজার সময় সাঁওতাল অধ্যুষিত অঞ্চলে পুরুষরা নারীবেশে সজ্জিত হয়ে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে দাঁশায় নাচ নেচে বেড়ায়। তাদের হাতে থাকে লাউয়ের খোল দিয়ে বানানো ভূয়াং নামে এক বাদ্যযন্ত্র। এই দাঁশায় সম্পূর্ণরূপে কৃষিভিত্তিক পরব ও প্রকৃতিবন্দনার উৎসব। ইদানীং এটিকেই হুদুড় দুর্গার কাহিনীর সঙ্গে জুড়ে নাকি আদিম জনজাতির পক্ষে শোকপালনের উপলক্ষ করে তোলা হয়েছে। ইদানীং মহিষাসুরের মূর্তি গড়ে হাতজোড় করে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের নতুন রীতি চালু হয়েছে। এগুলো যে চূড়ান্ত মিথ্যাচার তা সবার বোঝা উচিত।
চতুর্থত, আদ্যপান্ত কৃষি উৎসব সোহরাই পরবেও মহিষাসুরের অনুষঙ্গ ঢোকানো হচ্ছে। অথচ সেখানে গো-বন্দনাই মূল উপজীব্য। সাঁওতাল ছেলেমেয়েরা অনেকেই সিংহবাহিনীর মন্দিরে পূজা দেয়, স্কুলের সরস্বতী পূজাতেও শামিল হয়। আবার সোৎসাহে বড় বাঁধনা, ছোট বাঁধনা পরবেও মেতে ওঠে। কিন্তু এই ব্যাপারটাই নব্য আদিবাসী সংস্কারকদের নাপসন্দ। তাই আজ এরা হুদুড় দুর্গার গল্পের মূল প্রচারক।
পঞ্চমত, হুদুড় দুর্গার সপক্ষে ঐতিহাসিক সমাজবৈজ্ঞানিক বা নৃৃতাত্ত্বিক- কোনো প্রমাণই পাওয়া যায় না। আদিবাসী অঞ্চলে যারা দীর্ঘদিন ক্ষেত্রসমীক্ষা করেছেন, সেসব বিশেষজ্ঞও কোনো সূত্র দিতে পারেননি। তাদের কোনো গবেষণাপত্রে হুদুড় দুর্গার উল্লেখ নেই।
২০০৩ সালে প্রথম এই বাংলারই বুকে পুরুলিয়ার ভুলুরডিতে হুদুড় দুর্গাকে নিয়ে প্রথম অনুষ্ঠান হয় ২০০৩ সালে। এরপর থেকে ধীরে ধীরে অন্যান্য আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে পা রাখে হুদুড় দুর্গা। ২০১০ সালে আনন্দবাজার পত্রিকায় হুদুড় দুর্গা নিয়ে আর্যভট্ট খানের একটি বিস্তারিত নিবন্ধ প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি আরো আলোকিত হয়। ২০১১ সালে কাশীপুর থানার সোনাইজুড়ি গ্রামে বেশ বড় করে ‘হুদুড় দুর্গা স্মরণ দিবস’ অনুষ্ঠিত হয়। উদ্যোক্তা ‘দিশম খেরওয়াল বীর কালচার’ কমিটি। এর পর থেকে বাংলার আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে প্রতি বছর শারদোৎসবে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে হুদুড় দুর্গা বা মহিষাসুর স্মরণ উৎসব। এই উপলক্ষে পাতা সেলাই, ছোট ছেলেমেয়েদের বিস্কুট দৌড়, সুঁচে সুতো পরানো, ফুটবল ম্যাচ, সেøা সাইকেল রেস ইত্যাদি ইভেন্টের আয়োজন করা হয়। হয় দাঁশাই, সাড়পা ও কাঠি নাচের আয়োজন। বহু ক্ষেত্রে দুর্গামণ্ডপের দুশো মিটারের মধ্যেই চলে হুদুড় দুর্গা নিয়ে জমকালো অনুষ্ঠান। ২০১৩ সালের ১৭ অক্টোবর দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র ক্যাম্পাসের ঝঝঝ-১ প্রেক্ষাগৃৃহে ‘মহিষাসুর শাহাদাত দিবস’ পালন করে। অনুষ্ঠানটির আহ্বায়ক ছিল অষষ ওহফরধ ইধপশধিৎফ ঝঃঁফবহঃং ঋড়ৎঁস। সেই উৎসবের প্রস্তাবনায় বলা হয়, দুর্গা কোনো নারীশক্তির প্রকাশ নয়। দুর্গা ও তার আখ্যান হলো আরো একটা ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রকল্প, যার মজ্জায় মজ্জায় মিশে আছে পুরুষতন্ত্র।
কান্যকুব্জের ব্রাহ্মণদের একটি শাখা দাবি করে রাবণ তাদের পূর্বপুরুষ। যাদবরা মনে করেন তারা কৃষ্ণের বংশধর। হিমাচল প্রদেশে আবার দুর্যোধনের মন্দির আছে, যেখানে কিছু স্থানীয় মানুষ মহাভারতের এই খলনায়ককেও রীতিমতো পূজো করে। বৈচিত্র্যময় ভারতবর্ষে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী পুরাণ ও কিংবদন্তির সঙ্গে নিজেদের জুড়তে চায়। মুশকিল হয় যখন সেই সূত্রে কিছু অসৎ লোক অর্বাচীন আদিবাসী নেতা তত্ত্ব নির্মাণ করে সরল মানুষদের জাতিসত্তার নাম করে মূলস্রোতের বিরুদ্ধে উসকে দেয়। অসুরপন্থিদের বৃৃহত্তর লক্ষ্য হলো জাতিসত্ত্বার ভিত্তিতে ভারতের বুকে ছোট ছোট স্বাধীন সার্বভৌম কনফেডারেশন গড়ে তোলা। যে ব্রাহ্মণ্যবাদী পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহ, তার চেয়েও কদর্য পুরুষতন্ত্র কিন্তু উত্তরপূর্ব ভারত ছাড়া এসব অসুরপন্থি জনজাতি সমাজেই বিদ্যমান। জানগুরুর আদেশে ডাইনি সন্দেহে হত্যা বা বিষ্ঠা খাওয়ানো কি নারীর মর্যাদার প্রতীক? নাকি পুত্রসন্তান না থাকলে পুরুষের সম্পত্তি নিজের স্ত্রী বা কন্যার বদলে অন্য পুরুষ আত্মীয়কে দিয়ে দেয়ার নাম নারীপ্রাধান্য? বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা শুধু তাদের হাড়িয়া পান করে নাচা ও তুলনায় মুক্ত যৌনতা দেখেই নারী স্বাধীনতার পরাকাষ্ঠা আবিষ্কার করে ফেলেছে। অসুরকে মহাপুরুষ আর দুর্গাকে গণিকা প্রমাণ করতে গিয়েও নিজেদের সমাজের চিরাচরিত পুরুষতান্ত্রিকতাকেই মূল স্রোতের সমাজে বহমান অন্তঃসলিলা নারীশক্তির জয়গানের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছে, যা ব্রাহ্মণ্যবাদী পুরুষতান্ত্রিকতার চেয়ে আরও ভয়াবহ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়