সিনহার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য পেছাল

আগের সংবাদ

জাতীয় গ্রিড আধুনিকায়নে এবার গুরুত্ব দিন

পরের সংবাদ

ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে দুর্ভোগ

প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** রাজধানীসহ ৪ বিভাগ অন্ধকারে ** হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত ** ডিজেল কিনতে পাম্পে ভিড় **
কাগজ প্রতিবেদক : জাতীয় গ্রিডের পূর্বাঞ্চলীয় সঞ্চালন লাইনে বিভ্রাট দেখা দেয়ায় গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ায় ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। এতে সচিবালয়, সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, বাসা-বাড়ি, কল-কারখানা, হাসপাতাল ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে। এছাড়া অনাকাক্সিক্ষত এই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ফলে সারাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজার মহানবমীর আনন্দেও ছেদ পড়ে।
এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগের সার্ভার হ্যাক করা হয়েছে বলে গতকাল বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কর্মকর্তারা তা অস্বীকার করেন। বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (পিডিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা শামীম হাসান এ প্রতিবেদককে বলেন, এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম। তবে এ ধরনের আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দেয়া যায় না। আমরা এ বিষয়ে খোঁজখবর নেব।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টায় জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় ঘটলে একযোগে দেশের চার বিভাগে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় চার ঘণ্টা পর রাজধানীর কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে শুরু করে। তবে রাত সাড়ে ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণ জানা যায়নি। দেশের একমাত্র বিদ্যুৎ সঞ্চালনকারী সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তিনজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি গ্রিড বিপর্যয়ের কারণ ও সূত্রপাত কোথায় হয়েছে, তা জানাতে পারেননি। তবে বিদ্যুৎ

বিপর্যয়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে নিশ্চত করেছেন পিজিসিবির ডেপুটি ম্যানেজার ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এ বি এম বদরুদোজা খান।
রাজধানী উত্তরা, গুলশান, বারিধারা ও মিরপুরসহ কয়েকটি এলাকায় সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। ধীরে ধীরে সরবরাহ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে সন্ধা সাড়ে ৬টার দিকে সচিবালয়, বিদ্যুৎভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বিদ্যুৎ আসে। এছাড়া বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়ও ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গতকাল বিকাল সোয়া ৫টার দিকে দেয়া এক পোস্টে বলা হয়, আকষ্মিকভাবে অদ্য দুপুর ২টা ৪ মিনিটে জাতীয় গ্রিডের ইস্টার্ন অংশে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ) সমস্যা দেখা দেয়ায় অনাকাক্সিক্ষতভাবে বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলছে। পিজিসিবির প্রকৌশলীরা দ্রুততার সঙ্গে জাতীয় গ্রিড সচল করতে নিবিড় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি বিদ্যুৎ সেবা চালু করা হবে বলে আশা করা যায়। পিজিসিবিসহ বিদ্যুৎ খাতের সব সংস্থা একযোগে পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অনাকাক্সিক্ষত এ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধৈর্য ধারণ করতে বিনীতভাবে অনুরোধ করা হয়।
তেল কিনতে কনটেইনার নিয়ে পাম্পে ভিড় : জাতীয় গ্রিডে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর চরম দুর্ভোগে পড়া মানুষ জরুরি কাজ চালিয়ে নিতে জেনারেটরের ওপর নির্ভর করে। এ কারণে তেলের পাম্পগুলোতে ভিড় করতে দেখা যায় নগরবাসীকে। কনটেইনার হাতে ডিজেল কিনতে অনেক মানুষকে পাম্পে লাইনে দাঁড়াতেও দেখা গেছে। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। নীলক্ষেত মোড় এলাকায় পথের বন্ধু ফিলিং স্টেশন, মালিবাগ অটো সার্ভিস, নীলক্ষেত এলাকায় কাজী গোলাম সামদানী পাম্প, উত্তর বাড্ডা এলাকায় আল-মক্কা পাম্পে গ্যালন হাতে তেল নিতে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। নীলক্ষেতের পথের বন্ধু ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, তেল নিতে আসা গ্রাহকদের দীর্ঘ সারি। অনেকেই এসেছেন ৫ লিটার থেকে ২০ লিটারের ধারণ ক্ষমতার কনটেইনার নিয়ে। আবার কেউ কেউ মাঝারি ধরনের ব্যারেল নিয়েও এসেছেন।
বিভিন্ন হাসপাতালে ভোগান্তি : বিদ্যুৎ না থাকায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়েছে। নানামুখী ভোগান্তিতে পড়েছেন হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীরা। বিঘœ ঘটেছে সিটিস্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায়ও। বিশেষ ব্যবস্থায় চলেছে অপারেশন থিয়েটার (ওটি) ও আইসিইউ। বিভিন্ন হাসপাতালে সরজমিনে দেখা যায়- বিদ্যুৎ না থাকায় হাতপাখা দিয়ে রোগীকে বাতাস করছেন স্বজনরা। এ সময় বিদ্যুৎ আসার খবর নিয়ে ডাক্তার, নার্স, রোগী ও রোগীদের স্বজনদের উদ্বিগ্ন দেখা যায়।
মোমবাতির আলোতে হাইকোর্টে চলল বিচারকাজ : জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের প্রভাব পড়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টেও। বিদ্যুৎ না থাকলেও থেমে ছিল না উচ্চ আদালতের বিচারকাজ। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের এজলাস কক্ষে মোমবাতি জ্বালিয়ে ও মোবাইলের আলোতে বিচারকাজ পরিচালনা করেছেন বিচারপতিরা। আদালতে উপস্থিত থাকা একাধিক আইনজীবী জানিয়েছেন, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ বিচারকাজ পরিচালনা করছিলেন। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর এনেক্স ভবনের জেনারেটরও বন্ধ ছিল। এমন পরিস্থিতিতে বিচারকাজ বন্ধ না করে মোমবাতি জ্বালিয়ে এবং এজলাস কক্ষে থাকা আইনজীবীদের মোবাইলের লাইটের আলোতে বিচারকাজ চলতে থাকে। প্রায় সোয়া ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন মোমবাতি ও মোবাইলের আলোতে অনেক মামলা নিষ্পত্তি করেন সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চ।
পোশাক কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত : জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হওয়ায় দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশ নেতৃত্ব দেয়া পোশাকখাতে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এদিন অন্যান্য দিনের মতো পোশাক কারখানাগুলো বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা ছিল। তবে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর ছুটির আগ পর্যন্ত সময়ই ছিল জেনারেটরনির্ভর। এতে খরচ যেমন বেড়েছে, আবার পণ্যের কোয়ালিটিও কমেছে বলে জানান শিল্প উদ্যোক্তারা। বিকেএমই’র এক পরিচালক বলেন, বিদ্যুতের সমস্যার কারণে আমাদের কারখানায় উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে। বিদ্যুতের মাধ্যমে যে খরচ হয়, জেনারেটরে সেখানে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যায়। পণ্যের মান ও উৎপাদনেও প্রভাব পড়বে। বিজিএমইএ’র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বিদ্যুতের সমস্যার কারণে আমাদের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। প্রতিটি কারখানায় জেনারেটর দিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হয়েছে। তবে জেনারেটর দিয়ে কাজ চালাতে হলে পণ্যের কোয়ালিটি, উৎপাদন ও খরচ বেড়ে যায়। এটা অব্যাহত থাকলে বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের প্রভাব টেলিযোগাযোগ সেবাতে : জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে টেলিযোগাযোগ সেবা পেতে সমস্যায় পড়েছেন ব্যবহারকারীরা। মোবাইল ফোনে কল করা কিংবা এসএমএস পাঠানোর ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েছেন অনেকে। আবার কোথাও ইন্টারনেট সংযোগ পেতেও সমস্যা হয়েছে। অনেকেই জানিয়েছেন, তাদের ফোন থেকে কল করতে দীর্ঘ সময় নিয়েছে। আবার কল গেলেও ঘন ঘন কলড্রপ হচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল অপারেটরদের বিভিন্ন বিটিএসও সমস্যায় পড়েছে। ফলে টেলিযোগাযোগ সেবায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাময়িক সময়ের জন্য টেলিযোগাযোগ সেবা বিঘিœত হওয়ায় এক বিবৃতিতে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব গ্রাহকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
রাজধানীর রাস্তাঘাট অন্ধকার, মোমবাতি জ¦ালিয়ে দোকানে বেচাবিক্রি : বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার পরও বিদ্যুৎ না আসায় রাজধানীর সড়ক বাতি জ্বলতে দেখা যায়নি। ফলে সন্ধ্যার পর থেকেই রাস্তাঘাট অন্ধকার হয়ে যায়। শুধু যানবাহনের বাতির আলোয় সড়কের অন্ধকার কিছুটা দূর হচ্ছিল। অন্যদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় হোটেল-রেস্তোরাঁ কাঁচাবাজার ও বিভিন্ন অলিগলির দোকানে মোমবাতি জ্বালিয়ে বেচাবিক্রি করতে দেখা যায়। অনেকে বাসায় গরমে টিকতে না পেরে রাস্তায়, ফুটপাতে নেমে আসেন। অন্ধকার গলিতে মুঠোফোনের বাতি জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে অনেককে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের পর এটাই বিদ্যুৎ সরবরাহের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় বলে মনে করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়