জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় : মাস্টার্স শেষ পর্ব পরীক্ষার ফল প্রকাশ

আগের সংবাদ

ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে দুর্ভোগ

পরের সংবাদ

সবার পরশে পবিত্রময় শারদোৎসব

প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শিউলি ফুল, সাদা মেঘ এবং কাশের হিল্লোল বাংলাসাহিত্য এবং বাংলা ভাষাভাষীর মনে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। সুখের বয়ানে কিংবা আনন্দের চিত্র অঙ্কনে এই শব্দগুলো চলেই আসে। কারণ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির অনুভূতি, বাঙালির মনন ও চেতন। বাংলার অপেক্ষমান সময়ের সানন্দ-সময়।
আবার এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে খরা এবং বন্যাও। তবে আজকাল সময়ের আবর্তনে এসব অনেকটাই কমে এসেছে। ফসলের উৎপাদনে এসেছে আধুনিকতা। মানুষের মধ্যে এসেছে স্বস্তি। কারণ খাদ্য সংরক্ষণ পদ্ধতিও উন্নত হয়েছে। কেউ আর অভুক্ত থাকে না, তাই উৎসবও পালন হয় সানন্দে।
সাধারণত বাংলাদেশের বিভিন্ন উৎসবের প্রেক্ষাপটে থাকে ধর্ম। এগুলো ‘ধর্মীয় উৎসব’ নামেই পরিচিত। সে অর্থে শারদীয় দুর্গোৎসবও ধর্মীয় উৎসব। তবে আনন্দের বিষয় হলো, শরৎকালের নীলাকাশ, কাশবনের হিল্লোল আর বিগত বর্ষার অঝোর ধারাপাতে স্নাত সবুজ প্রকৃতির অঙ্গনে আয়োজিত এই পুণ্য উৎসবের অঙ্গ থেকে ধর্মের পরিচয়টুকু অন্তরালে চলে যায়। এটি পরিণত হয় মানুষের মিলনমেলায়।

উৎসবের অনেক আগে থেকে গড়া হয় মাতৃমূর্তি। সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের জন্মের নাড়ি পোতা মাটি দিয়ে গড়া মায়ের মৃন্ময়ী কখনো একক কোনো সম্প্রদায়ের হতে পারে না। মায়ের দশ হাত থাকে নানা অস্ত্রে সজ্জিত। অপরূপা ও জ্যোতির্ময়ী এই মাতৃ মূর্তি সবার, মা স্বয়ংসম্পূর্ণ দশ হাতে আগলে রাখে সব সন্তানকে। দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের পালন করার জন্য মায়ের হাস্যময়ী, লাস্যময়ী এবং রুদ্রমূর্তির প্রকাশ ঘটে। যখন যেমন দরকার, মা তখন তেমন রূপ ধারণ করেন। সন্তানদের সব ধরনের ভয়ভীতি থেকে উদ্ধার করেন শ্বাশত অভয়বাণীতে।
এই মা একদিকে যেমন সুখদায়িনী তেমনি অন্যদিকে দুঃখিনীও। সন্তানের দুঃখে কাঁদেন তিনি, আবার রুদ্রতেজে সন্তানদের উদ্দীপ্ত ও প্রাণিত করেন। বলা যেতে পারে রৌদ্রবসনী ও শঙ্কাহরণী। তাই কখনোই কোনো অপরাধী তার শাস্তি ভোগ করা থেকে রেহাই পায় না।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে ‘বিশ্ব মায়ের আঁচল’ এর কথা বলেছেন, তা এই মৃন্ময়ী মায়ের আঁচলেই খুঁজে পাওয়া যায়। সে আঁচলে শরতের হাওয়ার দোলন আপামর বাঙালি উদাত্ত আহ্বান জানায় শারদীয় এই উৎসবে যোগদানের। প্রকৃতপক্ষে মাতৃবন্দনায় থাকে মায়ের সব সন্তানের আমন্ত্রণ।

বলা যায়, একমাত্র বাঙালির জীবনের আছে এমন ‘সবার পরশে, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এবং আনন্দময়’ উৎসব। পৃথিবীর আর কোনো জাতিই এই সৌভাগ্যের অধিকারী নয়। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে যে উৎসবের অধিকারী হয়েছি, আমাদের উচিত তা সচেতনভাবে রক্ষা করা। কোনো অবোধ সন্তান যেন এতে কালিমা লেপন করতে না পারে, সে বিষয়টিতে সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকা দরকার।
এই উৎসব শুধু নির্মল আনন্দের দরজা খুলে দেয় না, খুলে দেয় এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নানা পেশার মানুষের জীবিকার পথও। বিভিন্ন পেশার লোকজন একসঙ্গে এই উৎসবের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে।
আনন্দের বিষয় হলো, শারদোৎসব শুধু উৎসব আঙিনায় বিরাজমান থাকে না। তা মানুষের চেতনা ও মননেরও পরিচর্যা করে থাকে। তা রূপ নেয় সাহিত্যে। এখানেও থাকে না ধর্মের সীমারেখা, বাঙালির এই অনন্য আনন্দকে সামনে রেখে সাজিয়ে দেয় সাহিত্যের পাতাগুলো। আর এই পাতাগুলোর জন্য অপেক্ষা করে পাঠকরা। এখানেও থাকে সমতা। প্রকৃতির মতো সমতা আসে পত্রিকার সাহিত্যের পাতাগুলোতে।
আমরা উৎসবের সুন্দর প্রাতে ‘সবার জন্য উৎসব’ এর দেবীর কাছে প্রার্থনা করতে পারি, সবাই যেন আনন্দকে বরণ করে নেয়। সবার মুখে হাসি ফোটানোর শপথ হোক উৎসবের মূলমন্ত্র।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়