বসতঘর থেকে মা ও ২ শিশু সন্তানের মরদেহ উদ্ধার

আগের সংবাদ

বছরজুড়েই ‘উন্নয়নে’র দুর্ভোগ : ভাঙাচোরা সড়কে সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ির ফাঁদ > নিত্যসঙ্গী তীব্র যানজট > সামান্য বৃষ্টিতেই জলজট

পরের সংবাদ

মাটির মূর্তি

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ব্যবসায়ী অবিনাশ বাবু একসময় পাড়ার সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি ছিলেন। তাই এলাকার পূজাতে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। হঠাৎ করে অবিনাশ বাবুর অঢেল অর্থ-সম্পদ হওয়াতে তিনি সিদ্ধান্ত নেন এবার থেকে নিজ বাড়িতেই আলাদা করে পূজা আয়োজন করবেন। সেই মতামত সার্বজনীন পূজা কমিটিতে জানিয়ে দিলে সবার খুব মন খারাপ হয়। টাকার গরমে অবিনাশ বাবুর অহংকার বেড়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন কেউ কেউ।
বাড়িতে আলাদাভাবে পূজা করার বিষয়ে স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে আলোচনা করেন অবিনাশ বাবু। তারা সবাই তাতে সম্মতি জানান। এদিকে তার নববিবাহিত পুত্রবধূ মাঝে মাঝে কী নিয়ে যেন মন খারাপ করে থাকে, কিন্তু তার মনের কষ্ট কাউকেই বুঝতে দেয় না।
অবিনাশ বাবু শহরের এক নম্বর প্রতিমা শিল্পী রাহুলকে ডেকে আনেন বাড়িতে। স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সেই রকম মূর্তি বানাতে হবে, যাতে সবাই প্রশংসা করে। এতে যত টাকা লাগে তিনি দিতে রাজি।
বাড়িতে পূজার আমেজ শুরু হয়। যথারীতি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে রাহুল শুরু করে তার কাজ। কিন্তু রাহুল যখন মাটি লাগাতে যায় সে লক্ষ্য করে কিছুক্ষণ পরই মাটি ধসে পড়ে। রাহুল চিন্তায় পড়ে। সে অনেক বড় মাপের একজন প্রতিমা শিল্পী। তার জীবনে এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি।
রাহুল অবিনাশ বাবুকে বিষয়টি জানায়। অবিনাশ বাবু উল্টো তাকেই দোষারোপ করে। কিন্তু রাহুল তা মানতে পারে না। সে জানায়- এর মধ্যে এমন কিছু রয়েছে, যা মূর্তি বানানোতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
অবিনাশ বাবু তার ছেলেকে গোপনে বলে রাখেন, রাহুল যখন কাজ করে তখন খেয়াল রাখতে। অবিনাশ বাবুর ছেলে একদিন রাহুলের কাজ দেখে। সে দেখতে পায় রাহুল খুব সুন্দর করে কাজ করেছে। কিন্তু পরদিন সকালে রাহুল আসার আগেই মূর্তি বানানোর ঘরে গিয়ে দেখে- ঠিকই তো! সব মাটি ঝরে পড়েছে!
অবিনাশ বাবুর স্ত্রী ঠাকুর ঘরে গিয়ে মানত করেন- তিনি কিছু বৈষ্ণব এনে বাড়িতে কীর্তন দেবেন, যাতে কোনো অমঙ্গল থাকলে তা কেটে যায়।
সেই মোতাবেক বাড়িতে কীর্তনের আয়োজন করা হয়। কিন্তু পর দিন থেকে রাহুল কাজ শুরু করলেও কোনো লাভ হয় না।
অবিনাশ বাবু চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি গ্রামের পুরোহিত মহাশয়কে ডেকে এনে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। পুরোহিত মহাশয় অনেক ভেবে-চিন্তে বলেন, অবিনাশ বাবু, কিছু মনে করবেন না, আমিও বেশ ক’দিন থেকে একটা বিষয় নিয়ে ভাবছি। কিন্তু ভয়ে বলতে পারছি না।
অবিনাশ বাবু ভয়ের কোনো কারণ নেই বলে জানান। এরপর পুরোহিত মহাশয় বলেন, বেশ ক’দিন আগে আপনি আপনার ছেলেকে বিয়ে করিয়েছেন। বিয়েতে অনেকটা জোর করেই আপনার পুুত্রবধূ সুষমার সামর্থ্যহীন পিতার কাছ থেকে বেশ কিছু স্বর্ণ ও নগদ টাকা পণ নিয়েছেন। আমার মনে হয় সেই টাকার কিছু অংশ আপনি রাহুলকে মূর্তি বানানোর জন্য অগ্রিম দিয়েছেন। এ জন্যই এমনটা হচ্ছে।
অবিনাশ বাবু বিষয়টি স্বীকার করেন। পুরোহিত মহাশয় পরামর্শ দেন, যৌতুকের স্বর্ণ আর নগদ টাকাগুলো ছেলের শ্বশুরকে ফিরিয়ে দিয়ে নিজের কষ্টার্জিত বৈধ টাকায় নতুন করে মূর্তি বানানোর কাজ শুরু করে দেখা যেতে পারে।
অবিনাশ বাবু সেই মতে কাজ করেন। রাহুল নতুন করে মূর্তি বানানোর কাজ শুরু করে। এত সুন্দর মূর্তি হয়, সবাই অবাক হয়। অবিনাশ বাবু দুর্গা মায়ের চরণে পড়ে ভুল স্বীকার করেন।

পার্থ সারথী দাস : মনিপুরীপাড়া, ঢাকা

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়