মিতু হত্যাকাণ্ড : আদালতে চার্জশিট দাখিল, শুনানি ১০ অক্টোবর

আগের সংবাদ

নতুন ৮ নদীর পানিবণ্টনে নজর : আলোচনায় সম্মত বাংলাদেশ ও ভারত, আগামী মার্চ এপ্রিলে ঢাকা সফরের সম্ভাবনা ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রীর

পরের সংবাদ

কর আতঙ্ক কেটেছে পুঁজিবাজারে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : একদিনেই ডলারের বিপরীতে টাকার ১০ শতাংশের বেশি দরপতনের পাশাপাশি পুঁজিবাজারে ক্যাপিটাল গেইনে কর আরোপ নিয়ে গুঞ্জনে যে উৎকণ্ঠা ছড়িয়েছিল, সেটির আপাত অবসান হয়েছে। সপ্তাহের চতুর্থ কর্মদিবস গত বুধবার এই ?দুই ইস্যুতে পুঁজিবাজারে যে দরপতন হয়, সেখান থেকে শেষ কর্মদিবস গতকাল বৃহস্পতিবার ঘুরে দাঁড়িয়ে কিছুটা বেড়েছে সূচক।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে যতগুলো কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে, তার চেয়ে কম সংখ্যক কোম্পানি দর হারিয়েছে। তবে এই দুটি সংখ্যার চেয়ে বেশি ছিল আগের দিনের দরেই লেনদেন হওয়া কোম্পানির সংখ্যা, যেগুলো মূলত ফ্লোর প্রাইসে বা বেঁধে দেয়া সর্বনি¤œ দরে হাতবদল হচ্ছে। নানা ইস্যুতে ডিএসইর সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স ছয় হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যাওয়ার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি দ্বিতীয়বারের মতো আরোপ করে ফ্লোর প্রাইস। গত ২৮ জুন এই সিদ্ধান্ত জানানোর পরের কর্মদিবস ৩১ জুলাই থেকে সূচকের ঘুরে দাঁড়ানো শুরু। বর্তমান অবস্থান ৬ হাজার ৫১৫ পয়েন্ট যা ৮ আগস্ট ছিল আরো ৪৫ পয়েন্ট বেশি। ৩১ জুলাই থেকে ৩২ কর্মদিবসে বেড়েছে ৫৩৪ পয়েন্ট, কিন্তু তাতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উচ্ছ¡াস থাকার কথা, নেই তার ছিঁটেফোঁটাও। কারণ, সূচক যে বেড়েছে, তার প্রভাব নেই সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারে। এই সময়ে সর্বোচ্চ ৩০টি কোম্পানির শেয়ারে উত্থানের প্রভাব পড়েছে সূচকে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ওরিয়ন গ্রুপের তিনটি কোম্পানি। বেক্সিমকো গ্রুপের তিনটি কোম্পানি হারিয়ে ফেলা দর ফিরে পেতে শুরু করেছে। ফ্লোর প্রাইস দেয়ার পর বেশ কিছু কোম্পানি সেখান থেকে উঠে এলেও পরে আবার ফ্লোর প্রাইসে ফিরতে থাকে সেগুলো।
পর্যালোচনায় আরো দেখা গেছে, তালিকাভুক্ত ৩৩টি ব্যাংকের সিংহভাগ ফ্লোর প্রাইস বা আশেপাশে, ৩৬ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দুই একটি ছাড়া সবই ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হচ্ছে। অথচ ব্যাংক খাতে গত ৫ বছর ধরেই দারুণ লভ্যাংশ আসছে। মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত ২০১৯ ও ২০ সালে ধাক্কা দিলেও পরের দুই বছর বেশ ভালো লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। খাদ্য খাতের সিংহভাগ কোম্পানিরও একই অবস্থা। সাধারণ বিমা খাতও ফ্লোরের আশেপাশে লেনদেন হচ্ছে। এমনকি শক্তিশালী মৌলভিত্তির কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো ও গ্রামীণ ফোনের মতো কোম্পানিও লেনদেন হচ্ছে ফ্লোরে। ওষুধ খাতে দেশসেরা কোম্পানির একটি স্কয়ার ফার্মাও ফ্লোরের আশেপাশে। গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএসইসে যতগুলো কোম্পানির দর কমেছে, বেড়েছে তারচেয়ে বেশি, তবে সবচেয়ে বেশি কোম্পানি লেনদেন হয়েছে আগের দিনের দরে, যার সিংহভাগই আছে ফ্লোর প্রাইসে। পুঁজিবাজারে দেড় মাসে ৫০০ কোম্পানির দর বাড়ার পরও যে আস্থার সংকট, তা যে এতটুকুু কমেনি, সেটি বোঝা গেছে গত বুধবার। তার আগের দিন ডলারের বিপরীতে ১০ টাকা ১৫ পয়সা দরপতন ঘটায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে পুঁজিবাজারে এমনিতে ছিল চাপ। তারমধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট কার্যক্রমের মাধ্যমে আয়করের ক্ষেত্রে আনা পরিবর্তন সম্পর্কিত স্পষ্টীকরণে ‘আয়কর পরিপত্র ২০২২-২০২৩ প্রকাশ করার পর ছড়িয়ে পড়ে উদ্বেগ। এতে বলা হয়, ‘১২.২ সরকারি সিকিউরিটিজ এবং পাবলিক কোম্পানির স্টকস ও শেয়ার হস্তান্তর হতে অর্জিত মূলধনি আয় করযোগ্য। বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। অনেকেই মনে করতে শুরু করেন, তালিকাভুক্ত যে কোনো স্টক বা শেয়ারের বেচাকেনা থেকে আয়ের ওপর করারোপ করা হচ্ছে। এতে বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিতে থাকেন। যে কারণে শেষ ৫০ মিনিটেই সূচক পড়ে যায় ৪১ পয়েন্ট। তবে লেনদেন শেষে বিএসইসি এবং এনবিআরের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা দেয়া হয়, যে পুঁজিবাজারে ব্যক্তির ক্যাপিটাল গেইন আগের মতোই আয়কর মুক্ত। গতকাল বৃহস্পতিবার সূচক উঠানামা করে লেনদেন আগাতে থাকলেও শেষ এক ঘণ্টায় তা বাড়ে টানা। এই সময়ে সূচক বাড়ে মোট ৪১ পয়েন্ট। তবে শেষ সময়ের সমন্বয়ে দিনের সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে ৮ পয়েন্ট কমে শেষ হয় লেনদেন। আগের দিন ৫০ পয়েন্ট সূচক কমার পরদিন ২৭ পয়েন্টের উত্থান নিঃসন্দেহে বিনিয়োগকারীদের মনের চাপ কমবে। পুঁজিবাজার নিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে মতভেদের বিষয়টিও আলোচনায় আছে। দুটি পক্ষের মধ্যে দ্ব›েদ্বর প্রভাব পুঁজিবাজারে- এ নিয়ে আলোচনা আছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রভাবশালী একটি পক্ষ একটি বিশেষ গ্রুপের শেয়ারে বিনিয়োগ বাড়াতে চাইছিল, অন্য পক্ষ চাইছে, অন্য গ্রুপে বিনিয়োগ বাড়াতে। তাদের মধ্যে মতভেদের প্রভাবও আছে পুঁজিবাজারে। ব্যক্তির পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমার লক্ষণও স্পষ্ট। ফ্লোর প্রাইসের পাশাপাশি ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা ও এক্সপোজার লিমিট গণনা পদ্ধতি শেয়ারের ক্রয়মূল্যে করার সিদ্ধান্ত আসার পর যে লেনদেন ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে, যা এখন ১ হাজার কোটির দিকে নামছে। ২৫ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় কর্মদিবসে লেনদেন পৌনে ২ হাজার কোটির নিচে নামেনি। এর মধ্যে ৪ সেপ্টেম্বর তা ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা ছাড়ায়। ৭ সেপ্টেম্বরও তা ২ হাজার ২০০ কোটি ছাড়ায় গত বছরের অক্টোবরের পর এত বেশি লেনদেন আর হয়নি। কিন্তু ৮ সেপ্টেম্বর থেকে লেনদেন টানা কমছে। এর মধ্যে আজ হাতবদল হয়েছে ১ হাজার ২৪২ কোটি ৭৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা যা গত ২৪ আগস্টের পর সর্বনি¤œ। সেদিন হাতবদল হয় ১ হাজার ১৩৩ কেটি ৭১ লাখ ৬২ হাজার টাকার শেয়ার। তবে পুঁজিবাজার সে সময় ঘুর দাঁড়াচ্ছিল, যে কারণে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে লেনদেন বিনিয়োগকারীদের মনের ভার দূর করছিল। আগের দিনে ডলারের সর্বোচ্চ দরপতন ও পরে এনবিআর আয়কর পরিপত্র নিয়ে ধোঁয়াশায় বাজার যে পরিমাণ পড়েছিল সেটা কাটিয়ে গতকালের উত্থান স্বস্তিদায়ক। এবং সেই হিসেবে টার্নওভার যেটা হয়েছে সেটা খারাপ বলা যায় না, ভালোই।
পর্যালোচনায় আরো জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এমন ১০টি কোম্পানির মধ্যে পাঁচটি স্বল্প মূলধনি। এর মধ্যে দুটিসহ মোট তিনটি কোম্পানি লোকসানি, যেগুলো থেকে অদূর ভবিষ্যতেও মুনাফায় ফিরতে পারবে কিনা, তা নিয়ে আছে সংশয়। সবচেয়ে বেশি ১০ শতাংশ দর বেড়েছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিডিকম অনলাইনের। আর লোকসানি হাক্কানি পাল্পের দর বেড়েছে প্রায় সমপরিমাণ। গত মার্চ পর্যন্ত তৃতীয় প্রান্তিক শেষে শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৬ পয়সা লোকসানে থাকা কোম্পানিটি গত পাঁচ বছরে মুনাফা করতে পেরেছে একবারই।
গত দুই বছর শেয়ার প্রতি ১০ পয়সা করে লভ্যাংশ দেয়া সি পার্লের অবস্থান তৃতীয় স্থানে। দর বেড়েছে ৯.৮৭ শতাংশ। চতুর্থ অবস্থানে আছে জেএমআই হসপিটাল, যার দর বেড়েছে ৯.৬৫ শতাংশ। ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবে যাওয়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিআইএফসি বছর দুয়েক আগেও দুই টাকার ঘরে লেনদেন হচ্ছিল, সেটি এখন অভিহিত মূল্যকে ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে গতকাল বেড়েছে ৯.৪৭ শতাংশ। এরপরের অবস্থান লোকসানি পাট কোম্পানি নর্দার্ন জুট, যার দর বেড়েছে ৮.৭৫ শতাংশ। স্বল্প মূলধনি রহিম টেক্সটাইলের দর বেড়েছে ৮.৭৪ শতাংশ। ওষুধ খাতের কোম্পানি ওরিয়ন ইনফিউশনের বিস্ময়কর উত্থান অব্যাহত রয়েছে। তিন মাসে পাঁচ গুণের বেশি দর বাড়া কোম্পানিটি গতকাল বেড়েছে ৮.৭৪ শতাংশ। জুনের শুরুতে ৮০ টাকার নিচে থাকা কোম্পানিটির দর এখন ৪৬৭ টাকা ৪০ পয়সা। একই গ্রুপের আরেক কোম্পানি বিকন ফার্মার দর বেড়েছে ৮.৭২ শতাংশ। আগের দিন দর ছিল ২৯৫ টাকা ৮০ পয়সা। বেড়ে হয়েছে ৩২১ টাকা ৬০ পয়সা। লোকসানের কারণে এক যুগেও লভ্যাংশ নিতে না পারা জুন স্পিনার্সের দরও বাড়ছেই। ৮.৭২ শতাংশ বেড়ে এখন তা দাঁড়িয়েছে ২২৮ টাকায়। গত অর্থবছরে শেয়ার প্রতি ৪২ টাকা ১০ পয়সা লোকসান দেয়া কোম্পানিটি গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের তিন প্রান্তিকে লোকসান দিয়েছে ৩৬ টাকা ৫০ পয়সা। শেয়ারপ্রতি কোনো সম্পদ নেই, উল্টো দায় তৈরি হয়েছে ৪২৬ টাকার। এর উত্থানের কারণ কোম্পানির উৎপাদন আবার শুরুর ঘোষণা। এদিন কোম্পানিটি ঘোষণা দিয়েছে, তারা পরীক্ষামূলক উৎপাদনে সফল হওয়ার পর পুরোপুরি উৎপাদনে যাচ্ছে। স্বল্প মূলধনি কে এন্ড হক, আজিজ পাইপ, অ্যামবি ফার্মা, রংপুর ফাউন্ড্রি, সোনালি আঁশ, জিকিউ বলপেন, মুন্নু অ্যাগ্রো, সমতা লেদার, ওয়াটা কেমিক্যালসের মতো স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বেড়েছে অনেকটাই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়