মিতু হত্যাকাণ্ড : আদালতে চার্জশিট দাখিল, শুনানি ১০ অক্টোবর

আগের সংবাদ

নতুন ৮ নদীর পানিবণ্টনে নজর : আলোচনায় সম্মত বাংলাদেশ ও ভারত, আগামী মার্চ এপ্রিলে ঢাকা সফরের সম্ভাবনা ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রীর

পরের সংবাদ

আসুন আনন্দে হাসি বেদনাও করি ভাগাভাগি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শুভপ্রবণতার কথা অনেকের লেখায় পড়েছি। কিছু ভালো কথা নিশ্চয়ই অনেকেই বলেছেন; কিন্তু বাস্তবতা কখনোই একরৈখিক নয়; তারপরও আশাবাদী মানুষ সংস্কৃতির শুভপ্রবণতার হাল ছাড়তে চায় না; যদিও সবাই জানি বহুমাত্রিক বাস্তবতার সমুখে দাঁড়িয়ে একমুখী কথায় সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায় না। এ সত্য মাথায় নিয়েই কথা শুনছিলেন মুগ্ধ তরুণ সংস্কৃতজনেরা।
‘আমরা অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চাই; কিন্তু হায়! মানুষ কখনো অতীতে ফিরে যেতে পারে না- তর্পণ করতে পারে মাত্র; সময়ের বাস্তবতায় আজ আমরা যেখানে দাঁড়িয়েছি, সেখানে সবার প্রত্যাশিত উজ্জ্বল অতীত ফিরিয়ে আনা স্বাভাবিক অবস্থায় দুর্লঙ্ঘ নয়, অলঙ্ঘই বলা যায়। সবার প্রত্যাশা পূরণে সর্বৈব এক বিপ্লব অত্যাবশ্যক।
১৯৭১-এ যে জাতি বঙ্গবন্ধুর এক তর্জনীর মাথায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলে; যে জাতি ৩০ লাখ মানুষের বুকের রক্ত, দুই লক্ষাধিক মা-বোনেরা সম্ভ্রম আর দীর্ঘ যন্ত্রণা সহ্য করে স্বাধীন করেছিল দেশ; সেই জাতি স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধুর মতো অবিসংবাদিত এক মহান নেতাকে সপরিবারে হত্যা করেছে, কলঙ্কিত করেছে ইতিহাস; ১৯৭৫-এর পর যে জাতি দীর্ঘ একুশ বছর ধরে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের প্ররোচনা ও ষড়যন্ত্রে বিভ্রান্তির লজ্জা মাথা পেতে নিয়েছে। যে জাতি আজ বহুধা বিভক্ত; যখন আমাদের স্বার্থের সমুখে নীতিবোধ অবনত; তখন সবার প্রত্যাশা কীভাবে পূর্ণ হবে জানি না।
তারপরও ‘যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ!’ শুভ চেতনার কথা আমাদের বলে যেতে হবে। আজ আমরা এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মিথ্যাকে প্রত্যাখ্যান করে সত্য উচ্চারণ করতে চাই, যখন আমাদের সমাজ-পরিপার্শ্ব স্তুতি আর স্তাবকতায় নিমজ্জিত। যখন ব্যক্তি স্বার্থের কাছে মূল্যবোধ বিপন্ন! কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি সংস্কৃতিকর্মীরাই পারে মানুষের কল্যাণ চিন্তায় স্রোতের বিপরীতে উজানে চলতে। আশা করি শুভ চেতনার পক্ষে সবাই সক্রিয় থাকবেন।’
সভাপতির সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেই সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ময়মনসিংহের বিশেষ সাধারণ সভার কাজ শুরু করলেন ময়মনসিংহ জোটের যুগ্ম আহ্বায়ক দেশের বিশিষ্ট কবি-নাট্যকার-গবেষক ফরিদ আহমদ দুলাল। সভাপতির সূচনা বক্তব্যের আগে জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। মিলনায়তনের শতাধিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের দেড় শতাধিক সংগঠক/ সংস্কৃতিকর্মী সভাপতির বক্তব্যে চেতনাদৃপ্ত কণ্ঠে আগামীর শুভ সংগ্রামে যুক্ত হতে ঐকমত্য প্রকাশ করেন। সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়-
ময়মনসিংহে দ্রুততম সময়ে সংস্কৃতিপল্লী প্রতিষ্ঠার দাবি চলমান থাকবে; সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ময়মনসিংহ বাঙালি সংস্কৃতির পক্ষে সোচ্চার থাকবে প্রতিদিন; যারা সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে বিঘœ ঘটাতে চায় তাদের প্রতিহত করতে সবাই তৎপর হবেন; উপজেলা পর্যায়ে শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম প্রসারিত করার দাবি অব্যাহত থাকবে; প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলকভাবে সাংস্কৃতিক কর্মসূচি চালু করতে হবে; জাতীয় বাজেটে সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর আর্থিক সহযোগিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সঠিক সংগঠনকে সহযোগিতা প্রদান করতে হবে। এসব দাবি নিয়ে যখন তরুণ সংস্কৃতিকর্মীরা সোচ্চার, সঙ্গত কারণেই আশা করা যায় ‘শিল্প ও সংস্কৃতির নগরী ময়মনসিংহ’ নিশ্চয়ই নতুন করে উজ্জীবিত হবে; ফিরে পাবে তার অতীত ঐতিহ্য। লোকসংস্কৃতির আকর ভূমি ‘ময়মনসিংহ গীতিকা’র পরম্পরা নিয়ে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনায় ১১ সেপ্টেম্বর রবিবার বিকেল ৪টায় শহীদ আবদুল জব্বার মিলনায়তন, ময়মনসিংহ জেলা পরিষদে অনুষ্ঠিত হয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ময়মনসিংহের বিশেষ সাধারণ সভা; যে সাধারণ সভার অভিজ্ঞতাই বলছিলাম এতক্ষণ। শুদ্ধ সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে ময়মনসিংহের সংস্কৃতিকর্মীরা তাদের পূর্বসূরিদের অর্জনগুলো ধারণ ও লালন করে বলিয়ান হতে চায়!
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ময়মনসিংহের বিশেষ সাধারণ সভায় সংস্কৃতির শহরে শতাধিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের বক্তব্যে এমন ধ্বনিই উচ্চারিত হয়!
সভায় বক্তব্য রাখেন লোক কৃষ্টি সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এড. এম এ কাশেম, সত্যের সন্ধান লোক সাংস্কৃতিক সংস্থার সভাপতি শাহ্ সাইফুল আলম পান্নু, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ময়মনসিংহ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম দুদু, বাংলার মুখ-এর সভাপতি লে.কর্নেল (অব) ড. শাহাব উদ্দিন, বঙ্গবন্ধু শিশু একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক দিলরুবা শারমিন, নাট্যাঙ্গন নাট্য পরিবারের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল এহসান জহির, বঙ্গবন্ধু শিশু একাডেমির সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম সরকার, অনসাম্বল থিয়েটারের সভাপতি আবুল মনসুর প্রমুখ। সঞ্চালনায় ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ময়মনসিংহ শাখার সদস্য এড. আবদুল মোত্তালেব লাল।
বিস্তারিত আলোচনা ও মতবিনিময়ের পর আগামী ৯০ দিনের জন্য কবি ফরিদ আহমদ দুলালকে আহ্বায়ক, মনিরা সুলতানা মনি এমপি, এড. এম এ কাশেম, শাহ সাইফুল আলম পান্নু, ড. কর্নেল (অব.) শাহাবুদ্দিন, মো. সাইফুল ইসলাম দুদু, অধ্যাপক দিলরুবা শারমিন ও সাইফুল এহসান জহিরকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং এড. আবদুল মোত্তালেব লালকে সদস্য সচিব করে মোট ৮১ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটি ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টায় ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস সংলগ্ন জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে জোট আহ্বায়কের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এবং শপথবাক্য উচ্চারণ করে; শপথবাক্য উচ্চারণের আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ময়মনসিংহ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এড. মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ময়মনসিংহের নবগঠিত কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে সংক্ষেপে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতির জনকের প্রতি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়