গাজীপুরে সালনা রিসোর্ট ও পিকনিক স্পট উদ্বোধন

আগের সংবাদ

ব্যবসায়ীদের দাবি : দাম বাড়িয়েও পোষাচ্ছে না

পরের সংবাদ

ভিনগ্রহবাসী

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

হঠাৎ করেই প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। দুনিয়া আলো করে ক্ষণে ক্ষণে বিজলি চমকাতে লাগল। কলজে কাঁপানো শব্দে কোথাও বাজ পড়তে শোনা গেল। এই ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেই ওটা মৃদু পায়ে হেঁটে এগিয়ে চলল। আবছা আলোকে তার চোখ জোড়া জ¦লজ¦ল করে জ¦লছে। দেখে মনে হলো যেন ওগুলো আসলে চোখ নয়। গাড়ির হেডলাইট। ওর চোখ থেকে নীল রঙের আলো ছড়িয়ে পড়ছে। নীল আলোয় আশপাশ স্বপ্নময় হয়ে উঠেছে। ওটা দেখতে অনেকটা মানুষেরই গড়ন। মানুষের মতো ওরও হাত আছে, পা আছে। তবে হাত-পায়ে মিলিয়ে ষোলোটি মোটে আঙুল। মস্ত আয়তাকার মাথা। মাথায় কোনো চুল নেই। মাথায় চুল না-থাকলেও দেখতে মোটেও খারাপ লাগছে না।
আপনমনে হেঁটে হেঁটে ওটা যেখানে এসে থামল, সে বড় এক আম গাছ। গাছ ভরা পাকা পাকা আম। ঝড়ের দাপটে গাছের নিচে দুপদাপ করে আম পড়ছে। ইনু, মিনু, শিনা, মিনা ও তুতু ঝরে পড়া ওসব আম কুড়িয়ে জমাচ্ছে। কেউ কারও দিকে তাকাচ্ছে না। তাকানোর যেন সময় নেই। ব্যস্ত হয়ে ওরা ঝরে পড়া আম কুড়াচ্ছে।
এমন সময় হঠাৎ টসটসে পাকা একটা আম প্রাণীটার সামনে এসে পড়ল। অমনি আমটি ধরতে ছেলেমেয়েরা ওর কাছে ছুটে এলো। আমটির ওপর তারা ঝাঁপিয়ে পড়ল। ইচ্ছেমতো মাটিতে গড়াগড়ি খেলো। কিন্তু কেউ আমটা ধরতে পারল না। ধরবে কেমন করে? ওদের ধরার আগেই যে অদ্ভুত প্রাণীটা আমটি তুলে নিলো।
ওর এরকম কাণ্ড দেখে ছেলেমেয়েরা কেমন যেন থ হয়ে গেল। প্রাণীটাকে ঘিরে ওরা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। ভয়ে নাকি বিস্ময়ে ঠিক বোঝা গেল না। তবে ওরা একে অন্যের মুখপানে চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল। ওদের এই কাণ্ড দেখে প্রাণীটা কিছুটা মজাই পেল। মৃদু হেসে ওঠল সে।
অমনি তুতু প্রাণীটাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘ল²ী ভাই। আমটা আমায় দিয়ে দাও। এটা খেতে ভারি মজা হবে।’
ইনু বলল, ‘ওকে দিও না। আমাকে দাও। আমিই প্রথম আমটা দেখেছিলাম।’
শিনা বলল, ‘না না। আমটা তুমি ওদের দিও না। ওটা আমাকে দিয়ে দাও।’
সে সময় মিনা এগিয়ে এসে বলল, ‘ওটা আমাকে দাও ভাই। ওটা আমাকে দাও।’
ওদের কথা শুনে প্রাণীটা বলল, ‘এটা আমি কাউকে দিতে পারব না। এই আম সংরক্ষিত হবে। এই আম নিয়ে বিরাট গবেষণা হবে।’
প্রাণীটার কথাগুলো ওদের কাছে কেমন যেন যান্ত্রিক বলে মনে হলো। তাই ছেলেমেয়েরা সন্দেহের দৃষ্টি মেলে ওর দিকে তাকাল। তুতু অবাককণ্ঠে প্রাণীটাকে জিজ্ঞেস করল, ‘আমটা সংরক্ষিত হবে মানে কী?’
ইনু বলল, ‘আমটি নিয়ে গবেষণা হবে মানে কি?’
ওদের প্রশ্নের জবাবে প্রাণীটা আবারো মৃদু হাসল। পরে হাসি থামিয়ে বলল, ‘আম্র অতি সুস্বাদু ফল। এটা পৃথিবী ছাড়া মহাবিশ্বের আর কোনো গ্রহে পাওয়া যায় না। তাই আমি এটাকে আমাদের গ্রহে নিয়ে যাব। ওখানে আম নিয়ে বিরাট গবেষণা হবে।’
প্রাণীটার এই কথা শুনে শিনা অবাক কণ্ঠে বলল, ‘ওমা! সে কী কথা গো। সামান্য একটা আম নিয়ে তুমি তোমার গ্রহে যেতে চাচ্ছো। কী আজব গ্রহ না জানি! তা তোমার গ্রহটার নাম কি ভাই?’
শিনার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে মিনা বলল, ‘তুমি কী তাহলে ভিনগ্রহবাসী?’
ইনু এবং তুতুও বলল, ‘সত্যি করে বলো তুমি আসলে কে?’
ওরা যখন এভাবে কথা বলায় ব্যস্ত, ঝড়-বৃষ্টি তখনো ঝরে চলেছে। ঝড়ের দাপটে আম গাছের ডালপালা মরমর করে ওঠছে। এই বুঝি আমসহ ডালপালা সব ভেঙে পড়ে। ওদের প্রশ্নের জবাবে প্রাণীটা এবার সরব হয়ে ওঠল। বলল, ‘আমি আসলেই একজন ভিনগ্রহবাসী। তোমরা আমার কথা ঠিক বিশ্বাস করবে কী না জানি না। তবু বলছি শোনো।’
বলে প্রাণীটা তার নীল আলোর চোখ দুটো মেলে একবার ভালো করে ওদের দেখে নিলো। দেখে কিছু একটা আঁচ করার চেষ্টা করল। আঁচ করতে পারল কী না কে জানে? পরে সে হাসি হাসি মুখ করে বলতে লাগল- ‘আমাদের গ্রহটির নাম- অ্যারিয়েন। অ্যারিয়েন মাঝারি আকারের একটা গ্রহ। পৃথিবী থেকে আড়াই হাজার কোটি আলোকবর্ষ দূরে এর অবস্থান। গ্রহটির আকাশ বেগুনি রঙের। গাছপালা সব হলুদ রঙের। তবে আশ্চর্য ব্যাপার হলো, তোমাদের পৃথিবীর মতো ওখানে জীবিত কোনো পশুপাখি নেই। যা আছে সবই আমাদের নিজ হাতে তৈরি। রোবট পশুপাখি।’
এটুকু বলে প্রাণীটা একটু থামল। কিছু একটা ভাবল। কানের মধ্যে ছোট একটা যন্ত্র লাগিয়ে বিড়বিড় করে কী যেন বলল। দেখে মনে হলো ওর কানের যন্ত্রটা কিছু একটা যোগাযোগ যন্ত্র। যা দিয়ে সে এইমাত্র কারো না কারো সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করল। ছেলেমেয়েরা অবাক চোখে ওর কাণ্ডকীর্তি সবই দেখল। শিনা হঠাৎ বলে ওঠল, ‘তুমি কারো সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করলে নাকি?’
শিনার কথা শুনে প্রাণীটা মৃদু হাসল। কান থেকে যোগাযোগ যন্ত্রটা খুলে জামার পকেটে রাখল। বলল, ‘তোমার ধারণা সঠিক। মহাকাশে একটা সমস্যা হয়েছিল। আমাদের মহাকাশযানটা ঝড়ের কবলে পড়েছিল। মহাকাশযান থেকে আমি ছিটকে পড়ে গিয়েছিলাম।’
ওর কথা শুনে তুতু জানতে চাইল, ‘তোমার মহাকাশযানটা এখন কোথায় আছে?’
অদ্ভুত প্রাণীটা বলল, ‘এখান থেকে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে আছে। ঝড়-বৃষ্টি থামলে ওটা আমাকে নিতে আসবে।’
ইনু বলল, ‘তুমি তাহলে সত্যি সত্যিই ভিনগ্রহবাসী?’
জবাবে প্রাণীটা বলল, ‘তো আর বলছি কী!’
মিনু বলল, ‘আচ্ছা। তোমার সঙ্গে আর কে কে আছে?’
ভিনগ্রহবাসী বলল, ‘আমরা চার বন্ধু। রোহান, জোহান, মিটি আর আমি ইটি।’
‘ইটি’ খুবই সুন্দর একটা নাম! বলল মিনা। বলে সে কেমন যেন গম্ভীর ভাব ধরল। পরে নীরবতা ভেঙে বলল, ‘আচ্ছা ইটি। তোমরা পৃথিবীতে এসেছ কেন?’
মিনার কথার জবাবে ইটি বলল, ‘আর বলো না। আমার বন্ধু রোহানটা ভারি কৌতূহলী। সে একদিন বলল- চলো পৃথিবীটা একবার দেখে আসি। তাই আসা আরকি।’
ইটির কথা শুনে তুতু বলল, ‘তা পৃথিবীকে কেমন দেখলে?’
ইটি বলল, ‘দেখা আর হলো কোথায়। দেখতে কী পারলাম! আচমকা ঝড়-বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আমাদের সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেল।’
ইনু বলল, ‘এখন তাহলে কী করবে ঠিক করেছ কিছু?’
ইটি বলল, ‘কী আর করব। অ্যারিয়েনে ফিরে যাব। অন্য সময় একবার এসে পৃথিবীটা দেখে যাব। পৃথিবীর সুনীল আকাশ, সবুজ গাছপালা আমাকে বড় টানে।’
ইটি আরো কিছু বলতে চাচ্ছিল। কিন্তু আর বলা হলো না। আচমকা অদূরে শোঁ শোঁ ধরনের একটা আওয়াজ শোনা গেল। আওয়াজটা শুনে ছেলেমেয়েরা কেমন যেন সতর্ক হয়ে গেল। বড় বড় চোখ করে তারা আশপাশে কিছু একটা খোঁজাখুঁজি করতে লাগল। কী খুঁজছে ঠিক বোঝা গেল না। হয়তো বা শোঁ শোঁ আওয়াজের উৎসটাকেই ওরা খুঁজে চলল। কিন্তু বেশিক্ষণ আর তাদের খুঁজতে হলো না। বিরাট ঈগল পাখির মতো দেখতে কিছু একটা মহাকাশযান আম গাছের তলে এসে অবতরণ করল। ওটা থেকে নীল রঙের একপ্রকার আলোকরশ্মি বেরুতে দেখা গেল। মহাকাশযানটির দরোজা খোলায় একধরনের ধাতব আওয়াজ শোনা গেল। ততক্ষণে ঝড়-বৃষ্টিও থেমে গেছে। নিজেদের মহাকাশযানটি দেখে ইটির চোখ জোড়া খুশিতে চিকচিক করে ওঠল। আচমকা চিৎকার করে ওঠল সে, ‘ওই যে এসে গেছে। আমাদের প্রিয় মহাকাশযান!’
বলে আর মুহূর্তকাল দেরি করল না ইটি। ঈগল পাখি আকৃতির মহাকাশযানটিতে গিয়ে চড়ে বসল। চোখের পলকে ইটিকে নিয়ে মহাকাশযানটি মহাশূন্যে উড়াল দিলো। ইনু, মিনু, শিনা, মিনা ও তুতু ফ্যাল ফ্যাল করে সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। মিনা হঠাৎ অসহায়ের মতো হাহাকার করে ওঠল- ‘আহা হা!’
ওর এরকম হাহাকার শুনে সঙ্গীরা ব্যাপার বোঝার জন্য ওর দিকেঘুরে দাঁড়াল। ইনু জিজ্ঞেস করল, ‘কী হয়েছে তোর। কোনো সমস্যা?’
মিনা শান্ত কণ্ঠে বলল, ‘না, সমস্যা বিশেষ নেই। বুদ্ধি করে ভিনগ্রহবাসীকে জিজ্ঞেস করলে আমরা জেনে নিতে পারতাম- ও হোমোস্যাপিয়েন্স নাকি অ্যালিয়েন!’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়