ফুটপাত থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার

আগের সংবাদ

জ্বালানি তেলের দাম কমল : কেরোসিন ডিজেল পেট্রোল অকটেনের দাম কমেছে লিটারে ৫ টাকা, প্রজ্ঞাপন জারি

পরের সংবাদ

মেঘমগ্ন

প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আজ অনেক দিন পর তারিকুলের মেসেজ পেল তারাননুম। মেসেজগুলো বারবার মন দিয়ে পড়ল। এতদিনের জমানো অভিমান ফিকে হয়ে আসছে। মেসেজ পড়তে পড়তে মন হালকা লাগছে তার। হঠাৎ মোবাইলটা টুংটাং করে উঠল। তারিকুলের দ্বিতীয় মেসেজ। আজ এক বার দেখা করতে চায়। ওর ফ্ল্যাটে। আর্জেন্ট। মনে মনে হাসল তারাননুম। এই আর্জেন্সি সেও চেয়েছিল! তার প্রিয় টেক্সট। হৃদযন্ত্রটা আজ একটু বেশিই লাফাচ্ছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে বেরিয়ে পড়ল সে।
ভূমিকা না করেই কথাগুলো বলল তারিকুল, একটা কথা বলব বলে তোমায় ডেকেছি তারাননুম। জানি কষ্ট পাবে। এই মুহূর্তে কথাগুলো শুনে তোমার নিজেকে অসুরক্ষিত মনে হবে। তবু এ কথাগুলো একটা মুহূর্তের জন্যও গোপন করা অন্যায়।
তারাননুম বুঝতে পারে সিরিয়াস কিছু। সে ভীরু ও জিজ্ঞাসু চোখে তারিকুলের দিকে তাকাল। তারিকুল শান্তস্বরে বলল, আজ সকালে আদিবা ফোন করেছিল। ও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। কেসটা উইথড্র করার জন্য রিকোয়েস্ট করছে। আবার এখানে ফিরতে চাইছে।
– তুমি কী বললে?
– আদিবা খুব অসহায় তারাননুম। এই মানসিক সাপোর্টটা না পেলে আরো বড়সড় কোনো ভুল করে ফেলবে।
– আর আমি?
– আমরা একই বাড়িতে হয়তো থাকতে পারব না, কিন্তু তুমি যখন চাইবে, আমাকে পাশে পাবে তারাননুম।
পাথরের মতো স্থির হয়ে বসেছে তারাননুম। হাতের পাতার ওপর তারিকুলের হাতটা বরফ শীতলের মতো লাগলো, আঙুল বেয়ে যা ছড়িয়ে পড়েছে শরীরের সব কোণে। তারাননুম অনুভব করছে তার চারপাশের পৃথিবীটা ক্রমশ শীতল হয়ে আসছে। বরফের মতো কঠিন।
তারাননুমের বিয়ের পরের কথা। সে তখন পাঁচ মাসের প্রেগন্যান্ট। স্বামী সুমন চাকরিজীবী মানুষ। দিনরাত কাজ নিয়ে থাকতে ভালোবাসতো। বাসা আর অফিসে শুধু কাজ আর কাজ। যেভাবে প্রমোশন হবে ভেবেছিল সুমন, হয়নি। লোনের চাপ, অন্যদিকে তারাননুমের পেছনে খরচ। তাদের মেয়ে হলো। খরচ বাড়তে শুরু করল। নিজেকে গুটিয়ে নিল সুমন। বাড়ি ফিরেই কম্পিউটার খুলে বসে যেত। শেয়ার মার্কেট, অনলাইন জুয়া। সারাক্ষণ শুধু টাকা আর টাকা! অথচ তাদের সংসারে তেমন অভাব ছিল না। তবুও ঘোর থেকে বেরোতে পারেনি সুমন। তার ভেতরের সেই ইনোসেন্ট ছেলেটা একটু একটু করে যেন ভ্যানিশ হয়ে গেল। সেই নিঃসঙ্গ সময়ে তারিকুলের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তারাননুমের। তারিকুলকে ভালোবেসে ফেলল সে।
তারিকুলের ডিভোর্সের কেস চলছিল। পারিবারিক সূত্রে বিয়ে হয়েছিল তাদের। মাস দুয়েক এক সঙ্গে ছিল তারা। তারপর হঠাৎ একদিন আদিবা পুরনো প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যায়। এক বছরের মাথায় আসে ক্ষমা চাইতে। এত সবের পরও তারিকুল তাকে বুঝিয়েছিল, ভেঙে ফেললে কিন্তু আর কোনো সুযোগই হাতে থাকবে না। বলেছিল, ‘হয়তো এভাবেও চলতে চলতে একদিন আমরা পরস্পরকে ভালোবেসে ফেলব।’ আদিবা নাছোড়। তারও বছর দুয়েক পর বাধ্য হয়ে তারিকুল ডিভোর্স চায়। আদিবা বেঁকে বসে। আসলে তত দিনে সে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে এসেছে। কিন্তু হিয়ারিংয়ের গত দুটি ডেট ও অ্যাবসেন্ট। আদিবার ব্যাপারে কিছুই তারাননুমের থেকে লুকায়নি তারিকুল। আজ তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বাঁচতে চাইছে তারাননুম।
মুঠোর ভেতর তারাননুমের হাতটি ভরে নিয়ে তারিকুল বলল, জীবন একটা পূর্ণদৈর্ঘ্য আকাশ, তারাননুম। আকাশের মেঘও সব সময় এক রকম থাকে না। কখনো কালো মেঘ, তো কখনো সাদা মেঘ। ভালোভাবে বাঁচতে জানাটাই হলো আসল কথা। জীবন সম্পর্কে যার সঠিক ধারণা আছে, সে ঠিক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে। নিজেকে কখনো পরিস্থিতির কাছে অসহায় হতে দিও না। আমার মতোন ভুল করে তোমার হাজব্যান্ডকে ডিভোর্স দেয়ার কথা কখনো আর ভেবো না। তুমি যেমন আমাকে নিয়ে সুখি হওয়ার ভাবনা ভেবেছ, আমিও তোমাকে ভেবেছি। আমাদের কারোর সংসারই ভাঙবে না যদি আমরা নিজ নিজ জায়গা থেকে আমাদের ঘরের মানুষটির প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিই। তুমি আমার কথায় কষ্ট পেও না তারাননুম। এই সত্যকে মেনে নিয়ে আসো দুজন দুজনের জন্য শুভকামনা করি।
নিজের হাতটি তারিকুলের মুঠোয় থেকে ছাড়িয়ে নিল তারাননুম। তারপর মন্থর গতিতে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। পেছনে তারিকুল একবার ডাকলও না। অবশ্য প্রয়োজনও বোধ করছে না সে তারিকুলের ডাকের। আবেগে শরীর ও মন উজাড় করে দিয়েছিল যাকে, সেই লোকটির শত ডাকেও তারাননুম কোনোদিন আর ফিরবে না। এখন তার মন ছুটছে নিজের বাড়ির দিকে। সুমনের বাড়ি ফেরার সময় হয়েছে। আজ সুমনের জন্য কিছু প্রিয় খাবার রান্না করবে। আকাশে পুঞ্জীভূত মেঘ। আলকাতরার রং মাখা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। আকাশের এই রং ভালো লাগছে তারাননুমের!

জুয়েল আশরাফ : বাহ্রা চরকান্দা, নবাবগঞ্জ, ঢাকা

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়