মায়ের বিরুদ্ধে শিশু সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ

আগের সংবাদ

ডলারে বেসামাল অর্থনীতি : ১২০ টাকা দিয়েও পাচ্ছেন না গ্রাহক > ৬ ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে সরিয়ে দেয়ার নির্দেশ

পরের সংবাদ

আর্থিক ক্ষতির শঙ্কায় নওগাঁর পাট চাষিরা

প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আবু বকর সিদ্দিক, নওগাঁ থেকে : কৃষিতে সমৃদ্ধের জেলা নওগাঁয় এবার সোনালি আঁশ খ্যাত পাটের আবাদ ভালো হয়েছে। সঠিক পরিচর্চা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ও দামে খুশি চাষিরা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ার কারণে ডোবা ও খাল-বিলের পানি শুকিয়ে গেছে। এতে চাষিরা পাট পচাতে ও আঁশ ছাড়াতে পারছেনা ঠিকমতো। এতে করে চরম বিপাকে চাষিরা। এখন তাকিয়ে আছেন প্রকৃতিতে বৃষ্টির অপেক্ষায়। পাশাপাশি আশঙ্কা করছেন লোকসানের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে নওগাঁ জেলায় ৬ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। জেলায় এ বছর দেশি, তোষা এবং মেস্তা জাতের পাট চাষ হয়েছে। দেশি জাতের মধ্যে সিভিএল-১ ও ডি ১৫৪ জাত, তোষা জাতের মধ্যে ও-৪ এবং ৭২ জাতের পাটের আবাদ হয়েছে। উপজেলাভিত্তিক পাট চাষ হয়েছে, সদর উপজেলায় ৬০০ হেক্টর, রানীনগরে ৪০ হেক্টর, আত্রাইয়ে ২৫০ হেক্টর, বদলগাছীতে ১ হাজার ৪৬০ হেক্টর, মহাদেবপুরে ২০০ হেক্টর, পত্মীতলায় ১৫০ হেক্টর, ধামইরহাটে ৮৩০ হেক্টর এবং মান্দায় ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় এ বছর কোনো পাট চাষ হয়নি। চাষিরা বলছেন, সনাতন পদ্ধতিতে পাট জাগ দিতে এখন ডোবা, খাল, বিল ও নদীর ওপর নির্ভর করতে হয়। যে এলাকায় ডোবা ও খাল রয়েছে সেখানে পানির পরিমাণ কম, আবার অনেক এলাকায় পানি সংকটে পড়েছেন চাষিরা। গত বছর দাম ভালো পেয়ে এবার অনেক চাষিরা বেশি পরিমান জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। উৎপাদনও ভালো হয়েছে। তবে শেষ মুহূর্তে অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও খরার কারণে পানির সংকটে চাষিরা পাট জাগ দেয়া নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।
নওগাঁ সদর উপজেলা বলিহার গ্রামের পাট চাষি আকবর মণ্ডল বলেন, আমরা খাল, বিল, ডোবা, জলাশয়ে যারা পাট জাগ দিয়ে থাকি এবার আমাদের অনেকটা হয়রানির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। আবার যে স্থানে সামান্য পানি আছে, সেখানে পাট চাষিরা জাগ দিয়ে পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়াচ্ছেন। যদি সময়মতো পাট জাগ না দিতে পারি তাহলে ফলন বির্পযয়ে পড়তে হবে। যার কারনে লোকসানও গুনতে হতে পারে।
মান্দা উপজেলার বৈর্দ্দপুর গ্রামের পাট চাষি আফসার আলী বলেন, আমি এবার ৩ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। জাগ দেয়া, আঁশ ছড়ানো, হাল, বীজ, সার, নিড়ানি ও পরিবহন খরচসহ পাট চাষে বিঘা প্রতি খরচ হয় ১০-১২ হাজার টাকার মতো। এক বিঘা জমিতে ভালো ফলন হলে ১০-১২ মণ পাট পাওয়া যায়। বাজারে এবার পাটের ভালো দাম আছে। তবে এর চেয়ে আরেকটু বেশি দাম হলে আমরা আরো লাভবান হতাম। বৃষ্টির পানির সংকট খুব। কোনো রকমে একটি ডোবায় আঁশ ছড়ানোর কাজ করছি। এবার পাটের দাম মোটামুটি ভালো, প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩২০০ টাকা করে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ কে এম মনজুরে মাওলার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, পাট চাষে চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৪২৫ হেক্টর কম অর্জিত হয়েছে। নওগাঁ মূলত ধানের জেলা।
এখানে আমরা পাটের আবাদ বৃদ্ধি করতে গেলে আউশ ধানের আবাদ কমে যাবে। এজন্য আমরা মূলত কৃষকদের পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করি না সেভাবে। এতে করে আউশ আবাদের বিঘœ ঘটতে পারে। এছাড়াও পাট জাগ দেয়ার সমস্যা তো আছেই। কারণ নওগাঁ জেলা বরেন্দ্র জনপদ।
পাট জাগ দেয়া নিয়ে চাষিদের সমস্যার বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টি ছিল। যার কারনে পাট কাটা এবং জাগ দিতে সমস্যায় পড়েছিল চাষিরা। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কিছুটা বৃষ্টি হয়েছে। এজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে যেখানে সুযোগ আছে ডোবা, পুকুর, খাল আছে সেগুলোতে পাটগুলো কেটে দ্রুত জাগ দেয়ার জন্য। দেরিতে পাট কেটে জাগ দিলে পাটের গুণগত মান কমে যায়। যেহেতু এখন বৃষ্টি শুরু হয়েছে সেক্ষেত্রে এ সমস্যা কেটে যাবে বলে আশা করছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়