ডি-৮ সিসিআই বিজনেস ফোরাম এন্ড এক্সপো শুরু আজ

আগের সংবাদ

জ্বালানি নিয়ে হুলুস্থুল : এক মাসের তেল মজুত, অর্ডার ৬ মাসের > রিজার্ভ কমায় আমাদের ঝুঁকি নেই

পরের সংবাদ

আইজিএ প্রকল্প সৃষ্টি করছে নতুন নারী উদ্যোক্তা : মিরসরাই

প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মোহাম্মদ ইউসুফ, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে : সংসার জীবনের ১২ বছরের মধ্যে স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম আর ৩ কন্যা সন্তানকে রেখে চলে যান স্বামী। এরপর অভাব-অনটন আর দুঃখ-কষ্টে জীবনধারণের পাশাপাশি সন্তানদের পড়ালেখা ও পরিবারের দায়িত্ব নিজ কাঁধে নেন ছেনোয়ারা বেগম। নিজ উদ্যোগে সেলাইয়ের প্রাথমিক কিছু কাজ শেখেন। পরবর্তী সময়ে মিরসরাই উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পরিচালিত ‘ইনকাম জেনেরেটিং অ্যাক্টিভিটিজ’ (আইজিএ) প্রকল্পের অধীনে ৩ মাসের সেলাই প্রশিক্ষণ নেন। এরপর থেকে ছেনোয়ারা বেগমের জীবনের গল্প পরিবর্তন হতে শুরু করে।
প্রথমে গ্রামের মহিলাদের কাপড় সেলাই করলেও এখন স্থানীয় বারইয়ারহাট পৌরসভায় নিতুল টেইলার্স নামে তার নিজের একটি দোকান রয়েছে। যেখানে ৫ জন মহিলা সেলাইয়ের কাজ করেন। পাশাপাশি মহিলাদের সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দেন ছেনোয়ারা বেগম। প্রতি মাসে তার ইনকাম ২৫-৩০ হাজার টাকা। নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। অন্য ২ জন পড়ালেখা করে। ছেনোয়ারা বেগমের মতো সহ¯্রাধিক নারী ফ্যাশন ডিজাইন এবং ক্রিস্টাল শোপিচ ও ডেকোরেটেড কেন্ডেল মেকিং (মোমবাতি) ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন সাবলম্বী হয়েছেন। জানা গেছে, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষণ’ শীর্ষক প্রকল্পের মিরসরাইয়ে ১৭তম ব্যাচে ফ্যাশন ডিজাইন এবং ক্রিস্টাল শোপিচ ও ডেকোরেটেড কেন্ডেল মেকিং (মোমবাতি) ট্রেডে এই পর্যন্ত প্রায় ৯০০ মহিলা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। আছমা নূরী ও রিমা রানী দুই ট্রেনার তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। বর্তমানে ১৬ ও ১৭তম ব্যাচে প্রশিক্ষণ চলছে। উপস্থিতির হারে প্রতিদিন যাতায়াত খরচ বাবদ প্রশিক্ষণ শেষে প্রতিজনকে ২০০ টাকা করে ১২ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।
ক্রিস্টাল শোপিচ তৈরিতে ছক্কা পুঁতি, পৃথিবী পুঁতি, পাল পুঁতি, লাউ পুঁতি, কাপরাঙ্গা পুঁতি, ডায়মন্ড পুঁতি, রগ সুতা প্রধানত ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ক্রিস্টাল শোপিচে ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকার পণ্যও তৈরি করা হয়ে থাকে। যেখানে পুঁজির চেয়ে ৩ গুণ বেশি লাভ। ফল, হাতের ব্যাগ, টিস্যু বক্স, ওয়ালমেট, পাখি, ফুল, ফলদানি, টুপিসহ বিভিন্ন শোপিচ তৈরি করা যায়। উদ্যোক্তারা তৈরিকৃত পণ্য স্থানীয় দোকানের পাশাপাশি অনলাইনে বিক্রি করে থাকেন।
শুধু ছেনোয়ারা বেগম নয় তার মতো সাবলম্বী হয়েছেন আরো অনেকে। গতকাল মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় কর্তৃক পরিচালিত ‘ইনকাম জেনেরেটিং অ্যাক্টিভিটিজ’ (আইজিএ) প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায় প্রশিক্ষণার্থীরা ২টি কক্ষে হরেক রকমের পুঁতি ও রগ সুতা দিয়ে বিভিন্ন ক্রিস্টাল শোপিচ তৈরির কাজ করছেন। সপ্তাহে ৫ দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। পাশের কক্ষে ব্লক, বাটিক, হ্যান্ডপ্রিন্ট, সেলাই, হাতের বুটিকসের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলতেছে। সেখানেও হাতে-কলমে সেলাই প্রশিক্ষণ, বুটিকসের কাজ শেখানো হচ্ছে।
ক্রিস্টাল ডিজাইনার ও উদ্যোক্তা আর্জিনা আক্তার সুবর্ণা স্থানীয় নিজামপুর সরকারি কলেজের বিবিএস ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি ক্রিস্টাল শোপিচ ও ডেকোরেটেড কেন্ডেল মেকিং (মোমবাতি) ট্রেডে ১৩ ব্যাচে প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে বাসায় ক্রিস্টালের বিভিন্ন শোপিচ তৈরির কাজ শুরু করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পেজ খুলে নিজ হাতে তৈরি ক্রিস্টালের শোপিচ বিক্রি শুরু করেন। প্রথমে অর্ডার কম থাকলেও এখন প্রতি মাসে ১০-১২ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেন। একজন বড় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি।
সুবর্না বলেন, উপজেলার স্থানীয় বাজারগুলোতে বিভিন্ন ডিজাইনের পুঁতি ও সুতা পাওয়া যায় না। মিরসরাই পৌরবাজার অথবা চট্টগ্রাম শহর থেকে কিনে আনতে হয়। স্থানীয়ভাবে ক্রিস্টাল শোপিচগুলোর চাহিদা এখনো কম হলেও অনলাইন মার্কেটে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। পড়ালেখা শেষ করে আরো বড় পরিসরে ক্রিস্টাল শোপিচ নিয়ে কাজ করতে চান তিনি।
ক্রিস্টাল শোপিচ ও ডেকোরেটেড কেন্ডেল মেকিং (মোমবাতি) ট্রেডের প্রশিক্ষক আছমা নূরী বলেন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পরিচালিত ‘ইনকাম জেনেরেটিং অ্যাক্টিভিটিজ’ (আইজিএ) প্রকল্পের অধীনে প্রতি ব্যাচে ২৫ জন করে ৩ মাসের কোর্স শেষে সনদ ও যাতায়াত ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে। প্রশিক্ষণে কলেজ শিক্ষার্থী ও সমাজের অবহেলিত নারীদের আগ্রহ বেশি লক্ষ্যণীয়। প্রশিক্ষণ শেষে সবাই স্ব স্ব উদ্যোগে উদ্যোক্তা হচ্ছেন। যার ফলে বঞ্চনার শিকার থেকে মুক্তি পাওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছেন নারীরা। প্রতি উদ্যোক্তা মাসে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকার ক্রিস্টাল শোপিচ বিক্রি করে থাকেন বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মেহের আফরোজ ভোরের কাগজকে বলেন, মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষণ’ শীর্ষক প্রকল্প চালু করা হয়। যার মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে ব্যবসার জন্য কেউ যদি ঋণ নিতে চান, তাহলে আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের আওতায় আমার দপ্তর থেকে ঋণ দেয়া হয়ে থাকে। প্রশিক্ষণ শেষে উদ্যোক্তারা সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতাও ফিরিয়ে আনছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়