ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ : পরীমনির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী নাসিরের ফের মামলা

আগের সংবাদ

কে কোথায় কুরবানি দিচ্ছেন

পরের সংবাদ

বানে ভাসা ঈদুল আজহা

প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুসলিম বিশ্বে পবিত্র হজ উদযাপন এবং পশু কুরবানি করা অর্থাৎ ঈদুল আজহা বড় একটি উৎসব। মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হিসবে বাংলাদেশও তার ব্যাতিক্রম নয়। কিন্তু দেশের লাখ লাখ মানুষ এখনো বন্যাক্রান্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বানের পানিতে চোখের পলকে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে সহস্রাধিক পরিবার। এ অবস্থায় বানভাসিদের ঈদের আনন্দ পরিণত হয়েছে দুঃস্বপ্নে। ছুঁয়ে যাবে না এবছর ইদ আনন্দ।
এমনকি ঈদের কোনো চিন্তাও তাদের মাথায় নেই। যেখানে জান বাঁচানো কঠিন হয়ে গেছে সেখানে সবকিছুর সাথে বানের জলে ভেসে যাবে ঈদ, এটাইতো স্বাভাবিক। এতো বেশি পানি এবং এতো ব্যাপক এলাকা জুড়ে ঢেউয়ের তোড়ে মানুষ সারাদিন সারারাত নির্ঘুম কাটাচ্ছেন। রান্না করার মতো শুকনো কাঠখড়-জ্বালানি নেই, ঘরের চাল-ডাল সব ভেসে গেছে, খাবার পানি নেই। এর উপর সাপ বিচ্ছুর ভয়! রোমেনা খাতুন নামে একজন দুঃখ করে জানান, বিছানার ওপর একবুক পানি। উপায়ান্তর না দেখে সন্তানকে নিয়ে ভাসতে থাকেন পানিতে। আধাঘণ্টা পর একটি আমগাছে ওড়না দিয়ে ছেলেকে বেঁধে রাখেন। নিজে গাছে ঝুলে থাকেন। সাত ঘণ্টা পর নৌকায় লোকজন তুলে নিয়ে গেছে। ঘরগুলোও এক এক করে চোখের সামনে ভেসে গেছে। পানি কমলে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরে আর কিছুই পাননি। ঘরবাড়ি, গাছপালা এমনকি ভিটেটাও নেই।
জল জীবনের উৎস বলেই হোক অথবা অদৃশ্য কোনো অমোঘ আকর্ষণেই হোক, মানুষের শিশুবেলা থেকেই ভীষণ একটা টান দেখা যায় জলের প্রতি। বর্ষা আমাদের ঋতুগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় একটি ঋতু হলেও এই বর্ষাই ২০২২ সালটাকে বেশ দুর্বিষহ করে তুলেছে অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল এবং আসাম-মেঘালয় থেকে আসা পানির ভয়ংকর স্রোতধারা! দেশের ১০৯টি নদী পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে ৯৫টি নদীর পানি বিপদসীমার মধ্যে দিয়ে গেছে। এরই মাঝে নিয়মের ধারাবাহিকতায় আসছে ঈদুল আজহা। যদিও বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সরকারসহ দেশের সকল মানুষই। কিন্তু যারা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন শুধু তারাই বোঝেন দীর্ঘ এই দুর্বিষহ অবস্থায় কেমন লাগে! চারিদিকে পানি থইথই অথচ খাবার পানি নেই! স্কুলগুলো বন্ধ করা হয়েছে বন্যার কারণে। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। পরীক্ষাটা স্তগিত হওয়ার জন্য চিন্তাগ্রস্ত পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকগণ। আমরা জানি বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে। হয়তো অতিবন্যা তারই একটি নমুনা।
ভারতের মেঘালযয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত কিছুদিন আগে ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়, যা ১২২ বছরের মধ্যে রেকর্ড। এসব এলাকার বৃষ্টির পানি বাংলাদেশের সিলেট ও কুড়িগ্রাম দিয়ে নেমে আসে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলায়। সবমিলিয়ে প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়।
আক্রান্তদের অনেকে প্রতিবেশীর বাড়িতে, স্কুলে, নৌকায় আশ্রয় পেলেও হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুদের রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। কারণ কোথাও কোথাও সড়ক বা বাঁধগুলোও ডুবে যায় পানির নিচে।
সুনামগঞ্জের সাবস্টেশনে পানি ঢুকে পড়ায় এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। এমনকি সিলেটের ওসমানী মেডিকেলে হঠাৎ বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি বিকল হওয়াসহ সাধারণ মানুষ চিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত হয়েছে। মোটকথা এ বছর ভারতে রেকর্ডব্রেক বৃষ্টিপাত এবং বন্যার প্রভাবে আমাদের ে দেশেও লক্ষ লক্ষ জানমালের ক্ষতি হয়ে গেলো। শুধু যে মানুষ এবং গবাদিপশুর ক্ষতি হয়েছে তা নয়, বন্য প্রাণীরাও আশ্রয় হারিয়ে করুণ মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছে। তবে আশার কথা হলো বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরে খাদ্য, পানি, বাসস্থানের অভাবে মানুষ কষ্টে দিনাতিপাত করছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে বেশকিছু ত্রাণ সহায়তা পেলেও বিপর্যস্ত জনজীবনে চট করে যে স্বস্তি নেমে আসবে, তা কিন্তু নয়। সারাদেশের মানুষ আনন্দের সাথে ঈদ উদযাপন করতে পারবে তাও নয়। একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হঠাৎ করে আঘাত হানলেও এর বিপর্যয় সুদূরপ্রভাবী হয়। তথাপি এখন জনগণ সচেতন হওয়ায় মৃত্যুর হার তুলনামূলক কমে এসেছে। এমনকি সরকারের আগেই পৌঁছে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ বিপর্যস্তদের সাহায্যে জন্য। যদিও বিপুলসংখ্যক মানুষের দায়িত্ব নেয়া সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় না। যেমন হাওড়পারের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লাখ লাখ মানুষ এখন কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। যদিও ঈদ উপলক্ষ্যে ভিজিএফসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ত্রাণ দিয়ে বন্যাকবলিত মানুষের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির কথা জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু সাধারণভাবে বেশিরভাগ মানুষের সাধ্য নেই এবারের ঈদে পশু কুরবানি দেয়ার।
যাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গিয়ে সর্বশান্ত হয়েছে, তাদের ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে বৈকি। এমনকি সরকারেরও সময় লাগবে। তাছাড়া বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর সাধারণত ডায়রিয়া, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সুতরাং এই সময়টাতে বিশেষ যতœ এবং সচেতনতা খুবই প্রয়োজন, বিশেষ করে শিশুদের বেলায়। বড়দের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খানিকটা বেশি থাকায় ছোট ছোট সমস্যা সামলে নিতে পারলেও শিশুরা কিন্তু এমন বৈরি আবহাওয়া সামলাতে পারে না। তাই নিজ নিজ পরিবার এবং নিজের পরিবেশ রক্ষা করার দায়িত্ব প্রত্যেকেরই। যেসব এলাকায় পানি কমেছে সেসব এলাকায় পশু কুরবানি হওয়ার পর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব সর্বসাধারণকেই নিতে হবে, যেন ডেঙ্গু কিংবা ডায়রিয়ার মতো রোগ মহামারি আকার ধারণ না করে।

এতোকিছুর পরেও পৃথিবীতে মানুষ যতদিন থাকবে, ধর্ম এবং ধর্মের কার্যকলাপ চলতেই থাকবে। মুসলমান ধর্মে কুরবানির ঈদ গৃহস্থদের জন্য অনেক বড় একটি বিষয়। অনেক গৃহস্থ, খামারি সারাবছর অপেক্ষা করে থাকেন নিজের খামারের কিংবা নিজের ঘরে ছোট পরিসরে লালনপালন করা গরু-ছাগল ঈদের আগে গঞ্জের হাটবাজারে বিক্রি করে তাদের স্বপ্ন পূরণ করবেন। সচ্ছলতার মুখ দেখবেন। কিন্তু এইবছর ভয়াবহ বন্যায় শত শত গরু ছাগলের মৃত্যু হয়েছে, রক্ষা করা যায়নি গৃহস্থের স্বপ্ন এবং এর প্রভাব পড়বে শহরের হাটবাজারে, রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতেও। তাই ধর্মকর্ম, উৎসব, আনন্দ উদযাপনের পাশাপাশি বৈশ্বিক জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের জন্য আমাদেরকে প্রস্তুত থাকতে হবে। হা-হুতাশ কিংবা হতাশা নয়, দুঃখ বেদনাকে ভাগাভাগি করে নিয়ে একসঙ্গে চলে মানবধর্ম পালনের ব্রত নিতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়