ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ : পরীমনির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী নাসিরের ফের মামলা

আগের সংবাদ

কে কোথায় কুরবানি দিচ্ছেন

পরের সংবাদ

সম্পর্ক

প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আমি অনেক চিন্তাভাবনা করে দেখলাম, তোমার সঙ্গে আমার বনিবনা হবে না। তাই আমি সেপারেশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মোহিনীর কথা শুনে বিস্ময়ের সঙ্গে সুজন বলল, মানে!
আমার কথা তুমি বোঝনি?
না।
কেন? না বোঝার কী আছে?
না মানে তুমি হঠাৎ সেপারেশনের কথা বলছ কেন?
আমি প্রতিদিন তোমার সঙ্গে ঝগড়াঝাটি করতে পারব না।
ঝগড়াঝাটি!
হুম।
কী বলো তুমি এসব!
কী বলি মানে! তোমার সঙ্গে আমার ঝগড়াঝাটি হচ্ছে না?
একে কি ঝগড়াঝাটি বলে! একসঙ্গে থাকতে গেলে তো এ রকম একটু-আধটু হতেই পারে।
তা পারে। কিন্তু আমার এসব একদম ভালো লাগে না।
তোমার ভাইবোনের সঙ্গে তোমার কখনো কথা কাটাকাটি হয়নি? মন কষাকষি হয়নি?
হয়েছে। ভাইবোন আর হাজবেন্ড-ওয়াইফ এক কথা হলো?
আমি তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না। হাসবেন্ড-ওয়াইফের সম্পর্ক কি এক-দুদিনের? তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে, তোমার সঙ্গে আমি লিভ টুগেদার করছি।
এর চেয়ে লিভ টুগেদার অনেক বেটার।
তাই নাকি! বাহ, চমৎকার!
কী চমৎকার?
তোমার কথা।
আহা! খারাপ কি? আমি ওতে খারাপ কিছু দেখি না।
তাই? লিভ টুগেদার খারাপ কিছু না?
হুম। দুজনেই স্বাধীন। কেউ কারো ওপর নির্ভরশীল নয়। মন চাইলে একসঙ্গে থাকবো; না চাইলে আলাদা থাকবো।
আচ্ছা ঠিক আছে। তোমার যা ভালো মনে হয় তাই করো।
কী বললা?
সুজন চুপ করে আছে। মোহিনী তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল, তার মানে তুমি লিভ টুগেদারে রাজি?
আমি রাজি মানে! আমি বলেছি, তোমার যা ভালো মনে হয় তাই করো।
ঠিক তো? তুমি আমার কোনো কাজে ইন্টারফেয়ার করবে না।
এজন্যই কি সেপারেশনের হুমকি?
হুমকি নয়। আমি আর কিছুদিন দেখব তারপর সেপারেশনের সিদ্ধান্ত নেবো।
কী দেখবে?
তোমাকে দেখব। আমার প্রতি তোমার কমিটমেন্ট কতটা আছে সেটা দেখব।
এটা তো বোথওয়ের ব্যাপার, তাই না? তোমারটাও আমি দেখতে পারি।
অবশ্যই পারো।
কথাটা তাহলে মনে রেখো।
ঠিক আছে রাখব। ঝগড়াঝাটি আমি করি না তুমি করো সেটা দেখা যাবে।
তাহলে তো বাসায় সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে।
মানে!
কে আগে ঝগড়া শুরু করে সেটা দেখতে হবে না!
আচ্ছা দেখ।
অতি সিলি বিষয় নিয়ে তুমি যেভাবে শুরু করো, তাতে মনে হয় তুমি ইচ্ছাকৃতভাবে এসব করো।
কি বললে? আমি ইচ্ছাকৃতভাবে এসব করি?
এই যে; সামান্য কথায় কীভাবে ক্ষেপে যাচ্ছ?
তুমি আমাকে ক্ষেপিয়ে তুলছ ক্ষেপবো না?
আচ্ছা ক্ষেপতে থাকো। যত ইচ্ছা ক্ষেপতে থাকো।
দেখ সুজন; তুমি আমাকে ইরিটেড করছ।
মোটেই আমি ইরিটেড করছি না। তুমি নিজেই নিজেকে ইরিটেড করছ।
বাজে কথা বলবে না।
আচ্ছা কোন কথাটা বাজে সেটা বলো তো!
তোমার প্রত্যেকটা কথাই বাজে।
তাই; আমার প্রত্যেকটা কথাই বাজে?
মোহিনী চুপ করে আছে। আর কোনো কথা বলছে না। সুজন ওর দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর সে বলে, তাহলে আমার প্রত্যেকটা কথাই বাজে?
এবারো মোহিনী কোনো কথা বলল না। সুজন নিজে নিজেই বলতে থাকল, আমার প্রত্যেকটা কথাই নাকি বাজে! আমি নাকি ওকে ইরিটেড করি। মানুষের সহ্যেরও একটা সীমা আছে। অফিসে যাওয়ার সময় উন্মাদের মতো হাউকাউ করবে। অফিস থেকে ফিরে আসার পরও একই রকমভাবে হাউকাউ করতে থাকবে। কোনোদিন একটু স্বস্তি পেলাম না। একে নাকি সংসার বলে! এই সংসারের আমি গুষ্টি কিলাই!
সুজনের কথাগুলো মোহিনী স্পষ্ট শুনতে পেল। শুনেও সে চুপ করে রইল। কিছুই বলল না। সে চুপচাপ কিছুক্ষণ শুয়ে রইল। সুজন মোহিনীকে কিছু না বলে বাইরে বের হলো। সে তাকে খুঁজে না পেয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করল। পরে সে রান্নার কাজে মনোযোগ দিল।
মোহিনী রান্নাবান্না শেষ করে সুজনের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু সুজন ফিরছে না। ওর মোবাইলে কয়েকবার ফোন দিয়েছে। কিন্তু ওর ফোনটা বন্ধ। মহাবিরক্ত হয়ে টিভির সামনে বসে মোহিনী। টিভিতে জি বাংলা ছাড়তেই পারিবারিক অশান্তির সিরিয়াল দেখে চিৎকার দিয়ে বলে, এসব কী হচ্ছে?
মোহিনী টিভি বন্ধ করে ঘরের মধ্যে পায়চারি করে। সে সুজনকে নিয়ে ভাবে। আর মনে মনে বলে, ও গেলো কোথায়? রাত দশটা বাজে। এখনো ফিরছে না! কাল সকালেই তো আবার অফিসের তাড়া!
মোহিনী আবার সুজনের মোবাইলে ফোন দেয়। এবারো সুজনের মোবাইল বন্ধ পেয়ে নিজের মোবাইলটা বিছানার ওপর ছুড়ে মারে। ঘরের বারান্দায় যায়। বাইরের দিকে উঁকি দিয়ে দেখে। এর মধ্যেই কলিং বেলের শব্দ পায় সে। পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় মোহিনী। দরজা খুলে চেঁচিয়ে বলে, আমাকে টেনশনে রাখতে তোমার ভালো লাগে; তাই না?
সুজন নিশ্চুপ। সে ঘরের ভেতরে হেঁটে যায়। মোহিনী দরজা লাগিয়ে ঘরে ড্রয়িং রুমে এসে খাবারের প্লেটে ভাত দিতে দিতে বলে, তাড়াতাড়ি খেতে এসো। তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে পেটের ক্ষুধাও চলে গেছে।
সুজন ড্রয়িং রুমের দিকে আসতে আসতে বলল, তুমি খেয়ে নিতে!
হ, আমি খেয়ে নিতাম! তাতে কি লাভ হতো? আমি কি ঘুমিয়ে পড়তে পারতাম?
সুজন আর কথা বাড়াল না। সে চুপচাপ খেতে বসল। খাবার মুখে দিয়ে কেমন একটা ভাব করল। মোহিনী ওকে দেখেই বলল, কী হলো? রান্না ভালো হয়নি?
সুজন চুপ করে আছে। মোহিনী কিছুটা ক্ষেপে গিয়ে বলে, যা রেঁধেছি তাতেই সই। ভালো না হলে কিছুই করার নেই। সারাদিন অফিস করার পর রান্নায় আর মন বসে না।
যে রাধে সে চুলও বাঁধে।
সুজনের টিপ্পনি কাটা কথা শুনে আবারো খেকিয়ে উঠল মোহিনী। সে বলল, কী বললে? তাহলে তুমি কী করো? তুমি রান্না করো!
পারলে তো করতামই!
পার না কেন?
সুজন চুপ করে রইল। ও দেখল, এখন কথা বাড়াতে থাকলে মোহিনী আরো ক্ষেপে যাবে। রাতের ঘুমও হারাম হয়ে যাবে। সে ধৈর্য ধরে খাওয়া শেষ করল। কিন্তু মোহিনী তখনো ওকে নানা কথা শুনাচ্ছিল। এক পর্যায়ে বলল, কাল সকালে বাজার করতে হবে। বাসায় কিছু নেই। বাজার না করলে খাওয়া বন্ধ। আর আগামী পরশুদিন বাড়িওয়ালা আসবে। টাকা নিয়ে এসো। উনি আগে থেকে বলে রেখেছেন।
সুজন এবারো কোনো কথা বলল না। মোহিনী বলল, আমি কী বললাম শুনেছ তো! বাড়িওয়ালা এসে যেন ফিরে না যায়! ব্যাচারা ভদ্রলোক মানুষ! ভাড়ার জন্য কোনো দিন কোনো কথা বলেননি।
সুজন খাবার টেবিল থেকে উঠে চলে গেলো। কোনো কথা বলল না। মোহিনী তার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে রইল।

মোহিনীর সঙ্গে সুজনের সম্পর্কটা এখন এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়েছে যে, একজন আরেকজনকে সহ্যই করতে পারে না। সুজন একটা বললে মোহিনী দশ কথা বলে ওকে জব্দ করে। অথচ ওরা দুজন পরস্পরকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিল। প্রথম দুই বছর বেশ ভালোই কেটেছিল। একজন আরেকজনকে ছাড়া কিছুই বুঝত না। যা কিছুই করত দুজন আলোচনা করে করত। ওদের প্রথম বিরোধ শুরু হয় সুজনের মা-বাবাকে নিয়ে। সুজন প্রতি মাসে গ্রামে ওর মা-বাবার জন্য টাকা পাঠায়। এটা মোহিনীর পছন্দ নয়। এ নিয়েই শুরু হয় ওদের মতবিরোধ।
সুজনের বড় আরো চার ভাই আছে। তাদের কি কোনো দায়িত্ব নেই। সুজনকেই কেন মা-বাবাকে দেখতে হবে? তাছাড়া সুজনদের গ্রামে অনেক জমিজমা আছে। বাগান আছে। সেগুলো দিয়েই তারা বুড়াবুড়ি চলতে পারেন। তারপরও সুজনকে কেন টাকা পাঠাতে হবে?
সুজনের এক কথা, কেউ দেখুক আর না দেখুক, সেটা আমার দেখার বিষয় না। মা-বাবা অনেক কষ্ট করে আমাকে বড় করেছেন। তাদেরকে দেখা আমার কর্তব্য।
সুজনের কথার দ্বিমত পোষণ করে মোহিনী বলে, কর্তব্য কি শুধু তোমার একার? তোমার অন্য ভাইদের নেই! আর এসব কর্তব্যের কথা আগে বলোনি কেন? তখন তো খুব ঢং করে বলতে, আমাকে নিয়ে ভালোবাসার এক স্বর্গ রচনা করবে। এখন তো দেখছি রীতিমতো নরক!
কি বললে? এই সংসার নরক?
নরক না তো কি?
মা-বাবাকে কটা টাকা দিই বলে তোমার কাছে এই সংসার নরক হয়ে গেলো! ছি ছি মোহিনী! আমার মা-বাবার ব্যাপারে তোমার এতোটা অ্যালার্জি তা যদি আগে টের পেতাম!
কী করতে? আমাকে বিয়ে করতে না; এই তো! সেটাই ভালো ছিল।
উহ! মোহিনী তুমি চুপ করবে? অসহ্য!
আমারও ভীষণ অসহ্য লাগছে।
অসহ্য লাগলে তুমি তোমার ব্যবস্থা করো! নাকি করেই রেখেছ?
মুখ সামলে কথা বলো! কী করে রেখেছি?
না, তোমার তো বন্ধু-বান্ধবের কোনো অভাব নেই। এটা যদি আমার থাকতো তাহলে যে তুমি কী করতে, আল্লাহ মালুম!
আমি ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করেছি। চাকরি করছি। আমার বন্ধু-বান্ধব থাকবে না?
অবশ্যই থাকবে। কিন্তু সেটা যদি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে তাহলেই সমস্যা।
সমস্যা হলে আমার সঙ্গে আছো কেন?
চলে যাওয়াই উচিত। কিন্তু…
আবার কিন্তু কী?
তার মানে তুমি সেপারেশন চাও?
অবশ্যই। এ রকম কুরুক্ষেত্রের মধ্যে জীবন-যাপন করা অসম্ভব!
কুরুক্ষেত্র বানালো কে?
তুমি।
কী বললে? আমি কুরুক্ষেত্র বানিয়েছি?
ইয়েস!
ঠিক আছে। কালই তাহলে সেপারেশনের বিষয়টি ফয়সালা হবে।
সুজন কথা শেষ করে অন্য রুমে চলে গেলো। সে রাতে কিছুই খায়নি। মোহিনীও কিছু না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ওরা ঘুম থেকে দেরি করে ওঠে। ছুটির দিন, তাই দুজনের কারো অফিসের যাওয়ার তাড়া ছিল না। সকালে যে মেয়েটি ওদের ঘরদোর গুছিয়ে দিয়ে যায় সে অনেকক্ষণ কলিং বেল বাজিয়ে চলে গেছে।
মোহিনীর যখন ঘুম ভাঙে তখন সকাল এগারটা। পেটের ক্ষুধায় সে কাতর। দ্রুত হাত-মুখ ধুয়ে সুজনকে ডাকে। সুজন, সুজন! ওঠো তো! আমার ভীষণ ক্ষুধা লাগছে। নাশতা করতে বাইরে যাবো।
সুজন আড়মোরা ভেঙে বিছানা থেকে ওঠে। চোখ ডলতে ডলতে বলে, হঠাৎ কী হলো?
কিছু হয়নি। দ্রুত হাত-মুখ ধুয়ে নাও। নাশতা করতে বাইরে যাবো।
সুজনের কাছে মনে হলো, অন্য এক মোহিনী। সে মনে মনে বলে, ক্ষুধার রাজ্যে সত্যিই পৃথিবী গদ্যময়! সকালে নাকি সে কাজি অফিসে যাবে সেপারেশনের জন্য। সে কথা সে হয়তো ভুলেই গেছে।
সুজন দ্রুত হাত-মুখ ধুয়ে জামা-প্যান্ট পরে মোহিনীর সঙ্গে বাইরে রওনা হলো। মোহিনী সুজনের হাত ধরে বলল, সরি। রাতে তোমার সঙ্গে খুব দুর্ব্যবহার করেছি। মনে কিছু করো না।
আমিও সরি। আমিও তোমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছি। মনে কিছু করো না।

দুজন দুজনের কাছে সরি বলার পর সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। কিছুদিন ভালোই কাটে। কয়েকদিন পর আবার শুরু হয় ওদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি। সে কী ঝগড়া! একজন আরেক জনের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে। ঝগড়া করতে করতে একদিন মোহিনী সুজনকে ছেড়ে চলে যায়। কিছুদিন যাওয়ার পর সুজন আবার তাকে সুঝিয়ে-সুজিয়ে নিয়ে আসে। কিছুদিন পর আবার মোহিনী সেই পুরনো ইস্যুটি সামনে নিয়ে আসে। সুজন তার পরিবারকে টাকা-পয়সা দিচ্ছে। এটা মোহিনী সহ্য করতে পারছে না। তাই সে সুজনকে শর্ত দিয়েছে, সুজনের বেতনের পুরো টাকা মোহিনীর হাতে তুলে দিতে হবে। সংসারের যাবতীয় খরচ মোহিনী করবে। এমনকি সুজনের পকেট খরচের টাকাও সে দেবে।
মোহিনীর শর্তে বেঁকে বসে সুজন। তার এক কথা, কোনো শর্তফর্ত সে মানবে না। আর শর্ত দিয়ে কোনো সম্পর্ক হয় না। দাম্পত্য সম্পর্কের জন্য পারস্পরিক বোঝাপড়া দরকার। তাতে ঘাটতি পড়লে সম্পর্ক টেকে না।
সুজনের প্রতিক্রিয়া দেখে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মোহিনী। মনে মনে স্থির করে, এবার সে শেষবারের মতো চলে যাবে। সুজনের কোনো অনুরোধই সে রাখবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়