করোনার ভুয়া রিপোর্ট : সাবরিনা-আরিফসহ আটজনের মামলার রায় ১৯ জুলাই

আগের সংবাদ

মসলার বাজারে ঈদের আঁচ : খুচরা বাজারে দামের উল্লম্ফন, ডলার সংকট ও এলসি জটিলতার অজুহাত

পরের সংবাদ

প্রাতঃস্মরণীয় জহুর হোসেন চৌধুরী

প্রকাশিত: জুলাই ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাংবাদিকতায় অবিসংবাদিত নাম জহুর হোসেন চৌধুরী, প্রগতিশীল চিন্তার এক অকুতোভয় কলম সৈনিক। জীবদ্দশায় তিনি বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ সংবাদ নিরন্তর লিখে গেছেন। পেয়েছেন ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা। একাধারে তিনি একজন সাংবাদিক, সম্পাদক, কলাম লেখক ও রাজনীতিবিদ। জহুর হোসেন চৌধুরী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের হতভাগ্য মেহনতি মানুষের স্বার্থের কথা ভেবে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গেছেন তা এ দেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে স্বর্ণোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। প্রগতিশীল রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি পূর্ববাংলার স্বায়ত্তশাসন, স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা ছিল স্মরণযোগ্য।
সংবাদপত্র নিয়েই তিনি তার জীবনের প্রায় সবটা সময় কাটিয়ে দিয়েছেন। সাংবাদিক জীবন সূচনা করেন তিনি হাবীবুল্লাহ বাহার সম্পাদিত ‘বুলবুল’ পত্রিকায়। ১৯৫১ সালে ‘সংবাদ’-এ সহকারী সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন এবং ১৯৫৪ সালে কাগজটির সম্পাদক মনোনীত হন। আমৃত্যু তিনি দৈনিক সংবাদের অন্যতম পরিচালক ছিলেন। দৈনিক সংবাদের পাতায় তিনি ‘দরবার-ই-জহুর’ নামে যে কলাম লিখতেন, তা পাঠকপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিল। তার অভিজ্ঞতার ঝুড়িতে ছিল পঞ্চাশের দুর্ভিক্ষ, ভারত বিভাগ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, সামরিক দুঃশাসন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের দুর্বার জোয়ার, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পরের রক্তাক্ত বাংলাদেশ। এসব নিবন্ধেরই বাছাই করা সংকলন ‘দরবার-ই-জহুর’ নামে ১৯৮৫ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। তার সংবাদ বিশ্লেষণ, পর্যালোচনা ও মন্তব্য পাঠকদের মুগ্ধ করত। তিনি অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে যে কোনো বিষয়ে তার বক্তব্য ও মন্তব্য প্রকাশ করতেন। এর মূল্যও তাকে দিতে হয়েছিল। মৃত্যুর বছরখানেক আগে তার কোনো একটি নিবন্ধের কারণে তৎকালীন সরকার অসন্তুষ্ট হন এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে দৈনিক সংবাদ-এর ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তৎকালীন সামরিক শাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সংবাদ নির্ভীক খবর পরিবেশন ও আন্দোলনের দিক-নির্দেশনা দিয়ে গেছে। যার কারণে মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনী ঢাকার বংশালের সংবাদ অফিস পুড়িয়ে দেয়। সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৮১ সালে জেবুন্নেসা-মাহবুবউল্লাহ স্বর্ণপদক এবং ১৯৮২ সালে মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন।
জহুর হোসেন চৌধুরীর জন্ম ১৯২২ সালের ২৭ জুন বর্তমান ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার রামনগর গ্রামে। তার বাবা সাদাত হোসেন চৌধুরী ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের জেলা প্রশাসক। মা নূরজাহান চৌধুরানী ছিলেন গৃহিণী। ৭ ভাই-বোনের মধ্যে জহুর হোসেন চৌধুরী ছিলেন বড়। চাকরি সূত্রে তার বাবা সিরাজগঞ্জে থাকার কারণে তার শিক্ষাজীবন সেখানেই শুরু হয়। ছাত্রজীবন থেকেই জহুর হোসেন চৌধুরী রাজনীতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত ছিলেন। প্রথমে তিনি মুসলিম ছাত্রলীগ, পরে এমএন রায়ের ‘র‌্যাডিক্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি’র সদস্য হন। সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে পঞ্চাশের দশকে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) প্রাদেশিক কমিটির সদস্য হন। তৎকালীন পাক-চীন মৈত্রী সমিতি এবং পাক-সোভিয়েত মৈত্রী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও সদস্যও ছিলেন তিনি। এছাড়া সাবেক পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন ও পূর্ব পাকিস্তান প্রেস ক্লাবেরও তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। পরে তিনি নেপথ্যে থেকে আওয়ামী লীগ ও বামপন্থিদের মধ্যে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের লক্ষ্যে ঐক্যমোর্চা গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
সম্পাদক হিসেবে তার সাহসিকতার উদাহরণ দিতে এখানে একটি মাত্র ঘটনার উল্লেখ করছি- ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পুরোটাই সংবাদ-এর প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছিল। খবরটির শিরোনাম ছিল- ‘এবার স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এই শিরোনাম অন্য কোনো পত্রিকা দেয়নি। সাহসী সংশপ্তক সাংবাদিক, আমাদের সাহসী হওয়ার পথিকৃৎ জহুর হোসেন চৌধুরী তাই অবিস্মরণীয়-প্রাতঃস্মরণীয়। ১৯৮০ সালের ১১ ডিসেম্বর মাত্র ৫৮ বছর বয়সে ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে তার কর্মময় জীবনের অবসান ঘটে। সাহসী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ জহুর হোসেন চৌধুরী অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়