মুম্বাইয়ে ভবনধসে নিহত ১৯

আগের সংবাদ

বানভাসিদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই

পরের সংবাদ

সিপিডি-এশিয়া ফাউন্ডেশন সংলাপ : সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি হচ্ছে

প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হচ্ছেন প্রকল্প পরিচালক। কিন্তু দেখা যায় পঞ্চগড়ের কোনো প্রকল্পের পরিচালক ঢাকায় থাকছেন, এটা জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। কাজের এলাকায় কেউ থাকতে চাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীকে পাওয়া যায় না; তাদের নাটাই ঢাকায়, কিন্তু সুতা কাটা যাচ্ছে না। মন্ত্রী আরো বলেন, প্রশাসনের অনেক বিধি অপ্রয়োজনীয়। ব্রিটিশ, পাকিস্তানি ও সামরিক শাসকরা এসব করেছেন, যার এখন বাস্তবতা নেই। কিন্তু অনেক দুষ্ট আমলা এসব বিধান চাতুরীর সঙ্গে কাজে লাগাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ আছে এসব বদলানোর, তা সত্ত্বেও এসব পরিবর্তন করা যাচ্ছে না, নানা প্রতিবন্ধকতা এসে হাজির হয়। তবে আইনকে আইন দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে। আমরা সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।
অবকাঠামোকে দেশের প্রাণ বলে উল্লেখ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। বলেন, অবকাঠামো আমাদের মূল লক্ষ্য। এসব দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবেশবান্ধব হওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া দেশের গ্রামীণ এলাকায় সড়কের নিচ দিয়ে আন্ডারপাস করার পরিকল্পনা আছে, যাতে কৃষক নির্বিঘেœ গরু নিয়ে রাস্তা পেরোতে পারেন।
রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন যৌথভাবে আয়োজিত এক সংলাপে গতকাল বুধবার প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ।
‘সরকারি অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন’- শীর্ষক সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য এনামুল হক। প্যানেল আলোচক ছিলেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রিজওয়ান রহমান, পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।
উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ বলেন, সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি হচ্ছে। এগুলোকে চুরি বলব না, তবে আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেকেই দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছেন। তবে দুর্নীতির বিষয় রেখেঢেকে রাখার প্রয়োজন নেই বলেই তিনি মনে করেন। প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ। তিনি বলেন, অনেক প্রকল্পের পরিচালকরা নতুন গাড়ি কিনছেন, যদিও তিনি এমনিতে গাড়ি পান। এমনকি প্রকল্প এলাকায় তাকে প্রতিদিন যেতেও হয় না। ফলে যেখানে তেলের খরচ নিলেই যথেষ্ট, সেখানে নতুন গাড়ি কেনা হচ্ছে। এসব বন্ধের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এছাড়া এই সরকারের আমলে সংসদের বিভিন্ন স্থায়ী কমিটি শক্তিশালী করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন আবদুস শহীদ। কোন প্রকল্প কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ কমিটির বৈঠকে পেশ করা হচ্ছে।
প্রকল্প প্রণয়নের সময় প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই বা কস্ট-বেনিফিট অ্যানালাইসিস হচ্ছে না বলে আক্ষেপ করে সংসদ সদস্য এনামুল হক বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় মানুষের যাপিত জীবনের পরিবর্তনের বিষয়টি আমলে নেয়া হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে তিনি নিজ সংসদীয় এলাকা রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার উদাহরণ দেন। তিনি নির্বাচিত হওয়ার আগে সেখানে পাকা সড়ক ছিল ৫০ কিলোমিটার, এখন তা ৪০০ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এরপরও সেখানে সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। যদিও এক সময় এত সড়ক হয়তো কাজে আসবে না; কারণ, সবাই যেভাবে শহরের দিকে চলে আসছে, তাতে এক সময় ওখানে অত মানুষই থাকবে না।
অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা দেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের কাঠামো নির্ধারণ করা গেলে অর্থ ও সময় সাশ্রয় হবে। এক্ষেত্রে পদ্মা সেতু আমাদের জন্য বড় নজির, যা নির্ধারিত (বর্ধিত) সময়ের মধ্যে শেষ করা গেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আরো বেশ কটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য আছে সরকারের। কাঠামো নির্ধারণ করা গেলে এগুলো সুশাসনের সঙ্গে বাস্তবায়ন করা যাবে। এক্ষেত্রে ওইসিডির কাঠামো অনুসরণ করা যেতে পারে।
মোস্তাফিজুর রহমানের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেন এনামুল হক। বলেন, এখন প্রকল্প হচ্ছে অ্যাডহক ভিত্তিতে। ফলে প্রকল্পের আগে বোঝা যায় না এর ফল কী হবে; বরং প্রকল্প বাস্তবায়নের পরে তা বোঝা যায়। কাঠামো পরিকল্পনা থাকলে এসব সমস্যা হতো না। বাংলাদেশের মতো ছোট দেশে এটা করা খুব কঠিন নয় বলেই তিনি মনে করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়