মুম্বাইয়ে ভবনধসে নিহত ১৯

আগের সংবাদ

বানভাসিদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই

পরের সংবাদ

বহুজাতিক কোম্পানিতেও ধরাশায়ী বিনিয়োগকারীরা

প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ১৯৮৭ সালে দেশের পুঁজিবাজারে বহুজাতিক রেকিট বেনকিজার তালিকাভুক্ত হয়। ভালো ব্যবসার পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডারদের মোটা অঙ্কের লভ্যাংশ দেয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার বরাবরই বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার পুঁজিবাজারে দামের তালিকায় সবার শীর্ষে। ২৩ জুন লেনদেন শেষে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দাম দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭৭০ টাকা ৭০ পয়সা, যা গত ২৫ জানুয়ারি ছিল ৬ হাজার টাকা ৫০ পয়সা। অর্থাৎ পাঁচ মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ১ হাজার ২২৯ টাকা ৮০ পয়সা। সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ৫৮১ কোটি ৮ লাখ ৫ হাজার টাকা। শুধু রেকিট বেনকিজার নয়, ম্যারিকো বাংলাদেশ বাদে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সব বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার দাম সা¤প্রতিক সময়ে বেশ কমেছে। ফলে ভালো মুনাফার আশায় যেসব বিনিয়োগকারী বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার কিনেছিলেন, তারা মুনাফার বদলে এখন লোকসান দিচ্ছেন।
একসময় দেশের পুঁজিবাজারে সবচেয়ে দামি শেয়ার ছিল ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের। ডানহিল, লাকি স্ট্রাইক, কেন্ট, পলমল, কুল, বেনসন এবং রথম্যান্স তামাকজাত পণ্যের উৎপাদনকারী এ প্রতিষ্ঠানটি তামাকজাত পণ্য বিক্রির দিকে থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করা প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত বড় মুনাফা করার পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডারদের মোটা অঙ্কের লভ্যাংশ দেয়। বছর তিনেক আগে শীর্ষ স্থান হারানো কোম্পানিটির শেয়ার এখন সর্বোচ্চ দামের তালিকায় ১৩তম স্থানে রয়েছে। সা¤প্রতিক সময়ে এ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কিনেও বড় ধরা খেয়েছেন বিনিয়োগাকারীরা। বাজারে চলমান মন্দার মধ্যে পড়ে চার মাসে কোম্পনিটির প্রতিটি শেয়ার দাম ১৩০ টাকা কমে গেছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৭০০ টাকায় লেনদেন হওয়া কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৫৪২ টাকায়। চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৬৭২ টাকা ৪০ পয়সা। এ হিসাবে চার মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম সম্মিলিতভাবে কমেছে ৭ হাজার ৪১ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
দেশের বাজারে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করা আরেক বহুজাতিক কোম্পানি বার্জার পেইন্টস। গত চার মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দামে ব্যাপক উত্থান-পতন দেখা গেছে। চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ১ হাজার ৮২০ টাকা ৩০ পয়সা, যা ৮ মার্চ ১ হাজার ৬৬০ টাকা ৫০ পয়সায় নেমে যায়। এরপর কয়েক দফা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এখন প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৮৭ টাকা ৭০ পয়সা। ব্যাপক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাওয়া কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার দাম গত চার মাসে কমেছে ৩২ টাকা ৬০ পয়সা। এতে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমেছে ১৫১ কোটি ১৯ লাখ ১৮ হাজার টাকা। শেয়ারের সর্বোচ্চ দামের তালিকায় এই কোম্পানিটি চতুর্থ স্থানে। সর্বোচ্চ দামের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ারের (সাবেক গøাক্সোস্মিথক্লাইন) শেয়ার কিনেও বড় ধরনের লোকসান গুনছেন বিনিয়োগকারীরা। গøাক্সোস্মিথক্লাইন থেকে নাম বদলে ‘ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার’ নাম ধারণ করা এই কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম সা¤প্রতিক সময়ে কমেছে ৪৭৬ টাকা ২০ পয়সা। চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৩ হাজার ২৯৮ টাকা ৯০ পয়সা, যা কমে এখন ২ হাজার ৮২২ টাকা ৭০ পয়সায় নেমেছে। এতে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ৫৭৩ কোটি ৬৫ লাখ ১৯ হাজার টাকা। রেকিট বেনকিজারে, ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ, বার্জার পেইন্টস’র পাশাপাশি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- ম্যারিকো বাংলাদেশ, লিন্ডে বাংলাদেশ, বাটা সু, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, আরএকে সিরামিকস, সিঙ্গার বাংলাদেশ, গ্রামীণফোন এবং রবি। এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে বিনিয়োগ করেও স্বস্তিতে নেই বিনিয়োগকারীরা।
পুঁজিবাজারে মূল্যসূচকে বড় ধরনের প্রভাব রাখা গ্রামীণফোনের প্রতিটি শেয়ার দাম পাঁচ মাসের মধ্যে ৫০ টাকার ওপরে কমেছে। গত ১৭ জানুয়ারি এই মোবাইল ফোন অপারেটরটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৩৫৯ টাকা ৫০ পয়সা, যা কমতে কমতে এখন ৩০৩ টাকা ৭০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ৫৫ টাকা ৮০ পয়সা। এতে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ৭ হাজার ৫৩৪ কোটি ৬৭ লাখ ৪১ হাজার টাকা। আরেক মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি রবির শেয়ার কিনেও বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। সা¤প্রতিক সময়ে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ১২ টাকা ৫০ পয়সা। এতে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ৬ হাজার ৫৪৭ কোটি ৪১ লাখ ৬১ হাজার টাকা। গত ১২ জানুয়ারি কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৪১ টাকা ২০ পয়সা। ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে সেই শেয়ারের দাম এখন ২৮ টাকা ৭০ পয়সায় নেমে গেছে।
চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি বাটা সু’র প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৯৫১ টাকা ৮০ পয়সা। সেখান থেকে ৮ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমে হয়েছে ৮৭১ টাকা ৪০ পয়সা। এরপর ৫ মে প্রতিটি শেয়ারের দাম আবার ৯৫৩ টাকা ১০ পয়সায় ওঠে। সেখান থেকে কমে এখন প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৯২৮ টাকা ৩০ পয়সা। এ হিসাবে দেড় মাসে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ২৪ টাকা ৮০ পয়সা। এতে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ৩৩ কোটি ৯২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।
সিমেন্ট খাতের প্রতিষ্ঠান লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের শেয়ার দাম গত ৬ এপ্রিল ছিল ৮০ টাকা ৪০ পয়সা। ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে সেই শেয়ারের দাম এখন ৬৯ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ আড়াই মাসে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ১১ টাকা ৪০ পয়সা। এতে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ১ হাজার ৩২৩ কোটি ৯৬ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। সিমেন্ট খাতের আরেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান হাইডেলবার্গ সিমেন্টেও বড় ধরনের ধরা খেয়েছেন শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা। গত ২৫ জানুয়ারি কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৩২৬ টাকা ৭০ পয়সা। ধারাবাহিকভাবে কমে তা এখন ২১১ টাকা ৩০ পয়সায় চলে এসেছে। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ১১৫ টাকা ৪০ পয়সা। এতে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ৬৫২ কোটি ৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা। সিঙ্গার বাংলাদেশের শেয়ার দামেও স¤প্রতি বেশ উত্থান-পতন দেখা গেছে। গত ১৮ জানুয়ারি কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ১৭৭ টাকা ৭০ পয়সা। ৮ মার্চ তা কমে ১৫৫ টাকায় চলে যায়।
সেখান থেকে আবার দাম বেড়ে ৫ এপ্রিল ১৭২ টাকা ২০ পয়সায় ওঠে। অবশ্য এরপর আবার পতনের মধ্যে পড়ে এখন প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ১৬৩ টাকা ১০ পয়সা। এ হিসেবে দেড় মাসে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ৯ টাকা ১০ পয়সা। সম্মিলিতভাবে শেয়ারের দাম কমেছে ৯০ কোটি ৭২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। আরেক বহুজাতিক কোম্পানি আরএকে সিরামিকস নিয়েও অস্বস্তিতে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। সিরামিক খাতের এই কোম্পানিটির শেয়ার দাম গত ১ ফেব্রুয়ারি ছিল ৬১ টাকা ২০ পয়সা। এখান থেকে কমতে কমতে ২২ মে প্রতিটি শেয়ারের দাম ৪১ টাকায় নেমে যায়। এমন দরপতনের পর অবশ্য গত এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কিছুটা বেড়েছে। এতে এখন প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৪৯ টাকা ৬০ পয়সা। এ হিসেবে ফেব্রুয়ারির তুলনায় এখন কোম্পানিটির শেয়ার ১১ টাকা ৬০ পয়সা কম দামে রয়েছে। ফলে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ৪৯৬ কোটি ৪৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। পতনের এই বাজারে বিনিয়োগকারীদের কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে ম্যারিকো বাংলাদেশ। নিয়মিত বড় লভ্যাংশ দেয়া এই বহুজাতিক কোম্পানিটি চলমান হিসাব বছরে তিন মাস শেষ হওয়ার আগেই অন্তর্র্বতী ৪৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। গত ৫ জুন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে এই লভ্যাংশের ঘোষণা আসে। এমন বড় অন্তর্বর্তী লভ্যাংশের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে কোম্পানিটির শেয়ার দামেও। এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দাম প্রায় ১০০ টাকা বেড়েছে। গত ২২ মে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ২ হাজার ৩২৬ টাকা ২০ পয়সা, যা বেড়ে এখন ২ হাজার ৪২৪ টাকা ৫০ পয়সা হয়েছে।
এ নিয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, গ্রামীণফোনসহ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারে স¤প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সেল প্রেসার (বিক্রির চাপ) ছিল। এর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার দামে। তাছাড়া সার্বিক শেয়ারবাজারও কয়েক মাস ধরে মন্দার মধ্যে রয়েছে। সবকিছু মিলেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কমেছে। তিনি বলেন, বাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী। কোম্পানিগুলো নিয়মিত বড় লভ্যাংশ দেয়। তবে এসব প্রতিষ্ঠানে দেশীয় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের তেমন বিনিয়োগ নেই। বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং বড় বিনিয়োগকারীরা এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে বিনিয়োগ করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়