মুম্বাইয়ে ভবনধসে নিহত ১৯

আগের সংবাদ

বানভাসিদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই

পরের সংবাদ

দূষিত পরিবেশ, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে মানুষ : অভয়নগরে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি

প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আলমগীর কবীর, যশোর থেকে : অভয়নগর উপজেলায় কাঠ ও সিসা পুড়িয়ে কয়লার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। কেবল উপজেলার সিদ্দিপাশা ইউনিয়নেই গড়ে উঠেছে এমন দেড় শতাধিক মাটির কাঁচা চুল্লি। এসব চুল্লিতে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করে পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
ইতোপূর্বে অভয়নগর উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে চুল্লিগুলো গুঁড়িয়ে দিলেও বন্ধ হয়নি এ অবৈধ ব্যবসা। প্রতিবারই আরো নতুন নতুন চুল্লি তৈরি হয়েছে। ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, উজাড় হচ্ছে গাছপালা অন্যদিকে স্থানীয়রা শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ রোগে ভুগছে।
তবে এদের বিরুদ্ধে স্থানীয় কেউ প্রতিবাদ করলেই নানা হুমকি-ধামকি দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সেই সঙ্গে এই এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদেরও পোহাতে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনা। ফলে সচেতন এলাকাবাসী এ অবৈধ চুল্লির কালো ধোঁয়া থেকে বাঁচতে এবং পরিবেশ রক্ষার্থে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রায় ১৪/১৫ বছর ধরে উপজেলার সিদ্দিপাশা ইউনিয়নে কিছু সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ভূমিদস্যু এমনকি হত্যা মামলার আসামিরা জোটবদ্ধ হয়ে অবৈধভাবে মাটির চুল্লি বানিয়ে কাঠ ও সিসা পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করে আসছে। এমনকি সরকারি দাতব্য চিকিৎসালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকায়ও তারা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কয়লা তৈরির চুল্লি নির্মাণ করেছে।
উপজেলার সিদ্দিপাশা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে অবাধে চুল্লিতে এ কয়লা তৈরি হওয়ায় নির্গত ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের জিয়া মোল্যা, ছোট্ট মোল্যা, শহিদ মোল্যা, হারুন মোল্যা, রফিক মোল্যা, তৌকির মোল্যা, কবীর শেখ, হাবিব হাওলাদার, তসলিম মিয়া, মনির শেখ কামরুল ফারাজী এবং ধূলগ্রামের হরমুজ সর্দার, রাশেদ সর্দার, ফারুক হাওলাদার এ অঞ্চলে ১৫৯টি চুল্লি তৈরি করে কয়লা বানিয়ে আসছেন। কিন্তু তারা এতটাই দুর্ধর্ষ যে স্থানীয়রা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তো দূরের কথা মুখ খুলতেও সাহস করে না। মাটি, ইট ও কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে তৈরি করা চুল্লিতে প্রতিদিন কয়েক হাজার মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, চুল্লির মধ্যে সারিবদ্ধভাবে কাঠ সাজিয়ে চুল্লির খোলা মুখ দিয়ে আগুন দেয়া হয়। প্রায় ৭ থেকে ১০ দিন পোড়ানোর পর চুলা থেকে কয়লা বের করা হয়। প্রতিটি চুল্লিতে প্রতিবার ২০০ থেকে ৩০০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। কাঠ পুড়ে কয়লা হয়ে গেলে সেগুলো বের করে ঠাণ্ডা করে বিক্রির উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে কয়েকজন চুল্লি মালিকের সঙ্গে কথা বললে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘাটে ঘাটে টাকা দিয়ে আমাদের ব্যবসা চালাতে হয়। স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে সব মহলকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেই তারপর ব্যবসা চালাই।
এ বিষয়ে অভয়নগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। খোঁজখবর নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব অভিযান চালানো হবে।
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের সহকারী পরিচালক মো. হারুন অর রশিদের কাছে এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর আগে অভিযোগ পেয়ে চুল্লিগুলো ভেঙে দেয়া হয় এবং জরিমানাও করা হয়েছিল। বর্তমান অবস্থায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকর ব্যবস্থা নেব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়