মুম্বাইয়ে ভবনধসে নিহত ১৯

আগের সংবাদ

বানভাসিদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই

পরের সংবাদ

আবারো বিপৎসীমার উপরে সুরমা-কুশিয়ারা : দীর্ঘস্থায়ী বন্যার আশঙ্কা সিলেট-সুনামগঞ্জে

প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জাহিদুল ইসলাম, সিলেট ব্যুরো : শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি এখনো সামাল দিতে পারেনি সিলেট-সুনামগঞ্জ। এখনো শত শত গ্রাম পানির নিচে। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। খেয়ে না খেয়ে রাস্তার পাশে, আশ্রয়কেন্দ্রে দিনাতিপাত করছেন দুর্গত হাজার হাজার মানুষ। দিন দিন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বাড়ছে। এর মধ্যেই মঙ্গলবার সকাল থেকে থেমে থেমে এ দুই জেলায় বৃষ্টি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জের ছাতকে দেশের সর্বোচ্চ ১৭০ মিলিমিটার ও লরেরগড়ে ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এ কারণে বন্যার আঘাত দীর্ঘ হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মানুষের মাঝে ফের বিরাজ করছে আতঙ্ক-উদ্বেগ।
এমনিতেই সিলেটে দুই দফা বন্যায় বড় সংকটে পড়ে গেছে অর্থনীতি। এসব বন্যায় বোরো আর আমন ফলন নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি কৃষি, মৎস্য, পর্যটনসহ নানা খাতে ব্যাপক লোকসান হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, বন্যার প্রভাবে এরই মধ্যে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। এ অবস্থায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেয়ার শঙ্কা ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ ছাড়া কিছুই নয়। এতে শতাব্দীর সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে সিলেট।
অতিবৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেট জেলার ১৩ উপজেলার পাশাপাশি সিলেট মহানগরীর একাংশ তলিয়ে গিয়েছিল স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ এই বন্যায়। প্রাণহানির পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ, ফসল, অবকাঠামোসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অধিকাংশ সরকারি দপ্তর, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব মিলিয়ে ক্ষতির অঙ্কও বিশাল। তবে গতকাল বুধবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কমতে থাকায় ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিকের পথেই ছিল। রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় নদনদীর পানি কমতে থাকায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছিল মানুষ। তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে ফের ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে সিলেট জেলার অধিকাংশ এলাকায়। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে শুরু করেছে সিলেটের প্রধান নদনদীগুলোর পানি। এতে জেলাজুড়ে চলমান বন্যা আরো দীর্ঘ হবার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে ছিল ১০.৫৯ সেন্টিমিটার। গতকাল বুধবার একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০.৭৫ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমা থেকে মাত্র ৫ সেন্টিমিটার নিচে। একই সময়ে কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সুরমা। এদিকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে কুশিয়ারা নদীতেও। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কুশিয়ারা নদীর আমলশিদ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শ্যাওলা পয়েন্টে তা বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার উপরে। ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে তা মঙ্গলবারের মতই বিপৎসীমার ১০৩ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে। বড় নদীগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোভা, সারি ও ধলাই নদীর পানি।
এদিকে, মঙ্গলবার রাতের ভারি বৃষ্টিতে ফের জলমগ্ন হয়ে পড়েছে নগরীর বেশিরভাগ এলাকা। উপশহর, তালতলা, তেরোরতন, মির্জাজাঙ্গাল, দক্ষিণ সুরমার ধরাধরপুর, বরইকান্দি, বারখলাসহ যেসব এলাকা থেকে চলতি সপ্তাহে পানি নেমে গিয়েছিল সেসব এলাকা ফের প্লাবিত হয়েছে। কিছু কিছু এলাকার ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ফের দুর্ভোগে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।
নগরীর উপশহর এলাকার বাসিন্দা মাসুক আমিন জানান, মঙ্গলবার রাতের ভারি বর্ষণে পানি রাস্তা ছেড়ে ঘর পর্যন্ত পৌঁছেছে। তিনি বলেন, টানা ১০ দিন পর মাত্র দুদিন আগে ঘর থেকে পানি নেমেছে। ঘরের আসবাবপত্র সব নষ্ট হয়েছে আগেরবার। কিছু কিছু নতুন কিনতে হয়েছে। এখন আবার ঘরে পানি উঠলে দুর্ভোগের কোনো সীমা থাকবে না।
নগরীর কামালগড় এলাকার মো. আলম বলেন, প্রায় ৯ দিন আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে বাড়ি ফিরেছি শুক্রবার। এই কদিনে ঘরের আসবাবপত্র, বিছানাপত্র সব গুছিয়েছি। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি মানসিকভাবেও ছিলাম বিপর্যস্ত। কিন্তু কাল (মঙ্গলবার) রাত থেকে আবার ঘরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এবার যদি আগের মতো হয় তাহলে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারব না। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা বলেন, সিলেটের পাশাপাশি উজানেও বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে নদনদীর পানি বাড়ছে। এ রকম বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যা দীর্ঘ হতে পারে।
আর সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, বন্যা পরিস্থিতির আবারো অবনতি হচ্ছে। এর আগে যেসব এলাকা থেকে পানি নেমে গিয়েছিল সেসব এলাকা আবারো প্লাবিত হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পানি আগেও পুরোপুরি নামেনি। সড়ক থেকে পানি নেমে গেলেও ড্রেন, ছড়াসহ সব জলাধারই পানিতে ভরা ছিল। নদী পানি টানতে পারছে না। ফলে বৃষ্টির পানি নামার জায়গা পাচ্ছে না। এ কারণে নতুন করে বৃষ্টি হওয়ায় আবারো নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তিনি বলেন, বৃষ্টি না কমলে বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা আছে। এদিকে পানি পুরোপুরি নামার আগেই সুনামগঞ্জেও ফের বাড়তে শুরু করেছে নদনদীর পানি। গত তিন দিন থেকে সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। এতে করে নতুন করে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে সুনামগঞ্জে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যে বৃষ্টি হওয়ার কারণে পাহাড়ি ঢল নামছে দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলায়। যার কারণে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত আছে। নদনদী ও হাওর পানিতে টইটম্বুর থাকায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে দোয়ারাবাজার উপজেলার নি¤œাঞ্চল আবারো প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভারতে বৃষ্টি হলে সুনামগঞ্জে পানি বাড়া স্বাভাবিক। সোমবার রাত থেকেই সুনামগঞ্জের কিছু অঞ্চলে ও ভারতে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে আবারো পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে হওয়া বৃষ্টিতে জেলার নদনদীতে পানির উচ্চতা কিছুটা বেড়েছে। সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি ১০ সেমি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সুরমার পানি বৃদ্ধি পেলেও এখনো বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছে। অন্যদিকে ছাতকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬০ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ছাতকে বৃষ্টি হয়েছে ১৭০ মিলিমিটার ও সুনামগঞ্জে ৩৫ মিলিমিটার। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, সোমবার থেকে ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে সুনামগঞ্জের নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দোয়ারাবাজার ও ছাতক আগে থেকেই পানিতে নিমজ্জিত থাকায় পানি কোথাও বের হওয়ার জায়গা না পেয়ে উপজেলার কিছু কিছু নি¤œাঞ্চলে ঢুকে পড়ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়