সেন্ট লুসিয়ায় ধীরে এগুগোচ্ছে উইন্ডিজ

আগের সংবাদ

বিধ্বস্ত শহরে ভূতুড়ে নিস্তব্ধতা : আদালতের নিয়মিত বিচারকাজ বন্ধ > অফিসপাড়া নিথর > বন্ধ হাসন রাজা মিউজিয়াম > পথে পথে ক্ষতচিহ্ন

পরের সংবাদ

মতবিনিময় সভায় বক্তারা : বাজেট বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকারের সক্ষমতা বাড়াতে হবে

প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বিগত কয়েক অর্থবছরে প্রতিবার স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্য টাকার অংকে বাজেট বরাদ্দ বাড়ে। তবে মোট জিডিপির তুলনায় এবার প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে তা দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। মোট বাজেট বাড়ানো ও সরকারি ব্যয় বাড়ানোর তুলনায়ও এ বরাদ্দ কম। অন্যদিকে এ বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একেক ধরনের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা একেক রকম। বেশির ভাগক্ষেত্রেই তারা জাতীয় সরকারের বরাদ্দের ওপর নির্ভরশীল, নিজস্ব রাজস্ব সংগ্রহ ও সক্ষমতায় ঘাটতি রয়েছে। ঘাটতি রয়েছে আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাও। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। তাই করোনা-উত্তর আর্থসামাজিক পুনরুদ্ধারেও স্থানীয় সরকারকে কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় আইনি ও পদ্ধতিগত পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছে।
জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটকে কেন্দ্র করে গতকাল রবিবার সিরডাপ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় বাজেটে স্থানীয় সরকারের জন্য বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব বলেন। গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরামের চেয়ারপারসন ও পিকেএসএফের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরামের সমন্বয়কারী মহসিন আলীর সঞ্চালনায় এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম। সভায় সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. জেবউননেছা, পরিকল্পনা কমিশনের রাজস্ব ও মুদ্রানীতি অনুবিভাগের উপপ্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান সরকার, ইউএনডিপির ডেমোক্রেটিক গভার্নেন্স পোর্টফলিওর প্রোগ্রাম এনালিস্ট মো. মোজাম্মেল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আসিফ শাহান, দৈনিক জনকণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি তপন বিশ্বাস প্রমুখ। এছাড়া বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা ও নাগরিক সমাজের সদস্যরা এতে বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমাদের ক্ষমতাকেন্দ্রিক ও আমলাতান্ত্রিক বিন্যাসের অবস্থা বিচার-বিশ্লেষণ করে স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনকে সমন্বিতভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে হবে। ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, সরকারের দিক থেকে এ বিশ্লেষণকে মেনে নিয়ে এগিয়ে গেলে গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা সম্ভব হবে। ড. আসিফ শাহান বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় লক্ষ্য করা য়ায়, রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার কারণে আমালাতন্ত্র শক্তিশালী হচ্ছে। আমাদের পারস্পরিক কোঅপারেশন প্রয়োজন। বাস্তবতার আলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করে স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমাদের অগ্রসর হতে হবে।
ড. জেবউননেছা বলেন, আমরা ক্ষমতার চেয়ারে বসলে জনগণের কথা ভুলে যাই। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে আমাদের এই মানসিকতা পাল্টাতে হবে। সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে। মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান সরকার বলেন, এসডিজির স্থানীয়করণে সরকারের উদ্যোগ আরো বাড়বে। এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। স্বনির্ভরতা অর্জনের মাধ্যমেই বিকেন্দ্রীকরণ ঘটাতে হবে। জাতীয় পরিকল্পনা ও স্থানীয় পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।
মূল প্রবন্ধে ড. কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের সমাজ ও অর্থনীতি এখন একাধারে করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও বৈষম্য, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন- এ রকম বৈপরীত্যমূলক সংকট ও সম্ভাবনার সামনে দাঁড়িয়ে। এ পরিস্থিতিতে আর্থসামাজিক পুনর্গঠন প্রচেষ্টায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিজ্ঞতা, সামর্থ্য ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় সরকারকে সহযোগী ভূমিকা পালন করতে হবে, যথাযথ বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে। বরাবরের মতো এ অর্থবছরেও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় খাতে বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ৪৩ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। গত বছরের তুলনায় ২ হাজার ১৪১ কোটি টাকা বেশি। যদিও মোট জিডিপির তুলনায় তা আসলে কমে গিয়েছে। উন্নয়ন বাজেটের ক্ষেত্রে উপজেলা পরিষদের বরাদ্দই কেবল বেড়েছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য উন্নয়ন বরাদ্দ ২ শতাংশের আশপাশে বা তারও কম থাকছে সাম্প্রতিককালে- যা খুবই অপ্রতুল। বাজেট বাস্তবায়ন সক্ষমতার ক্ষেত্রে নগর স্থানীয় সরকারগুলো গ্রামীণ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় এগিয়ে আছে। তিনি প্রস্তাব করেন, করোনা-উত্তর পুনরুদ্ধার কার্যক্রম এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোর স্থানীয়করণে স্থানীয় সরকারকে যুক্ত করার পাশাপাশি গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রকৃত অর্থে স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বমর্যাদা ও সক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তিনি এ সময় সুনির্দিষ্ট কিছু সুপারিশ উপস্থাপন করেন। তারমধ্যে রয়েছে- সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য দিতে হবে। মধ্যমেয়াদে স্থানীয় সরকারে অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ করতে হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কার্যত সীমারেখা স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হবে। নিজস্ব উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য স্থানীয় সরকারের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। কর শিডিউল আধুনিকায়ন করতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কর/রাজস্ব ভাগাভাগি পদ্ধতিকে যুক্তিসঙ্গত করতে হবে। করোনা-উত্তর পুনর্বাসন ও পুনরুদ্ধারের কার্যক্রমে স্থানীয় সরকারকে যুক্ত করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের স্থানীয়করণে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়