মাদকবিরোধী অভিযানে রাজধানীতে গ্রেপ্তার ৪৪

আগের সংবাদ

উদ্ধারের অপেক্ষা আর ত্রাণের আকুতি : পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ > ভেসে উঠছে বানভাসি মানুষের লাশ > এখনই সচল হচ্ছে না ওসমানী বিমানবন্দর

পরের সংবাদ

আজ থেকেই রাত ৮টার পর দোকানপাট বন্ধ : ব্যবসায়ীদের সম্মতি- তবে তিন আবেদন

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : কেবল পচনশীল পণ্য ও ওষুধের দোকান ছাড়া আজ সোমবার থেকে সারাদেশে সব ধরনের দোকানপাট রাত ৮টার পর বন্ধ রাখতে হবে। এ সিদ্ধান্ত সারাদেশে একযোগে কার্যকর হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে। ব্যবসায়ীরা সরকারের এ প্রস্তাব পরিপালন করবেন। তবে ঈদুল আজহা উপলক্ষে আগামী ১ জুলাই থেকে ১০ জুলাই রাত ১০টা পর্যন্ত এ নিয়ম শিথিল করাসহ তিনটি আবেদন জানিয়েছেন। বাড়তি এই দুই ঘণ্টার আবেদনের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে অনুমতির জন্য পাঠানো হবে। সেখানে অনুমতি পেলে পরে জানানো হবে।
গতকাল রবিবার সচিবালয়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সম্মেলন কক্ষে সংশ্লিষ্ট সবার উপস্থিতিতে এসব সিদ্ধান্ত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। এ সময় বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই), দোকান মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকসূত্র জানায়, ২০০৬ সালের শ্রম আইন এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে হাসপাতাল, রেলস্টেশন, বাসস্টেশন, বিমানবন্দর, হোটেল, নাপিত, ওষুধের দোকান, সিনেমা, থিয়েটার, ক্লাব, মিষ্টি ও ফুলের দোকান, ওয়াসা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস অফিসসহ অন্যান্য জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এ নিয়মের বাইরে থাকবে।
এর আগে, গত ১৬ জুন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকের সই করা চিঠিতে রাত ৮টার পর সারাদেশে দোকান, শপিং মল, মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার খোলা না রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। এ নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী জ্বালানির অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিজনিত বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী সানুগ্রহ নির্দেশনা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন ভোরের কাগজকে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে তেল ও জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকার জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তাই সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে না চলার কোনো বিকল্প আমাদের নেই। তবে সরকারের কাছে আমাদের তিনটি অনুরোধ জানানো হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১ জুলাই থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত রাত ১০টা পর্যন্ত দোকান পরিচালনার সুযোগ দেয়া, মহল্লার অতি ক্ষুদ্র দোকানগুলো খোলা রাখার অনুরোধ এবং ঈদুল আজহা পরবর্তী বেলা ১২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দোকানপাট চালু রাখার অনুমতি।
তিনি বলেন, যেহেতু বিদ্যুৎ জ¦ালানি সংকট মোকাবিলায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যানজটের কারণে যে পরিমাণ জ¦ালানি তেল নষ্ট হয়, কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। তাই সকালে ও বিকেলে যানজট অনেকটা নিরসন করা সম্ভব হবে।
বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, আমাদের দেশ দুবাইয়ের মতো নয়। তবে সামনে যেহেতু কুরবানির ঈদ। আশা করি, বিষয়টিকে সরকার বিবেচনায় নেবে।
এর আগে এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর-দক্ষিণ, এফবিসিসিআই, এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন, এমসিসিআই, ডিসিসিআই, বিজিএমইএ বিকেএমইএ ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী।
বৈঠক শেষে শ্রম প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য রাত ৮টার পর সারাদেশের দোকান, শপিংমল, মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার বন্ধের নির্দেশনা সোমবার থেকে কার্যকর করা হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে রাত ৮টার পরে সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে। ইতোমধ্যে এ নির্দেশনা সারাদেশের উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে এবং এটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে সরকার।
তবে গত শনিবার এক বৈঠকে এ নির্দেশনা আগামী ঈদুল-আজহা পর্যন্ত স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন এফবিসিসিআই। ব্যবসায়ীরা বলেন, কোভিডকালীন গত দুই বছরে ঈদ ও নববর্ষসহ অন্যান্য উৎসবে পুরোমাত্রায় বেচাকেনা না হওয়ায় লোকসান গুনতে হয়েছে। উৎসবকেন্দ্রিক কেনাবেচায় মূলত সন্ধ্যার পরই অফিস ফেরত ক্রেতাদের সমাগম শুরু হয়। এমন প্রেক্ষাপটে রাত ৮টা পর্যন্ত কেনাবেচা সীমিত করা হলে দেশের লাখ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী ক্ষতির মুখে পড়বেন, একই সঙ্গে ক্রেতা সাধারণকেও ভোগান্তি পোহাতে হবে।
রাত ৮টার পর খোলা থাকবে যেসব প্রতিষ্ঠান : সিনেমা হল, তরিতরকারির দোকান, সেলুন, পান, বিড়ি, সিগারেটসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এ নির্দেশনার বাইরে থাকবে। যেমন- ডক, জেটি, স্টেশন, বিমানবন্দর এবং পরিবহন সার্ভিস টার্মিনাল অফিস। তরিতরকারি, মাছ, মাংস, দুগ্ধজাতীয় সামগ্রী, রুটি, পেস্ট্রি, মিষ্টি এবং ফুল বিক্রির দোকান।
ওষুধ, অপারেশন সরঞ্জাম, ব্যান্ডেজ অথবা চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান। দাফন ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রির দোকান।
তামাক, সিগারেট, পান-বিড়ি, বরফ, খবরের কাগজ, সাময়িকী বিক্রির দোকান এবং দোকানে বসে খাওয়ার (হালকা) নাশতা বিক্রির খুচরা দোকান। খুচরা, পেট্রল বিক্রির জন্য পেট্রলপাম্প এবং মেরামত কারখানা নয় এমন মোটরগাড়ির সার্ভিস স্টেশন। নরসুন্দর এবং কেশ প্রসাধনীর দোকান। যে কোনো ময়লা নিষ্কাশনকারী প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র। যে কোনো শিল্প, ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠান যা জনগণকে শক্তি আলো অথবা পানি সরবরাহ করে এমন প্রতিষ্ঠান। ক্লাব, হোটেল, রেস্তোরাঁ, খাবার দোকান, সিনেমা অথবা থিয়েটার।
তবে শর্ত থাকে যে, একই দোকানে অথবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যদি একাধিক ব্যবসাবাণিজ্য পরিচালিত হয় এবং অধিকাংশ তাদের প্রকৃতির কারণে এই ধারার অধীন অব্যাহতি পাওয়ার যোগ্য হয়, তাহলে সমগ্র দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির ক্ষেত্রে উক্তরূপ অব্যাহতি প্রযোজ্য হবে।
এছাড়াও প্রধান পরিদর্শক সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপিত সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা উপরোক্ত প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠান শ্রেণির জন্য খোলা ও বন্ধের সময় স্থির করে দিতে পারবেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়