সোহেল চৌধুরী হত্যা : শেষ দিনেও দাখিল হয়নি কেস ডকেট

আগের সংবাদ

ভয়াবহ বন্যায় দিশাহারা মানুষ

পরের সংবাদ

মহারাজ

প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঢাকা ছেড়ে আসার পর এর মধ্যে বাইশ-তেইশ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। এই সময়টা যে কীভাবে কেটেছে, তা একমাত্র সে-ই অনুভব করছে। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ঢাকা শহরে শীত কমে আসে। তবে সীমান্তবর্তী এই শহরে পা রাখার পর বেশ ভালো ঠাণ্ডা অনুভব করছে সে। এখানে শীতটা এখনো মোটামুটি জাঁকিয়েই আছে। হোটেলে আসার পর সে নিজের রুমের দরজা-জানালা বন্ধ করে বসে আছে বিছানায়। এরপর কী ঘটতে চলেছে- ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। নিজের সঙ্গে কোনো মোবাইল ফোন নেই তার এখন। পরশু রাতে অপারেশনটা চালানোর পর ঘটনাস্থল থেকে মোটর বাইকে চড়ে পালানোর সময় অন্ধকারে নিজের মোবাইল ফোন সেটটা কোন দিকে যে ছুড়ে ফেলেছিল খেয়াল নেই। ওটা সঙ্গে থাকলেই যত বিপদ। ফোন নম্বর ধরে ট্র্যাকিং করে তার অবস্থান সহজেই জেনে ফেলতে পারে পুলিশ-র‌্যাব। সেই সূত্র ধরে তাকে সহজেই আটক করে ফেলত এতক্ষণে।
গত পরশুর অপারেশনটা ছিল অনেক চ্যালেঞ্জিং। তার নিজের জন্যও ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। রাজধানীর অন্ধকার জগতে গত কয়েক বছরের কর্মকাণ্ডে তার বিশেষ পরিচিতি ছড়িয়ে পড়েছে। একজন পেশাদার খুনি হিসেবে এর মধ্যেই অনেকগুলো অপারেশন চালিয়েছে সে। তার হাতে প্রাণ হারিয়েছে বেশ কয়েকজন মানুষ। তারা সবাই নিরীহ, নিষ্পাপ, ভদ্র মানুষ ছিল, সেটাও নয়। প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরোধ, ক্ষমতার দ্ব›দ্ব, সংঘাত, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির বিশাল অঙ্কের টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে শত্রæতার কারণে প্রতিহিংসার শিকার হতে হয়েছে তাদের। আর সেই প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে সে বারবার ব্যবহৃত হয়েছে শহরের বিভিন্ন এলাকার ক্ষমতাধর কিছু মানুষের পক্ষে কাজ করা শুটার হিসেবে। বিনিময়ে হয়তো কড়কড়ে নোটের বান্ডিল চলে এসেছে পকেটে। কিন্তু এভাবে তো বেশি দিন পার করা সম্ভব নয়- একসময় উপলব্ধি করেছে সাধারণ নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান রাজ। আইনের চোখে ভয়ংকর খুনি অপরাধী হিসেবে অনেকগুলো মামলার বেড়াজালে আটকা পড়ে অস্বস্তির যন্ত্রণায় নিত্যদিন জর্জরিত হয়েছে। সেই মামলার বোঝা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সে।
শহরের প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন নেতা এবং ব্যবসায়ীর পক্ষে কাজ করার সুবাদে তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠেছে তার। তাদের কাছেই নিজেকে মামলার জাল থেকে মুক্ত করে দিতে অনেকবার বলেছে। তারা আশ্বাস দিয়েছে, সময় এবং সুযোগ মতো কাজ করে দেয়া হবে। কয়েক সপ্তাহ আগে তেমনি একজন বড় নেতা তাকে ডেকে নিয়ে নতুন একটি কাজ দেন। যত দ্রুত সম্ভব অপারেশন চালাতে হবে। তাদের প্রতিপক্ষ প্রভাবশালী আরেক রাজনৈতিক নেতাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে হবে যে কোনো মূল্যে। বড্ড বেশি বাড় বেড়েছে তার। যে কারণে আজকাল অনেক কিছু হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। তাকে কোনোভাবেই বাঁচিয়ে রাখা চলবে না।
একজন পেশাদার, অভিজ্ঞ, চৌকষ শুটার হিসেবে রাজ অনেক নির্ভরযোগ্য। তার হাতের নিশানা অব্যর্থ সব সময়। এ লাইনে তার আলাদা পরিচিতি রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই অপারেশনে রাজকেই প্রয়োজন। যে কারণে তাকে ডেকে নেয়া হয়েছিল গোপন বৈঠকে।
বেশ কিছুদিন থেকে নিজের কৃতকর্মের জন্য ভীষণ অনুশোচনা হচ্ছিল তার। একজন কুখ্যাত খুনির পরিচয় আর অনেকগুলো মামলার অস্বস্তি নিয়ে কতদিন পালিয়ে বাঁচা যায়? এ জীবন থেকে নিজেকে সরিয়ে ভদ্র স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আকুতি তাকে অস্থির করে তুলেছিল। তেমন পরিস্থিতিতে নতুন কোনো অপারেশনে আবার অস্ত্র হাতে খুনির ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে তার মন কোনোভাবেই সায় দেয়নি। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ জানিয়েছে সে। এ কাজে নিজের অপারগতার কথাও স্পষ্টভাবে বলেছে, বড় ভাই, আমারে মাফ কইরা দ্যান। আমি আর পাপের বোঝা বাড়াইতে চাই না। এই সব কাজ আমি আর করব না ঠিক করছি। একজন শুটার, একজন খুনির পরিচয় নিয়ে বাঁচতে মন চায় না আমার। আমি আমার আব্বা-আম্মার সামনে গিয়া দাঁড়াইতে পারি না। আমার বউ আমারে ছাইড়া গেছে। আমার ছোট্ট বাচ্চাটারে দেখতে কত মন চায়। কিন্তু পারি না। সবার কাছ থিকা আমি অনেক অনেক দূরে সইরা গেছি। এই পৃথিবীতে তারা সবাই থাকলেও এখন তারা আমার কাছ থিকা দূরে থাকতে চায়। এইডা তো কোনো জীবন হইল না। এর চেয়ে মইরা যাওন অনেক ভালো। প্লিজ, বড় ভাই, আমারে নতুন কোনো কাজ দিবেন না। আমাকে পারলে আগের মামলাগুলো থিকা বাঁচানোর উপায় কইরা দেন। আমার এই উপকারটা করেন দয়া কইরা। আপনের অনেক পাওয়ার, অনেক ক্ষমতা আছে, জানি। চাইলে আমার উপকারটা করতে পারেন আপনি। দয়া কইরা আমার আগের জীবনটা ফিরাইয়া দ্যান।
রাজ জানে, সে যে চোরাবালিতে পা রেখেছে তার জন্য দায়ী প্রভাবশালী, ক্ষমতাধর এসব মানুষই। শুরুতে ছোটখাটো কিছু অপরাধ করে পুলিশের খাতায় নাম উঠে যাওয়ার পর থেকে অনেকটা অনিচ্ছায় বলা যায়, বাধ্য হয়েই বারবার তাদের স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে হচ্ছে তার মতো আরো অনেক ছেলেকেই। নিজেকে আইনের বেড়াজাল থেকে রক্ষা করতে দিনে দিনে আরো দাপট আর শক্তি নিয়ে শহরজুড়ে একের পর এক অপরাধ করে গেছে সে। সেই সব বড় ভাইদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ক্রমেই তাকে আরো বেপরোয়া করেছে। তার নাম শুনলে আজকাল শহরজুড়ে আতঙ্ক এবং ত্রাস সৃষ্টি হয় অনেক মানুষের মনে। এভাবে একে একে ভয়ংকর সব ঘটনার জন্ম দিয়ে কুখ্যাত হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে নানা মামলায়। এই ভয়ংকর চোরাবালি থেকে উদ্ধার করার ক্ষমতাও ওইসব প্রভাবশালী, ক্ষমতাবান মানুষের মধ্যে রয়েছে। নিরুপায় হয়ে তেমন একজন বড় ভাইয়ের শরণাপন্ন হওয়ার পর নতুন অপারেশনের কাজটা তার ওপর চেপেছিল। কোনোভাবেই মন চায়নি কাজটা করতে। কিন্তু দুঃসহ অন্ধকার জীবনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার তীব্র আকাক্সক্ষা রাজকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও কিলিং মিশনে নামতে বাধ্য করছিল। পেশাদার শুটারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে তাকে আবার দুঃসাহসী করেছিল। এটাই শেষ অপারেশন, জীবনে আর কোনোদিন অস্ত্র হাতে ভয়ংকর নির্মম খুনির ভূমিকায় না নামার শপথ নিয়েছিল সে মনে মনে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠিকঠাক মতোই রাজ অপারেশন চালিয়েছিল। জ্যামে গাড়িটা থামতেই রাস্তার এ পাশে মোটরবাইকের পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় থাকা রাজ আইল্যান্ড পেরিয়ে ওপারে হেঁটে গিয়ে ঠিক মাইক্রোবাসের একদম গা ঘেঁষে দাঁড়িয়েছিল। গাড়ির ভেতরে বসে থাকা কিলিং মিশনের টার্গেট মানুষটির মাথা, মুখ, গলা আর বুক বরাবর সরাসরি রিভলভার থেকে পরপর অনেকগুলো গুলি করেছিল। ট্রিগারে চাপ দিতেই একের পর পর এক বুলেট বেরিয়ে মানুষটিকে মারাত্মকভাবে ক্ষত-বিক্ষত করেছিল। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিদ্যুৎ গতিতে আবার আইল্যান্ড পেরিয়ে রাস্তার এপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মোটরবাইকে সান্টুর পেছনে চড়ে বসেছিল সে। সান্টু মোটরবাইকে স্টার্ট দিয়েই রেখেছিল। অপারেশন শেষ করে মোটরবাইকে উঠে বসতেই তাকে নিয়ে এক টানে নিমিষেই ঘটনাস্থল থেকে সরে এসেছিল।
এ ঘটনার পর এই শহরে থাকাটা মোটেও নিরাপদ নয়। ধরা পড়ার আগেই নিজেকে বাঁচাতে শহর ছেড়ে, যদি সম্ভব হয় দেশের সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অন্য দেশে চলে যেতে হবে তাকে। নিদের্শদাতা বড় ভাই লোক পাঠিয়ে রাজকে যে কোনো মূল্যে ঢাকা শহর থেকে পালিয়ে সীমান্তবর্তী একটি শহরে চলে যেতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। এছাড়া তার সামনে বিকল্প কোনো পথ খোলা ছিল না। দ্রুত গাবতলী গিয়ে নাইট কোচে চড়ে বসেছিল সে। ওখানে যেতে পারলে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার একটা উপায় বের করা যাবে- ধারণা করেছিল সে। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর তাকে হতাশ হতে হয়েছে। গত বেশ কিছুদিন ধরে সীমান্তে বেশ উত্তেজনা বিরাজ করছে। লুকিয়ে অবৈধভাবে ওপারে পাড়ি দিতে গিয়ে সীমান্ত রক্ষীদের আচমকা গুলিবর্ষণে দুজন মারা গেছে। তাদের লাশও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে নানা আলাপ-আলোচনার পর উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। কাউকে কোনোভাবেই অবৈধভাবে লুকিয়ে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে না। দেখামাত্র গুলির নির্দেশ রয়েছে উভয়পক্ষের সীমান্ত রক্ষীদের। নিজে বেশ কিছুক্ষণ ঘুরে-ফিরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সে বাস্তবতা উপলব্ধি করেছে। যেমনটি চিন্তাভাবনা করে এখানে এসেছিল সে, নিরাপদে দেশ ছেড়ে পালাতে পারবে- বাস্তবে তা করতে যাওয়া মানে এখন নিজের জীবন বিপন্ন করা। জীবন বাঁচাতে সে ঢাকা থেকে এতদূরে পালিয়ে এসেছে। সেই জীবনের জন্যই দেশ ছেড়ে চলে যেতেও দ্বিধা করছে না। এখন যদি সীমান্ত রক্ষীদের গুলিতে প্রাণ হারাতে হয় তাহলে কী লাভ হলো?
অনেক ভাবনা-চিন্তার পর একটা ফ্লেক্সিলোডের দোকান থেকে মোবাইলে ঢাকায় যোগাযোগ করেছিল রাজ। রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতা বড় ভাই তাকে কয়েকদিন ওই শহরে আত্মগোপনে থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন। পরিস্থিতি অনুকূল হলে সুযোগ মতো নিরাপদে সীমান্ত পাড়ি দিতে বলেছেন তিনি।
রিভলভার হাতে বেপরোয়া হয়ে গুলি করে মানুষ মারতে গিয়ে এতদিন বিচলিত হয়নি সে। তখন নিজের জীবনের কথা একটুও মনে আসেনি। নিজের কৃতকর্মের জন্য একসময় তার শাস্তি হতে পারে, সেই শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত- এটা মাথায় এলেও তুড়ি মেরে নিমিষেই সরিয়ে দিয়েছে বারবার। কিন্তু আজকাল তার মধ্যে মৃত্যুভয় ঢুকেছে। একজন শুটার হিসেবে এ পর্যন্ত যতগুলো খুন করেছে তার বিচার হলে নির্ঘাত মৃত্যুদণ্ড হবে তার। অথচ সে এভাবে মরতে চায় না, আরো অনেকদিন বেঁচে থাকতে চায় এই পৃথিবীতে। একজন মানুষ হয়ে অনেক মানুষের ভিড়ে মিশে থাকার আনন্দ উপভোগ করতে চায়। পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দ, বেদনা, সুখ-দুঃখ, ভাগাভাগি করে সাধারণভাবে বেঁচে থাকা তীব্র আকাক্সক্ষা তাকে বারবার নাড়া দিয়ে যায় এখন।
সাধারণ এক কলেজছাত্র থেকে অপরাধ জগতের কুখ্যাত খুনি, সন্ত্রাসী হিসেবে সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছিল রাজ। বেপরোয়া জীবন, দুর্ধর্ষ কর্মকাণ্ড, প্রচলিত আইন-কানুন, বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা না করে পথ চলতে গিয়ে এর ভয়ংকর পরিণতির কথা ভুলেই গিয়েছিল সে। আজকের পলাতক ফেরারি জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তাকে কুরে কুরে খাচ্ছে এখন। এ জীবন থেকে বেরিয়ে সুন্দর স্বস্তিকর জীবনের আকাক্সক্ষা তাকে আবার অস্থির করে তুলছে এ মুহূর্তে। আহা, আবার যদি সেই জীবনে ফিরে যাওয়া সম্ভব হতো। যেখানে একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী, খুনি, সমাজবিরোধী হিসেবে সবার ঘৃণার পাত্র হওয়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে যে কোনো সময়ে ধরা পড়ার ভয় এবং ক্রসফায়ারে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণের শঙ্কা-দুশ্চিন্তা নিয়ে অস্থিরভাবে ঘুরে বেড়ানো কতটা যন্ত্রণাদায়ক, এখন অনুভব করছে সে প্রতি মুহূর্তে।
সীমান্তবর্তী ছোট্ট জেলা শহরের সাধারণ এক হোটেল রুমে দরজা-জানালা বন্ধ করে সে তার বর্তমান সময়টাকে ভুলে আগের সাধারণ কিশোরবেলা আর তারুণ্যদীপ্ত উজ্জ্বল প্রাণবন্ত সময়গুলোতে ফিরে যেতে প্রাণপণ চেষ্টা করে। বাসায় সবসময় বাবা তাকে অনেক আদর করে ‘মহারাজ’ বলে ডাকতেন। বাবার মুখে আদর মাখানো মহারাজ ডাকটা শুনলে বুকের ভেতরটা ভরে যেত তখন।
‘আমার মহারাজ একদিন অনেক বড় মানুষ হবে, দেশ-বিদেশে বিখ্যাত হবে- তোমরা সবাই দেখ। আমরা সবাই তখন গর্ব অনুভব করব তার জন্য। আমাদের টানটানি সংসারের চেহারাটা বদলে যাবে এই ছেলের সুখ্যাতি আর সুনামে।’
বাবার মুখের কথাগুলো এতদিন পরেও এখনো যেন শুনতে পায় সে। মনে হয়, দরজার ওপাশ থেকে বাবা যেন সেই কথাগুলো বলেই চলেছেন। নিজেকে ভীষণ অসহায় আর অনেক দুঃখী মনে হয় তার এই মুহূর্তে। একজন দুর্ধর্ষ শুটার, খুনি সন্ত্রাসী হিসেবে শক্তি সাহস আর বেপরোয়া ভাব নিয়ে গত বেশ কয়েকটি বছর দাপিয়ে বেড়িয়ে আজকের পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেখান থেকে পেছনে ফিরে যাওয়ার কোনো পথ খোলা নেই এখন তার। যে কোনো সময়েই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন, গোয়েন্দা সংস্থার চৌকষ মানুষগুলো নানা সূত্র অনুসন্ধান করে গন্ধ শুঁকে শুঁকে এখানে এসে ঠিকই হাজির হতে পারে। দেশ ছেড়ে এর আগে তার মতো বহু খুনি, সন্ত্রাসী নিরাপদে পালাতে পারলেও তার বেলায় পরিবেশ-পরিস্থিতি পুরোপুরি প্রতিকূলে রয়েছে। নিয়তি তার সঙ্গে চরমভাবে প্রতারণা করেছে। এখন সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করতে গেলে বড় ধরনের বিপদ এড়ানো যাবে না। বরং আরো ভয়ানক বিপদে পড়ার সম্ভাবনাই পুরোপুরি। এ অবস্থায় এখন কী করবে সে, তার কী করার আছে- এতসব ভাবতে থাকে রাজ।
তখন হোটেল রুমের দরজার বাইরে কয়েকজন মানুষের কথাবার্তা শোনা যায়। দরজায় ক্রমাগত টোকা পড়তে থাকে একসময়। ঘরের ভেতর থেকে বাইরের কিছু দেখার কোনো সুযোগ নেই। কারা এসেছে, কেন এসেছে- বোঝার উপায় নেই। কোথাও কোনো ফাঁক-ফোকরও নেই। তার বুকের মধ্যে কে যেন হাঁতুড়ি পেটাচ্ছে ক্রমাগতভাবে। যার শব্দ শুনতে পাচ্ছে সে স্পষ্টভাবে। এখানকার ঠাণ্ডা আবহাওয়ার মধ্যেও বন্ধ ঘরে বসে ঘামতে শুরু করেছে তার পুরো শরীর। অজানা কোনো আশঙ্কায় দম বন্ধ হয়ে আসছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়