আবহাওয়ার পূর্বাভাস : অপরিবর্তিত থাকতে পারে দিন-রাতের তাপমাত্রা

আগের সংবাদ

কুমিল্লায় ভালো ভোটের পর ফলাফল নিয়ে উত্তেজনা : রিফাতকে জয়ী ঘোষণা > অজ্ঞাত ফোনের পর হামলা > মনগড়া ফল : অভিযোগ সাক্কুর

পরের সংবাদ

সংসদে সাবের হোসেন চৌধুরী : তামাকের কারণে বছরে ১ লাখ ৬০ হাজার লোক মারা যায়

প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, প্রতি বছর বাংলাদেশে তামাকের কারণে ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ অকালে মারা যান। আমরা কোভিডের জন্য কত কিছু করলাম, বাংলাদেশ বিশ্বের ৫-৬টি দেশের মধ্যে থেকে এটা প্রতিরোধ করল। এই কোভিডে এ দেশে মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ হাজারের নিচে রাখতে সমর্থ হয়েছি আমরা। অথচ তামাকের কারণে বছরে ১ লাখ ৬০ হাজার লোক মারা যাচ্ছে। এর ফলে ক্ষতি হচ্ছে বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা, আর তামাকের ট্যাক্স পাচ্ছি ২২ হাজার কোটি টাকা। এখানে জীবনের মূল্যের বিষয়টি ধরছে না কেউ। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেট প্রস্তাবনার ওপর বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ২০১৭ থেকে এ বছর পর্যন্ত একই রকম হয়ে আসছে। বাজেটে আমরা সিগারেটের মূল্য ১ টাকা বাড়িয়ে তার ওপর কর বাড়াই। তা হবে কেন, আমরা সুনির্দিষ্ট কর বাড়াতে চাই। তামাক কোম্পানির মুনাফা বাড়ানোর জন্য আমরা নিশ্চয়ই সংসদে আসিনি। তাহলে বিগত বছরে আমরা ৩ হাজার কোটি টাকা তামাক কোম্পানিকে দিয়ে দিলাম। আমি দাম বাড়াচ্ছি। তাদের তো উৎপাদন খরচ বাড়ছে না। তাদের বিনিয়োগ খরচও বাড়ছে না। এই ৩ হাজার কোটি টাকা তো সরকারের কাছে আসত। আমরা তাহলে কী করলাম। আমাদের যে পলিসিটা আছে সেটা হচ্ছে সেশন পলিসি। এটাতে আমরা ডিফার করতে পারি না।
তিনি বলেন, যদি ব্রিটিশ টোব্যাকো কোম্পানির পরিচালকদের তালিকার দিকে তাকানো হয়, দেখা যাবে সেখানে সরকারের শেয়ার মাত্র ৮ শতাংশ, কিন্তু পরিচালক আছে ৫০ শতাংশ। এর ৫ জনই হচ্ছে আমাদের সরকারি কর্মকর্তা বা সিভিল সোসাইটির। কেন ৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব একটা তামাক কোম্পানিকে মুনাফা হিসেবে দেব আমরা, এ প্রশ্ন তোলেন তিনি।
সাবের হোসেন চৌধুরী জানান, যখন সাউথ এশিয়ান সামিট হলো ঢাকায়, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন- ২০৪০ সালে বাংলাদেশ তামাকমুক্ত হবে। কিন্তু যেভাবে আমরা চলছি তাতে ২০৮০ সালেও তামাকমুক্ত হব না। তাহলে কোথায় থাকল আমাদের রোডম্যাপ। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা, কোর্টের রায় তাহলে বাস্তবায়নের জন্য কী হবে।
তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানের ১৮ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে যে আমরা জনস্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেব। এটা হচ্ছে সরকারে অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। আপিল বিভাগের রায় বলছে- তামাক ‘কম্প্রোমাইজ দ্য রাইট টু রাইট’। কিন্তু আমরা কী দেখছি। জাপানি বিনিয়োগ আসছে, হাইকোর্ট বলেছে লাইসেন্স দেবেন না। কিন্তু তা আমরা মানছি না। তামাকে বিনিয়োগ বাড়ছে। তাহলে আমরা কী করলাম, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য-ঘোষণা সত্ত্বেও সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে, তারপরও তামাক নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতি পাচ্ছি না। হাইকোর্টের রায়কেও মানছি না।
সাবের হোসেন চৌধুরী আরো বলেন, আমরা জানি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরী কিসিঞ্জার কী মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন- বাংলাদেশ একটি তলাবিহীন ঝুড়ি। অর্থাৎ সেখানে যা কিছু দেয়া হোক না কেন তা আর থাকবে না। সেই বাংলাদেশ আজকে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। আর এটি অবশ্যই একটি গর্বের বিষয়। এটি সম্ভব হয়েছে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর যোগ্যতায়, দক্ষতায়, দূরদর্শিতায়। আর একটি বিষয় আওয়ামী লীগ পরপর তিন মেয়াদে জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেছে। এতে সরকারের ধারাবাহিকতা থাকে। আমরা ১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে কী দেখলাম? যদি বারবার সরকার বদল হয়, তাহলে সরকার যে উদ্যোগগুলো নেয় তা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করা যায় না। আজকের বাংলাদেশ যে জায়গায় আছে তার মূল কারণ হচ্ছে দেশের জনগণ তিন তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছে। আমি আগামী নির্বাচনের আগেও দেশের জনগণ সে কথাটি স্মরণে রাখবে বলে আশা করি।
তিনি বলেন, আমাদের অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি যে বাজেট দিয়েছেন, এখানে অনেক ইতিবাচক দিক আছে। তবে কয়েকটি বিষয় আছে যেগুলো এখানে স্থান পাওয়া উচিত ছিল। প্রথমত- বায়ুদূষণ। বায়ুদূষণের ফলে দেশের হাজার হাজার মানুষ অকালে মারা যাচ্ছে। আরেকটি বিষয় হলো সড়ক দুর্ঘটনা। আমরা এ সড়ক দুর্ঘটনা কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনব তার দিকনির্দেশনা দরকার। তৃতীয় বিষয়টি অনেক বড় বিষয়, প্রায় ২৯ লাখ মামলা ঝুলে আছে, যা নিষ্পত্তি হয়নি। এটি কীভাবে নিষ্পত্তি করা যায় বাজেটে তার কোনো প্রতিফলন নেই। চতুর্থত- আমরা বাংলাদেশকে প্লাস্টিক বা পলিথিনমুক্ত করতে চাই। অথচ বাজেটে আমরা প্লাস্টিক আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে দিয়েছি। তাহলে আমরা কীভাবে দেশকে পলিথিন বা প্লাস্টিকমুক্ত করব? আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে অনেক বেড়িবাঁধ রয়েছে, তা এখনো নির্মাণ করা হয়নি। এ বাঁধগুলো নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া দরকার, যা বাজেটে পুনঃসংযোজন করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়