ওমর সানীকে গুলি করার হুমকি জায়েদ খানের

আগের সংবাদ

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ : পাচার হওয়া অর্থ দেশে আনার প্রস্তাবে সমর্থন

পরের সংবাদ

স্বজন হারানোর বিষাদ ফায়ার ফাইটার আজমের পরিবারে

প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোর ভয়াবহ আগুন নিভে গেলেও আপনজন হারানোদের কান্না এখনো থামছে না। আগুনে গুরুতর দগ্ধরা সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন, সেই প্রতীক্ষাই মৃত্যুর মধ্য দিয়ে রূপ নিচ্ছে বিষাদে। ফায়ার ফাইটার গাউসুল আজমের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে গত শনিবার গভীর রাতে সেই বিষাদ ছড়িয়ে পড়ে তার পরিবারের ওপর। এ অগ্নিযোদ্ধাকে হারানো স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিবেশ।
গত শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় গাউসুল আজমের। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. এস. এম. আইউব হোসেন জানান, গাউসুলের শরীরে ৭০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। তার শ্বাসনালিও পুড়ে গিয়েছিল। চট্টগ্রাম থেকে হেলিকপ্টারে করে ঘটনার পরদিন তাকেসহ সাতজনকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। ওইদিনই তাকে ভর্তি করা হয় আইসিইউতে। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে দেয়া হয় লাইফ সাপোর্ট। মাঝে কিছুটা উন্নতি হলে লাইফ সাপোর্ট খুলে নেয়া হয়। কিন্তু সর্বশেষ তার অবস্থার আবার অবনতি হলে তাকে আবারও লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। সেখানেই মারা যান ফায়ার ফাইটার গাউসুল আজম।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা শাহজাদী সুলতানা বলেন, এ নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মোট ১০ সদস্যের মৃত্যু হলো। ডিপো থেকে উদ্ধার করা যেসব পোড়া লাশ শনাক্ত করা যায়নি, তাদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের আরো তিনজন রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গাউসুলের ফুপাতো ভাই কোরবান আলী জানান, তাদের বাড়ি যশোরের মনিরামপুর উপজেলায় খাইটুয়াডাঙা গ্রামে। ২০১৮ সালে ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেন তার ভাই। দুই বছর আগে বিয়ে করেন তিনি। সিয়াম নামে ছয় মাস বয়সী একটি ছেলে রয়েছে তার। দুই ভাইবোনের মধ্যে গাউসুল ছিলেন ছোট। সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশনে কর্মরত ছিলেন তিনি। সেদিন আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমেই তারা ছুটে যান আগুন নেভাতে। সেখানেই বিস্ফোরণে দগ্ধ হন গাউসুল আজম। তিনি আরো বলেন, এখন তার পরিবারকে কী বুঝ দেব। ছেলেটাতো বাবা কী জিনিস তাও বুঝল না বলে চাপা কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
এদিকে গতকাল বিকাল ৩টার দিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে গাউসুল আজমের জানাজা সম্পন্ন হয়।
জানাজায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ বেলাল হোসেন, ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিনসহ নিহতের পরিবারের সদস্য ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।
জানাজা শেষে গাউসুল আজমের মরদেহ যশোরের মনিরামপুরে গ্রামের বাড়িতে দাফনের জন্য রওনা দেয়।
গত ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামে বেসরকারি ওই কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগার পর একের পর এক বিস্ফোরণে তা ছড়িয়ে পড়ে। ডিপোতে থাকা রাসায়নিকের কারণে ছড়িয়ে পড়া ওই আগুন ৮৬ ঘণ্টা পর বিভিন্ন বাহিনীর চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে। ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে প্রথমে ৪১ জনের মরদেহ উদ্ধার করে বিভিন্ন সংস্থা।
৭ জুন দুর্ঘটনাস্থল থেকে আরো দুজনের দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়। পরদিন সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় একজন। সেদিন সন্ধ্যায় ডিপোর ভেতরে আরো দুজনের দেহাবশেষ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় হতাহতের বেশির ভাগই ফায়ার সার্ভিস কর্মী, ডিপোর শ্রমিক-কর্মচারী, কন্টেইনারবাহী গাড়ির চালক-সহকারী ও শ্রমিক। আহত ও দগ্ধ অনেকে এখনো চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তাদের কারো কারো অবস্থা আশঙ্কাজনক। সীতাকুণ্ডে দগ্ধ ও আহতদের মধ্যে ঢাকায় আনা হয়েছিল মোট ১৯ জনকে। তাদের মধ্যে তিনজনকে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আর বার্ন ইনস্টিটিউটে থাকা বাকি ১৬ রোগীর মধ্যে গাউসুল আজম মারা গেলেন। কন্টেইনার ডিপোর আগুনে দগ্ধ হয়ে আইসিইউতে ভর্তি রোগীদের মধ্যে বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন ফায়ার সার্ভিসের আরেক কর্মী রবিন মিয়া (২২)। সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশনের এই কর্মী শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার ছেলে রবিন বাবা-মায়ের তৃতীয় সন্তান। বছরখানেক আগে বিয়ে করেছেন। চার বছর আগে যোগ দেন ফায়ার সার্ভিসে। আগে ধামরাই ফায়ার স্টেশনে ছিলেন, এক বছর হলো বদলি হয়ে সীতাকুণ্ডে আসেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়