ওমর সানীকে গুলি করার হুমকি জায়েদ খানের

আগের সংবাদ

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ : পাচার হওয়া অর্থ দেশে আনার প্রস্তাবে সমর্থন

পরের সংবাদ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আলোচনা সভা : ভুক্তভোগীদের কাছে ক্ষমা চাইলেন মোস্তাফা জব্বার

প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে যারা হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। মন্ত্রী বলেছেন, যারা যারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হয়েছেন, আপনাদের কাছে আমি ক্ষমা চাই। তবে আমার ছোটখাটো বক্তব্য হচ্ছে এই, আমি যে ঘটনাগুলো শুনছি, সে ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে দোষটা বোধহয় আইনের থেকে বহুগুণে বেশি আইন প্রয়োগকারী এবং বিচার ব্যবস্থার মধ্যে। কারণ আমি এখানে যা দেখলাম, শুনলাম তাতে এই বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সব থেকে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।
গত শনিবার বিকালে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আয়োজনে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভুক্তভোগী ও প্রকৃত অপরাধী’ শিরোনামে ভুক্তভোগীদের সম্মেলন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির। আলোচক ছিলেন- ব্যারিস্টার তাপস পাল, এডভোকেট নাসির মিয়া, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত এবং সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। সঞ্চালনা করেন নির্মূল কমিটির আইটি সেলের সভাপতি শহীদ সন্তান আসিফ মুনীর। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন অনলাইন এক্টিভিস্ট লেখক মারুফ রসুল।
সভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার মুন্সীগঞ্জের শিক্ষক হৃদয় মন্ডল, সুনামগঞ্জের ঝুমন দাশ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পটুয়াখালীর জয়দেব চন্দ্র শীল, কুমিল্লার স্কুলশিক্ষক শংকর দেবনাথ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৎস্যজীবী রসরাজ দাস, সরকারি বদরুন্নেসা কলেজের সহকারী অধ্যাপক রোমা সরকার তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।
টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, মূলত সোশ্যাল মিডিয়ায় সংঘটিত অপরাধগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রবর্তনের চিন্তাভাবনা এসেছিল। এই আইনের কারণে এমন পরিস্থিতি হবে এমনটা আমি ভাবতেও পারিনি! মন্ত্রী আরো বলেন, আইন কোনো চিরস্থায়ী দলিল নয়। সংবিধান পর্যন্ত যদি আমরা পরিবর্তন করতে পারি, আইন পরিবর্তন করা কোনো বিষয় নয়। আইন যদি পরিবর্তন করার দরকার হয়, তাহলে পর্যালোচনা ও অন্যান্য যে বিষয়গুলো করার দরকার আছে, তা করা যেতে পারে।
সভাপতির বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ঘোষণা করেছিল ক্ষমতায় গেলে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হবে, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হবে। চার বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে এখনো তা করা হয়নি। ভিন্ন ধর্ম ও ভিন্নমতের নাগরিকদের ওপর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সাম্প্রদায়িক নির্যাতন ও বৈষম্য অবসানের দাবি জানিয়ে তিনি নতুন একটি গণকমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। নতুন এই গণকমিশনের নাম দেন ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন ও বৈষম্য বিলোপরোধে গণকমিশন’। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে এ কমিশনের চেয়ারপারসন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস বলকে সদস্য সচিব ঘোষণা দেন শাহরিয়ার কবির।
গত বছর দুর্গাপূজার সময় দেশের পূজামণ্ডপ, মন্দিরগুলোতে হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন সরকারি বদরুন্নেসা কলেজের সহকারী অধ্যাপক রোমা সরকার। এর কারণে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেয়া হয়। তিনি বলেন, এই আইনে মামলায় জড়িয়ে আমি চাকরিচ্যুত হয়েছি। এখনো চাকরিতে যোগদান করতে পারছি না। আমি অন্য দেশে গিয়ে উন্নত জীবনযাপন করতে পারতাম। কিন্তু দেশকে ভালোবাসি তাই সেটা করিনি। আমার মামলাটা যেন প্রত্যাহার করা হয়, আমি যেন শ্রেণিকক্ষে ফিরতে পারি। আমার বাচ্চারা যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে এই দাবি করি।
সম্প্রতি শ্রেণিকক্ষে বিজ্ঞান ও ধর্ম নিয়ে ছাত্রের সঙ্গে তর্কের জেরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটকের পর জেলে যান মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডল। তিনি বলেন, আমি মহানবীকে জ্ঞানীগুণী বলেছিলাম। কিন্তু সেটাকে ‘না’ লাগিয়ে দিয়ে আমাকে হয়রানি করা হয়েছে, শোকজ করা হয়েছে। আমি ১৯ দিন কারাবাসে ছিলাম। অথচ ধর্মের প্রশ্ন তারা টেনেছে, আমি শুধু উত্তর দিয়েছি। আমি এই হয়রানি থেকে মুক্তি চাই। দেশে সত্যিকারের স্বাধীনতা চাই।
সুনামগঞ্জের ঝুমন দাশ বলেন, স্বাধীনতার সপক্ষে কথা বলে, মামুনুল হকের ভাস্কর্যবিরোধী কথার প্রতিবাদ করে আমি ধর্ম অবমাননার মামলা খেয়েছি। এই কারণে আমি জেলেও নিরাপদ ছিলাম না। আমাকে কারাগারে জবাই করে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল অন্য ধর্মান্ধ কয়েদিরা!
অনুষ্ঠানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার এবং নির্যাতন এবং ভোগান্তির শিকার ভুক্তভোগীদের পরিত্রাণের বিষয়ে কথা বলেন বেশ কয়েকজন আলোচক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়