মামলায় জিতে টাকা ‘ইনকাম’

আগের সংবাদ

ভোক্তার সুফল কোন পথে : বাজেটে কর বাড়লে দাম বাড়ে, কর কমলে দাম কমে না, সরকারি সিদ্ধান্তের সুফল পান না ভোক্তারা

পরের সংবাদ

বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এফবিসিসিআই : মওকুফ করা ঋণের ওপর কর আরোপ অযৌক্তিক

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রস্তাবিত বাজেটে খেলাপিঋণ মওকুফ করা হলে তা করযোগ্য আয় হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাবকে অযৌক্তিক বলে অবিহিত করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
গতকাল শনিবার মতিঝিলে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদ সদস্য, বিভিন্ন চেম্বার সভাপতিরা উপস্থিত ছিলেন।
এফবিসিসিআই মো. জসিম উদ্দিন বলেন, খেলাপিঋণ মওকুফ করা হলে তা করযোগ্য আয় হিসেবে গণ্য করা হবে কেন? দুর্ভোগ লাঘবের জন্যই খেলাপিঋণ মওকুফ করা হয়ে থাকে বিধায় মওকুফকৃত ঋণের ওপর কর আরোপ করা যুক্তিযুক্ত নয়। আমরা মনে করি আয়ের ওপর কর আদায় করাই হচ্ছে আয়করের মূলনীতি। তিনি বলেন, রপ্তানিকারক কর্তৃক রপ্তানি থেকে প্রাপ্ত অর্থের ওপর শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশের পরিবর্তে এক শতাংশ উৎসে কর কর্তনের বিধান বাতিল করে পূর্বের ন্যায় (০.৫০ শতাংশ) রাখার প্রস্তাব করছি। অর্থবিলে রপ্তানির সংজ্ঞাকে সংকুচিত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক দরপত্রের ক্ষেত্রে ঋণপত্রের পাশাপাশি চুক্তিপত্রের মাধ্যমে স্থানীয় সরবরাহকে রপ্তানির সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করছি। সোলার প্যানেল আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক শূন্য শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে এক শতাংশ করা হয়েছে। সোলার প্যানেলের ওপর আরোপিত আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ করছি।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে উৎপাদকদের কাঁচামাল সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে কর ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ এবং ব্যবসায়িক পণ্যের সরবরাহের ওপর উৎসে করের হার ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। উৎসে কর ফেরতযোগ্য এবং ব্যবসার খরচ বৃদ্ধি করে বিধায় উৎসে কর প্রত্যাহারের জন্য আমরা পুনরায় আহ্বান জানাচ্ছি। লিখিত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয়, মুদ্রাস্ফীতি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় এনে ব্যক্তি শ্রেণির আয়করের সীমা বর্তমান ৩ লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৪ লাখ টাকা করার জন্য আমরা প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে আয়করের সীমা বাড়ানো হয়নি। আয়করের সীমা বৃদ্ধির প্রস্তাবটি পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। ভারতে আয়করের সীমা ৫ লাখ রুপি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মো. জসিম উদ্দিন বলেন, কর অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের মূল্য ও খরচ বৃদ্ধির কারণে সাধারণ ভোক্তার ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে ও মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রমবর্ধমান পণ্যমূল্য দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এ সমস্যা নিরসনে এফবিসিসিআই উৎপাদনমুখী খাতসহ নিত্য ব্যবহার্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের পরোক্ষ করে রেয়াত দেয়ার প্রস্তাব করেছিল। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ ধরনের শুল্ক ও কর রেয়াতের ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কয়েকটি বিশেষ খাতে মূসক, আগাম কর, উৎসে কর, অগ্রিম কর ইত্যাদিসহ আমদানি শুল্কে রেয়াত দেয়া হলেও সামগ্রিক শিল্প বাণিজ্য খাত এসব শুল্ক সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে অসমতা দেখা দিচ্ছে। এ সমস্যা নিরসনে এফবিসিসিআইয়ের প্রাক-বাজেট প্রস্তাবনাসমূহ পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানান সংগঠনটির সভাপতি।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, আমরা আগেও বলেছি পাচার হওয়া টাকা বিনা প্রশ্নে দেশে আনার সুযোগ ব্যবসায়ীরা সমর্থন করে না। কারণ এ ধরনের সুযোগ দিলে সবাই এতে উৎসাহী হবে। আমি এখন ২২ থেকে ৩০ শতাংশ কর দিয়ে টাকা সাদা করব। অন্যদিকে বিদেশ থেকে ফেরত আনলে ১৮ শতাংশ ডিসকাউন্ট পাওয়া যাচ্ছে। তাই আমরা এটা সমর্থন করি না। কারণ এতে করে ভালো ব্যবসায়ীরা এক্সপোর্টে নিরুৎসাহিত হবে। এখন ডলারের সংকট তাই সরকার হয়তো ডলারের প্রবাহ বাড়াতে এ সুযোগ দিয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা এটা সমর্থন করে না। ব্যাংক ঋণের ওপর অধিক মাত্রায় নির্ভরতা বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করতে পারে জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি মেটাতে স্থানীয় ব্যাংক ব্যবস্থার পরিবর্তে সুলভ সুদে বৈদেশিক উৎস হতে অর্থায়নের প্রচেষ্টা নেয়ার আহ্বান জানান।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি রাখা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা যা জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ঘাটতি মেটাতে সরকারকে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নিতে হবে। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিতে হবে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা।
ঘাটতি মেটাতে স্থানীয় ব্যাংক ব্যবস্থার পরিবর্তে যথাসম্ভব সুলভ সুদে বৈদেশিক উৎস হতে অর্থায়নের প্রচেষ্টা নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। কেননা ব্যাংক ঋণের ওপর অধিক মাত্রায় নির্ভরতা বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। তিনি বলেন, যথাযথ বিনিয়োগ ও শিল্পোন্নয়ন ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারাকে অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়। রাজস্ব নীতিতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি। যাতে আস্থার সঙ্গে -বাণিজ্য চালিয়ে যেতে পারেন। মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সমন্বয় রাখা জরুরি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়