মামলায় জিতে টাকা ‘ইনকাম’

আগের সংবাদ

ভোক্তার সুফল কোন পথে : বাজেটে কর বাড়লে দাম বাড়ে, কর কমলে দাম কমে না, সরকারি সিদ্ধান্তের সুফল পান না ভোক্তারা

পরের সংবাদ

প্রস্তাবিত বাজেটে ফ্রিজ সংযোজন শিল্পকে উৎসাহিত করা হয়েছে : ঝুঁকির মুখে পড়বে দেশীয় শিল্প

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ সংযোজন শিল্পে খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হারে শুল্ক কমানো হয়েছে। এই প্রস্তাবনার মাধ্যমে দেশে ফ্রিজ উৎপাদন পর্যায়ে সংযোজনকারী বা অ্যাসেম্বলারদের উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এতে আমদানি ব্যয় কমাতে সরকারের নেয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি দেশীয় পূর্ণাঙ্গ ফ্রিজ উৎপাদন শিল্প খাতের অগ্রগতিও ক্ষতির সম্মুখীন হবে এবং ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট বক্তৃতা এবং বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের ভেতর যেসব পণ্য উৎপাদন করা যায়, সেগুলো বিদেশ থেকে আনা আমরা নিরুৎসাহিত করছি। দেশের ভেতরে যেসব পণ্য উৎপাদন হয়, সেগুলো যদি আমাদের ব্যবহারে লাগে, তাহলে উৎপাদন আরো বাড়ানো হোক। ওই সব পণ্য বিদেশ থেকে আনা আমরা ভালোভাবে দেখি না। আমরা এভাবেই ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ কনসেপ্টকে এগিয়ে নিয়ে যাব। কিন্তু বাজেটে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাজেট উপস্থাপনের পর অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন (এসআরও) জারি করে। এসআরও তে রেফ্রিজারেটরের উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দুটি ক্যাটাগরি করা হয়েছে। এসআরও অনুযায়ী, রেফ্রিজারেটরের প্রধান অংশ (মেইন পার্টস) এবং যে কোনো ২টি গুরুত্বপূর্ণ অংশ উৎপাদন করলে কোনো প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরি-১ এর উৎপাদক হিসেবে গণ্য হবে। অন্যথায়, ফ্রিজের বডি কেবিনেট উৎপাদন করলেই (বাকিটা আমদানি করে) রেফ্রিজারেটর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরি-২ হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে অতি অল্প বিনিয়োগ এবং লোকবল ব্যবহার করেই তারা উৎপাদকের সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
এতে করে যেসব প্রতিষ্ঠান বিপুল বিনিয়োগের মাধ্যমে রেফ্রিজারেটরের সব ধরনের যন্ত্রাংশ তৈরি করেন, তাদের সঙ্গে সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানের পার্থক্য থাকবে না। ফলে স্থানীয় রেফ্রিজারেটর শিল্পে বড় বিনিয়োগ আসবে না। দেশীয় উদ্যোক্তারা পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনমুখী শিল্পের পরিবর্তে সংযোজন শিল্প স্থাপনে বেশি আগ্রহী হবেন। ফলে দেশ বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ হারাবে। এর বিপরীতে আমদানি ব্যয় বাড়বে। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হবে। যেটা সরকারের শিল্প-সহায়ক নীতি এবং অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এতে করে রেফ্রিজারেটরে প্রকৃত উৎপাদনকারী শিল্পের পরিবর্তে সংযোজন শিল্প উৎসাহিত হবে। বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা দরকার বলে অভিমত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশের অর্থনীতিবিদ ও খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, এই বাজেট প্রস্তাবনায় সুফল পাবেন ফ্রিজ উৎপাদন পর্যায়ে স্থানীয় অ্যাসেম্বলাররা। এতে করে দেশীয় ফ্রিজ উৎপাদন অ্যাসেম্বলিং শিল্পে খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে, যা কিনা ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ঠেকাতে সরকারের নেয়া আমদানি ব্যয় কমানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিপরীত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইফতেখার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে যেসব পণ্যের উৎপাদন সক্ষমতা আছে এবং সামগ্রিকভাবে জনগণের চাহিদা মেটাতে সক্ষম, সেসব পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে অ্যাসেম্বলারদের সুবিধা দেয়া ঠিক হবে না। দেখা গেছে আমার দেশে মানুষের চাহিদা মেটাতে সক্ষম এমন কোনো উৎপাদন ক্ষমতা নাই সেক্ষেত্রে কেউ যদি বাইরে থেকে কাঁচামাল নিয়ে আসে এটা দোষের কিছু না। এবং সরকার তাতে সুবিধা দিতেই পারে। পাশাপাশি এটির উৎপাদন সক্ষমতা আমাদের বাড়াতে হবে।
অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সরকার বরাবরই গুরুত্ব দিয়ে আসছে। দেশের অর্থনীতির জন্যও এটি ভালো। তবে উৎপাদন ভলিউম অনুযায়ী সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
অর্থাৎ যদি এ খাতে অনেক বেশি পণ্য যোগ হয়, তাহলে এক ধরনের সিদ্ধান্ত হতে পারে। অন্যদিকে এর মাধ্যমে যে পরিমাণ উৎপাদন বাড়তি যোগ হচ্ছে তার থেকে ফিনিসড প্রোডাক্ট উৎপাদকরা বেশি কন্ট্রিবিউট করছে, তাহলে তাদের সুবিধা বাড়ানো উচিত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়