ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যশুরু

আগের সংবাদ

অর্থ পাচার উৎসাহিত হবে! পাচার হওয়া টাকা অর্থনীতির মূল¯্রােতে আনতে চান অর্থমন্ত্রী > বৈষম্যের শিকার হবেন সৎ করদাতারা : বিশ্লেষকদের অভিমত

পরের সংবাদ

ডিজিটাল মুদ্রার আগমনী বার্তা : কাগজের নোট কি দেশ থেকে বিদায় নিচ্ছে?

প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় দেশে ডিজিটাল মুদ্রা চালুর বিষয়টি পরীক্ষা করার প্রস্তাব দিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে এই মুদ্রা চালুর জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো ভার্চুয়াল মুদ্রার ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবহার বাড়তে থাকায় এখন অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের নিজস্ব মুদ্রার ডিজিটাল সংস্করণ চালুর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এর মূল উদ্দেশ্য ভার্চুয়াল লেনদেনের অর্থ আদান-প্রদান সহজ করা এবং স্টার্টআপ ও ই-কমার্স উৎসাহিত করা।
ডিজিটাল মুদ্রা আসলে কী? বিশ্বে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চুয়াল মুদ্রা। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিটকয়েন, লাইটকয়েন, এথেরিয়াম, রিপলের মতো ভার্চুয়াল মুদ্রার লেনদেন হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশে এগুলো এখনো বৈধ নয়। ডিজিটাল মুদ্রা কাগজের নোটের মতো দৃশ্যমান নয়। বর্তমানে যেসব ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন হচ্ছে সেগুলোর কার্যত কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। পুরো বিষয়টি ঘটছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অনেক দেশই এখন খতিয়ে দেখছে ক্রিপ্টোকারেন্সিকে কীভাবে মনিটরিংয়ের আওতায় আনা যায়।
২০০৯ সালে প্রথম ডিজিটাল মুদ্রা হিসেবে চালু হয় বিটকয়েন। একপর্যায়ে এর দাম ৬০ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়। ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বিশেষজ্ঞ তহুরুল হাসান এ ব্যাপারে জানান, ডিজিটাল মুদ্রার লেনদেন হবে অনেকটা বিকাশ বা নগদে যেমন ডিজিটাল ওয়ালেটে টাকা থাকে, তেমনি। তবে নগদে বা বিকাশে যেমন ক্যাশ টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা এজেন্টকে দিয়ে আনাতে হয়- এখানে তা হবে না। এখানে শুরু থেকেই সব ডিজিটাল হবে। অর্থাৎ হয়তো কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১০০ টাকা ইস্যু করবে। এর মধ্যে ৭০ টাকা কাগজের নোট আর বাকি ৩০ টাকা ডিজিটাল। ওই ৩০ টাকা সে ডিজিটাল মুদ্রায় নিয়ে তার অ্যাকাউন্ট বা ডিজিটাল ওয়ালেটে রাখতে পারবে।
তিনি জানান, ডিজিটাল মুদ্রা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইস্যু করলেও এর জন্য একটি ইকো সিস্টেম দরকার হবে। অর্থাৎ টাকার মতোই সব কাজে সব জায়গায় এই ডিজিটাল মুদ্রা দিয়ে পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয়ের সুযোগ থাকতে হবে। প্রত্যন্ত এলাকার একজন মুদি দোকানিকেও সেটি গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। অর্থাৎ এটা হবে কাগজের নোটের মতো সর্বজনীন। শুধু ব্যবহারটা হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে।
তিনি বলেন, এই সর্বজনীন করাটাই হবে ডিজিটাল মুদ্রায় লেনদেনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কাজ। এজন্য বাজার ও জনসাধারণকে প্রস্তুত করতে হবে।
ডিজিটাল মুদ্রা চালুর পর কাগজের নোট কি থাকবে না? এখন মুদ্রা আছে তিন ফরমেটে- কাগজের মুদ্রা, ই-মানি (মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস), ক্রিপ্টোকারেন্সি (বিটকয়েনের মতো ভার্চুয়াল মুদ্রা)। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো নিজেদের মুদ্রা ডিজিটাল ফরমেটে আনলে সেটি হবে বৈধ ডিজিটাল মুদ্রা। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজিটাল মুদ্রা কখনো চালু হলে তার আগে অনেক প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে। কিন্তু সেই ডিজিটাল মুদ্রা এলে কাগজের মুদ্রা থাকবে না- এমনটি কেউই মনে করছেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাগজের মুদ্রা বিদায় হবে বলে মনে হয় না। বরং দুটিই সমান্তরালভাবে চলতে হতে পারে। মানুষ যাতে ডিজিটাল মুদ্রা নগদে রূপান্তর করতে পারে সেই সুযোগও থাকতে হবে।
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো ডিজিটাল মুদ্রা হ্যাক হলে মানুষ কী সেই অর্থ আর ফেরত পাবে কিংবা ডিজিটাল ওয়ালেট থেকে টাকা চুরি হলে তার নিয়ন্ত্রণ কীভাবে হবে? বাংলাদেশে করোনাকালে সরকার উপবৃত্তির যে টাকা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে দিয়েছে সেই টাকা অনেক শিক্ষার্থীর অগোচরে অন্যরা তুলে নিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তানভীর হাসান জোহা জানান, ডিজিটাল মুদ্রার ক্ষেত্রেও বড় চ্যালেঞ্জ হবে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি। ডিজিটাল মুদ্রার ব্যবহারের জন্য মানুষ ইন্টারনেটে যুক্ত হবে ও পাবলিক নেটওয়ার্কে থাকবে। কিন্তু সেখানে সাইবার নিরাপত্তা কতভাবে লঙ্ঘিত হতে পারে সেটি আগে যাচাই করে দেখতে হবে।
প্রসঙ্গত, বিকাশ বা নগদের পাসওয়ার্ড বা পিন গোপন না রাখার কারণেও অনেকে অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে টাকা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি এক ওয়েবিনার উপস্থাপনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ জিয়াউল হক জানান, ক্যারিবিয়ান দ্বীপ বাহামা ও নাইজেরিয়া ডিজিটাল মুদ্রা চালু করেছে। অন্যদিকে চীন পাইলট প্রজেক্ট শেষ করে সব প্রস্তুত করলেও এখনো ডিজিটাল মুদ্রা ইস্যু করেনি। আবার যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মতো কিছু দেশ ক্রিপ্টোকারেন্সিকে মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি না দিলেও অ্যাসেট হিসেবে মর্যাদা দিয়েছে। তবে ঘানা ও জ্যামাইকা শিগগিরই ডিজিটাল মুদ্রা চালু করতে যাচ্ছে। সুইডেন পাইলট সম্পন্ন করেছে কিন্তু চালু করেনি। ক্যানাডা পাইলট করে এখনই চালু না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তারা নতুন করে এ নিয়ে গবেষণা করবে বলে জানিয়েছে।
এতে কী লাভ? বাংলাদেশে টাকা ছাপানো ও নিয়মানুযায়ী নষ্ট বা ব্যবহার- অযোগ্য টাকা ধ্বংস করতে গত বছরেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। টাকা ছাপানোর পর বিতরণেও হয়ে থাকে বিপুল খরচ। ডিজিটাল মুদ্রা চালু হলে এসব খরচ বেঁচে যাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর। এছাড়া সব ধরনের পেমেন্ট এবং যে কোনো লেনদেন ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা যাবে বলে সাধারণ মানুষেরও লেনদেনজনিত ব্যয় কমবে। অথচ এখনো ঢাকার সুপরিচিত শপিং মলগুলোতেই সব ব্যবসায়ীরা কার্ডে টাকা নিতে চান না। এসব সুবিধার কারণেই স্থানীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ডিজিটাল মুদ্রার বিষয়ে চিন্তা শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশেও ডিজিটাল মুদ্রা নিয়ে পাইলট প্রজেক্ট করার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়