ভারতের গমে রুবেলা ভাইরাস : অর্ধলাখ টন ফেরত দিল তুরস্ক

আগের সংবাদ

কিশোরগঞ্জে মানববন্ধন : ভোরের কাগজের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার দাবি

পরের সংবাদ

শিবালয়ের কাঁচামরিচ রপ্তানিতে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা

প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সুরেশ চন্দ্র রায়, শিবালয় (মানিকগঞ্জ) থেকে : মানিকগঞ্জের শিবালয়ে কাঁচা মরিচের সন্তোষজনক দাম থাকায় চলতি বছর উপজেলার কৃষকরা মহাখুশি। এ বছর মরিচ চাষিরা পাইকারি আড়তে ১ মণ মরিচ বিক্রি করছেন ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা দরে।
এ অঞ্চলের মরিচগুলো স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, যশোর, বরিশাল, সাতক্ষীরা, নড়াইল, টাঙ্গাইল, বেনাপোল, যশোর, মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে শিবালয় উপজেলার বরংগাইল আড়তের কাঁচা মরিচ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কুয়েত ও সৌদি আরবে রপ্তানি করা হচ্ছে। চলতি বছর আবহাওয়া মরিচ চাষের অনুকূলে না থাকায় ফলন হয়েছে গত বছরের তুলনায় অর্ধেক। তবে এ বছর কাঁচা মরিচের বাম্পার ফলন না হলেও দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা অত্যন্ত খুশি। গত দুই বছর করোনা মহামারির কারণে কাঁচা মরিচের দরপতন হয়েছিল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এ বছর অনেক প্রান্তিক চাষিই গত মৌসুমের লোকসান অনেকাংশে কাটাতে পারবেন বলে ধারণা করছেন অনেকে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর অনেক কম জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। উপজেলার বরংগাইল আড়তে কাঁচা মরিচ বিক্রি করতে আসা কলাগাড়িয়া গ্রামের ভৈরব পাইন বলেন, এ বছর ২ বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করেছি। সময়মতো সার, কীটনাশক প্রয়োগ ও প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করেও গত বছরের তুলনায় এ বছর ফলন অনেক কম পাচ্ছি। তবে বাজারে মরিচের যথেষ্ট চাহিদা থাকায় আমরা সন্তোষজনক মূল্য পাচ্ছি। এখন বাজারে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি করছি ৬০-৭০ টাকায়। ক্ষেত থেকে মরিচ তোলাবাবদ শ্রমিককে কেজিপ্রতি দিতে হয় ৮-১০ টাকা। বাজারে আনতে মণপ্রতি রিকশাচালককে দিতে হয় ২০ টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে এ বছর মরিচে যে পরিমাণ টাকা পাচ্ছি এটি যদি ধারাবাহিকভাবে চলমান থাকে তবে মরিচের আবাদ আগামী বছর অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।
ঘিওর উপজেলার ধুলন্ডী গ্রামের ইউনুছ মোল্লা এবং শিবালয় উপজেলার দুবুলিয়া গ্রামের রহিজ উদ্দিনও একই কথা বলেন। ছোট বুতুনী গ্রামের মো. মান্নান জানান, গত বছর ৫ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছিলাম। কিন্তু কাঁচা মরিচের আদাম থাকায় এ বছর মাত্র ৩ বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করেছি। সঠিক পরিচর্যা করেও এ বছর আমরা আশানুরূপ ফলন পাইনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা ক্ষেত পরিদর্শন করে আমাদের পরামর্শ দিলে ফলন আরো ভালো হতো। কিন্তু তারা নামমাত্র মাঠে এসে সার-ডিলারদের দোকানে সময় কাটিয়ে চলে যান। আমরা কোনো কৃষকই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কোনো পরামর্শ পাইনি। একই কথা জানান, পুখুরিয়া গ্রামের মো.আব্দুল হামিদ, শিমুলিয়া গ্রামের নারায়ণ চন্দ্র শীল এবং সাহিলী গ্রামের আব্দুল খালেক।
বিদেশে কাঁচা মরিচ রপ্তানিকারক সিএসএস ইন্টারন্যাশনালের (উত্তরা) এর প্রতিনিধি মো. সোহেল খন্দকার প্রতিবেদককে জানান, আমরা মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে কাঁচা মরিচ রপ্তানি করে থাকি। এ বছর নিঃসন্দেহ কাঁচা মরিচের বাজার দর ভালো। তবে মরিচের বাজার দর ৫০ টাকার বেশি হলে আমাদের লাভের পরিমাণ সীমিত হয়ে যায়। কারণ আমরা মরিচ ক্রয় এবং বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারের কাছ থেকে একটা পার্সেন্টেস পাই।
আড়তদার নাহিদ রানা জানান, বরংগাইল কাঁচা বাজারে বর্তমানে ২৮টি আড়ত চলমান রয়েছে। এসব আড়তে গড়ে প্রতিদিন ১০০ টনের বেশি মরিচ আসে। জাত ও মানভেদে দামের তারতম্য রয়েছে। যেমন- বিন্দু কালো, বিন্দু লম্বা, বিন্দু ছোট, বিন্দু মোটা ও চিকন, কারেন্ট ও সিট মরিচ প্রভৃতি। তবে বর্তমানে এ আড়তে গড়ে ৬৫ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে কৃষকের অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ রিয়াজুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, মরিচ চাষের জন্য চলতি বছর আবহাওয়া যথেষ্ট অনুকূলে রয়েছে এবং আমাদের সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দেয়ার জন্য সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন। কৃষকরা যা বলছেন তা সঠিক নয়। এ বছর শিবালয় উপজেলায় ১ হাজার ১৪ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়