কুসিক নির্বাচন : ইভিএমে ভোটের প্রক্রিয়া দেখলেন ২১ প্রার্থী

আগের সংবাদ

গোপনে তৎপর জামায়াত : কৌশলে চলছে সাংগঠনিক কার্যক্রম > ‘যুগপৎ’ আন্দোলনের ছক

পরের সংবাদ

বেড়েছে অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য : প্রতিদিনই কেউ না কেউ সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন

প্রকাশিত: জুন ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আজিজুর রহমান জিদনী : গাবতলী মাজার রোড থেকে ২৪ মে মো. আবু নোমান (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। পরে জানা যায়, তিনি সাভার মডেল কলেজের প্রভাষক। জ্ঞান ফেরার পর প্রভাষক আবু নোমানের বরাত দিয়ে তার পরিচিত রাকিব তালুকদার জানান, ডাবের পানি পান শেষে বাসে ওঠেন তিনি। এরপর আর তার কিছু মনে নেই। তার কাছে লাখ টাকা ছিল, সেটি আর নেই।
ওই দিনই মো. রাকিবুল ইসলাম সুমন (২৩) নামে নারায়ণগঞ্জ তোলারাম কলেজের এক শিক্ষার্থী অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন। যাত্রাবাড়ী থানার এসআই চঞ্চল বিশ্বাস জানান, খবর পেয়ে ধোলাইপাড় কমিউনিটি সেন্টারের সামনের রাস্তা থেকে তাকে অচেতন অবস্থার উদ্ধার করা হয়। পরে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। তার সঙ্গে থাকা টাকা ও মোবাইল ফোনটি খোয়া গেছে বলে জানা গেছে। অচেতন হওয়ার আগে ডাবের পানি কিনে পান করেছিলেন তিনিও।
১৮ মে যাত্রাবাড়ীতে সুমন হোসেন (৩৫) নামে এক প্রবাসী অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন। যাত্রাবাড়ী থানার এএসআই জিয়াউর রহমান জিয়া জানান, খবর পেয়ে বিকালে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের সময় তিনি কিছুই বলতে পারছিলেন না। পরে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে স্টোমাক ওয়াশ (পাকস্থলি পরিষ্কার) করানোর পর তার জ্ঞান ফেরে। তখন তিনি জানান, ওই দিনই সৌদি আরব থেকে দেশে আসেন তিনি। তার সঙ্গে পাসপোর্ট পাওয়া গেলেও মালামাল পাওয়া যায়নি।
একই দিনে রাজধানীর ফার্মগেটে বাসের ভেতরে মো. তরিকুল ইসলাম (৩৫) নামে এক ব্যবসায়ী অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন। মিরপুর থেকে সদরঘাটগামী বিহঙ্গ পরিবহনের বাসে এ ঘটনা ঘটে। অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তরিকুলের দূর সম্পর্কের ভাগিনা মো. আশিক জানান, সকাল ৯টার দিকে এক বাসযাত্রীর মাধ্যমে খবর পান ফার্মগেটে বিহঙ্গ বাসের ভেতর অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েছেন তরিকুল। খবর পেয়ে ফার্মগেটে থেকে তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যান। তার কাছে মালামাল কেনার ১ লাখ টাকা ছিল। সেই টাকা খোয়া গেছে বলে অভিযোগ তার।
এমন ঘটনা এখন হরহামেশাই ঘটছে। রাজধানীতে সম্প্রতি আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য। প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ তাদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও সব সময় এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছে। অজ্ঞান পার্টি চক্রের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা তেমন দৃশ্যমান নেই বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলেও পুলিশ ও র‌্যাবের দাবি, অজ্ঞান পার্টির অপতৎপরতা বন্ধে প্রতিনিয়তই কাজ করে যাচ্ছে তারা। প্রায়ই সাঁড়াশি অভিযানে অপতৎপরতায় জড়িতরা ধরাও পড়ছে। অপরদিকে অপরাধ বিশ্লেষক মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক ভোরের কাগজকে বলেন, ভুক্তভোগীদের অনেকেই থানায় অভিযোগ করেন না। অভিযোগ না করায় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ারও তেমন সুযোগ থাকে না। ফলে প্রকৃত ভুক্তভোগীর পরিসংখ্যানও উঠে আসে না। এছাড়া দেখা যায়, এসব ঘটনায় গ্রেপ্তাররা জামিনে বের হয়ে আবারো একই অপরাধে জড়ায়, তাই এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খেয়াল রাখতে হবে।
র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গতকাল এ প্রতিবেদককে জানান, অজ্ঞান পার্টির অপতৎপরতা বন্ধে র?্যাব প্রতিনিয়তই কাজ করে যাচ্ছে। প্রায়ই সাঁড়াশি অভিযানে তারা ধরাও পড়ছে। তবে পরিলক্ষিত হচ্ছে খাদ্যদ্রব্য বা পানীয় পানের মাধ্যমেই অধিকাংশ ঘটনা ঘটছে। তাই আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। যত্রতত্র জায়গা থেকে খাওয়া বা পানের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মো. ফারুক হোসেন গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বন্ধে গোয়েন্দা শাখাসহ আমাদের থানা পুলিশ সোচ্চার রয়েছে। বিভিন্ন সময় চালানো অভিযানে এ ধরনের অপরাধীরা ধরাও পড়েছে। যেহেতু খাদ্য ও পানীয় পানের মাধ্যমেই বেশির ভাগ ভুক্তভোগী হচ্ছেন, তাই পুলিশের এ কর্মকর্তাও জনসাধারণকে সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়