নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের গণবিজ্ঞপ্তি

আগের সংবাদ

অনুমোদনহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার : অভিযানে বন্ধ অনেক প্রতিষ্ঠান

পরের সংবাদ

পথের পাঁচালির নেপথ্যে ‘অপরাজিত’ : যেভাবে ‘সত্যজিৎ’ হয়ে উঠেছিলেন জিতু

প্রকাশিত: মে ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুক্তির আগে থেকেই চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল পরিচালক অনীক দত্তর ‘অপরাজিত’। এই ছবির মাধ্যমে বাঙালির আইকন সত্যজিৎ রায়কে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়েছেন অনীক। সত্যজিতের ‘পথের পাঁচালী’ তৈরির নেপথ্য কাহিনী অবলম্বনে তৈরি এই ছবি। নন্দনে যতই জায়গা না হোক ‘অপরাজিত’র। শহর কলকাতা, এমনকি শহরের গণ্ডি পেরিয়ে মুম্বাই, দিল্লিতেও দুর্দান্ত ব্যবসা করছে এই ছবি। সর্বত্র জয়জয়কার অনীক দত্তর এই ছবির। মুক্তির প্রথম সপ্তাহে কত টাকার ব্যবসা করল এই ছবি? মুক্তির প্রথম দেড় সপ্তাহে আড়াই কোটি টাকার ব্যবসা করেছে এই ছবি। এক কথায় বলাই যায়, বাঙালিকে নস্টালজিক করে দিয়েছে এই ছবি। ছবিতে সত্যজিৎ রায়ের আদলে তৈরি চরিত্রে অভিনয় করেছেন জিতু কমল। অন্যদিকে সত্যজিত-পতœী বিমলা রায়ের জীবননির্ভর চরিত্রে রয়েছেন সায়নী রায়। সত্যজিৎ রায়ের আদলে তৈরি অপরাজিত রায়ের ভূমিকায় অভিনয়কারী জিতু কমলের অভিনয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই। কে এই জিতু? শুরুতে বিভিন্ন নাটকের দলের হয়ে থিয়েটারে আলো প্রক্ষেপণ এবং আবহ সঙ্গীতের দায়িত্ব সামলাতেন। টুকটাক অভিনয়ও করতেন। কিন্তু তিনি স্বপ্ন দেখতেন পরিচালক হওয়ার। এখনো দেখেন। ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখলেন সিনেমার অবজার্ভার হিসেবে। সেখান থেকে সহকারী পরিচালক। পাশাপাশি ছোট ছোট চরিত্রে সিরিয়ালেও অভিনয় করতেন। বড় চরিত্র হিসেবে প্রথম সুযোগ পান ‘সাঁজবেলা’ সিরিয়ালে। ‘ভোলা মহেশ্বর’, ‘রাগে অনুরাগে’, ‘মিলন তিথি’ প্রধান মুখ হিসেবে এরপর একাধিক সিরিয়ালে কাজ করেন। তবে এই যাত্রা পথটা ততটাও মসৃণ ছিল না। প্রচুর ঝড়ঝাপ্টাও এসেছে। কিন্তু হাল ছাড়েননি। লড়ে গিয়েছেন। তিনি তরুণ অভিনেতা জিতু কমল। তিনি ‘অপরাজিত’। এই মুহূর্তের ‘টক অব দ্য টাউন।’ প্রথমে সত্যজিৎ রায়ের তরুণ বয়সের জন্য তাকে ভাবা হয়েছিল। নাম ভূমিকায় ছিলেন অন্য অভিনেতা। তার পর হঠাৎই এক দিন সবটা বদলে গেল। জিতু হয়ে উঠলেন বড়বেলার ‘মানিক বাবু’। এক লহমায় বদলালো তাঁর জীবনধারা। কড়া পরিচালক অনীক দত্ত। খুঁতখুঁতেও। পরিচালকের তত্ত্বাবধানে সত্যজিৎ রায়ের মতো হাঁটা চলা, কথা বলা, বসার ভঙ্গি রপ্ত করার কঠোর অনুশীলনে নিজেকে বেঁধেছিলেন জিতু।
এমন একটি বৈগ্রহিক চরিত্রে অভিনয় করার দায়িত্ব অনেক। বাঙালির আবেগের নাম সত্যজিৎ রায়। কোথাও এতটুকু ফাঁক থাকলে ঝড় উঠবে সমালোচনার। সে ঝড় ইতোমধ্যে ওঠেনি এমন নয়। জিতুর বাহ্যিক বদল পরিচালকের মস্তিষ্কপ্রসূত আর রূপসজ্জা শিল্পী সোমনাথ কুণ্ডুর হাতযশ। প্রস্থেটিক রূপটানের গুণে গালে ব্রণের ক্ষত। গায়ের রং শ্যামলা। থুতনিতে বড় আঁচিল। জিতু ভেতর থেকেও ‘মানিক’ হয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। চরিত্রের খাতিরে চিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে শারীরিক পরিবর্তনও এনেছেন জিতু। সত্যজিতের দাঁতে অনেকটা ফাঁক। তুলনায় জিতুর দাঁতের পাটিতে ফাঁক বেশি নয়। জিতুর স্ত্রী নবনীতা সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, কীভাবে ড্রিল মেশিনের সাহায্যে ঘষে ঘষে ফাঁক করা হয়েছে অভিনেতার দাঁত। এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর নেটমাধ্যমে ট্রোলড হন জিতু। তবে এ নিয়ে অবশ্য একেবারেই মাথা ঘামাচ্ছেন না জিতু। বরং এই চরিত্রটি তার অভিনয় জীবনের মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে তিনি মনে করেন। ‘অপরাজিত’তে জিতুর লুক প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে প্রশংসাও কিন্তু কম হয়নি। বরং তা এই ছোটখাটো সমালোচনাকে একেবারে কোণঠাসা করে দিয়েছে বলা চলে। দর্শক অবাক হয়েছেন সত্যজিৎরূপী জিতু কমলকে দেখে। অস্কারজয়ী পরিচালকের চেহারায় নিজেকে মেলে ধরতে প্রাত্যহিক জীবনেও বড়সড় বদল এনেছিলেন অভিনেতা। ১০ কেজি ওজনও কমিয়েছিলেন। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের জন্য নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করলেন জিতু, তা নিয়ে কৌতূহল জন্মেছে দর্শক মহলে। ভারতীয় গণমাধ্যমকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে সেই প্রস্তুতি পর্বের কথা জানিয়েছিলেন জিতু কমল। ‘অপরাজিত’ শুটিং ফ্লোরে যাওয়ার আগে জিতু প্রায় ১০ কেজির মতো ওজন কমিয়েছেন। পরিচালকের মতো তিনিও কিন্তু কম খুঁতখুঁতে নন। তার মনে হয়, সত্যজিতের কাঁধ তার চেয়ে অনেক বেশি সরু। তার কাঁধ চওড়া। আরো খানিক মেদ ঝরানো দরকার ছিল। তবে তাতে দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা কিন্তু কমেনি। ১০ কেজি কমানোর জন্য রোজ কী খেতেন জিতু?
শুটিং না থাকলে তাড়াতাড়ি উঠে পড়তেন জিতু। ঘুম থেকে উঠে চুমুক দিতেন এক গøাস জলে। তারপর খেতেন তার পছন্দের দার্জিলিং টি। কখনো বা সেই তালিকায় গ্রিন টিও থাকত। ফল খেতে অসম্ভব ভালোবাসেন তিনি। শুটিংয়েও সব সময় তার কাছে ফল থাকে। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা বছরের সব ঋতুতেই তার খাদ্যতালিকায় থাকে ফল। ফল আর টক দই দিয়েই সকালের খাওয়া সারতেন জিতু। সাদা ভাত তিনি খান না। পাতে থাকে ব্রাউন রাইস। তবে বাড়ির খাবার খেতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন। কলকাতার মধ্যে শুটিং থাকলে সবসময় বাড়ির রান্না করা সবজি, দু’পিস মাছ বা মুরগির পাতলা ঝোল, ব্রাউন রাইস নিয়ে যান। রাতে কোনোদিন বিরিয়ানি বা অন্য কোনো ভারী খাবার খেলে তার আগের দিন হালকা খাবার খান। এমনিতে তিনি রাত ৯-১০টার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে নিতেন। ছবি শুরুর আগে কিছুদিন সূর্য ডোবার আগেই রাতের খাওয়া সেরে নিচ্ছিলেন। কিন্তু তাতে না কি রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছিল। তাই ফের পুরনো নিয়মে ফিরে গিয়েছিলেন। রাতে ভাত বা রুটি তিনি খান না। রাতে ওটস, প্রোটিন শেকের মতো তরল খাবার খেয়েই থাকতেন।
জিতু বরাবরই শরীর সচেতন। নিয়মিত দৌড়াতে যান। বাড়িতেই রোজ কার্ডিও, পুশ আপস করে থাকেন। তবে ভেতর থেকে সুস্থ থাকতে সব সময় চনমনে থাকাটা ভীষণ জরুরি বলে মনে করেন জিতু। তাতে যেকোনো চরিত্র ফুটিয়ে তোলাটাও অনেক বেশি সহজ হয়ে যায়।
– মেলা ডেস্ক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়